পদাবলি

 

    অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ



সুরের খোয়াব

নীহার মোশারফ


চেহারা নিয়ে অনেকেরই অপছন্দে সময় কাটে

       কৃষ্ণকলির বুকে শরতের হাওয়া

একাডেমির মাঠের কোনায় বৃক্ষের ছায়ায়

             আদরে-সোহাগে সন্ধে গড়ায় তার।

সেই চেনা ঘাট, বিষুদবারের হাট

ভেতরে প্রখর রোদে কৃষ্ণকলি হাঁটে।

   শাড়ির আঁচলে পুষ্পের ঘ্রাণ

           চোখের ধাঁধায় জাগে সুরের খোয়াব।

নবাবী হালচালে ধুনধুমার নেই, 

মিয়ার কথায় হয় না কাবু

                     হাবুর পরিবার।

পরচর্চায় মোহ বাড়ে

                   ঘরে ঘরে উর্বর ঝগড়ার চাষ।

তবুও দুঃখ নেই কৃষ্ণকলির,

রাগে-অনুরাগে ছুঁয়ে যায় ভ্রমর



অন্তরের ধ্বংসস্তূপ 

এম সোলায়মান জয়


বৈতরণী থেকে হৃদয়ে সূর্য ডুবছে

স্মৃতির জানালায় উঁকি-ঝুঁকি দেয় বৃদ্ধ কোকিল

আহ্নিকগতির বেলায় আকাশে ভাসে স্বপ্নের মেঘ

অঙ্কুরিত আকাক্সক্ষায় ফেটে পড়ে যৌবন

হারিয়ে খুঁজি নির্বাসিত বাসনা

কষ্টের শৈল্পিক ভ্রুকুটি নিষ্প্রভ

হতাশার হ্রেষায় নির্বাপিত সময়।


এখানে টুকরো হওয়া অন্তর জমে আছে;

গভীর যাতনায় বেড়ে উঠা অন্তর

ছলনায় স্বপ্ন কবর দেওয়া অন্তর

আমি জীবন থেকে দূরে- 

অন্তরের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছি।




বেকার প্রেমিক

অভিষেক 


স্মৃতির কঙ্কাল করছি ফেরী

বুকের বামপাশে তোমার বাড়ি

উৎসবমুখর দ্বিকবিদিক 

কত আলোর রোশনাই 

নীলা আমি তোমার বেকার প্রেমিক

তোমার কাজলা দিঘীর মতো

চোখে আমি বারেবার হারিয়ে যাই

অভিমান, মনখারাপ আর বাকিটা ব্যক্তিগত। 

নদীবক্ষের সামনে হাতে হাত ধরে 

একদিন আমরা বলেছিলাম দুজন দুজনকে কখনও ছেড়ে যাবো না 

অথচ তোমাকে ছেড়ে আমাকে থাকতে হবে, 

জীবনযুদ্ধে একা একা লড়াই করতে হবে- 

ভাবিনি কখনও!


শুধু এটুকু’ই বলবো 

আমাকে ছেড়ে 

সরকারী চাকরী করা যে ছেলেটার হাত ধরেছো তার সাথেই 

তুমি সুখে থেকো 

ভালো থেকো 


কারণ, ভালোবাসার অপর নাম- ‘ভালো রাখা’

তোমার ভালোতেই আমার ভালো

দু’চোখে যতই বিষাদের মেঘ 

করুক না কেনো আমি চাই

তুমি ভালো থেকো।



বাতিঘর 

সাজ্জাদুর রহমান 


বিচার-অবিচারের পাল্লায় যখন 

দোল খায় ভাগ্যের পরিহাস 

তখন বলতে পারবোনা সঠিক কথাটি।


নির্মমতার ফণা তুলে বিষকান্নায়

স্বপ্নের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে

সজ্জিত জীবনের বাতিগুলো নিভে যায়

হাস্যজ্জ্বল দৃশ্যে ধরে পচন

ম্লান হয় রঙিন স্বপ্নের চেনামুখ ! 


বাতাসের গায়ে কাঙ্গালের আর্তনাদ 

আকাশে ভাসে অশ্লীল পদাবলী 

নর্তকীর দেহ তল্লাসি করে নষ্ট চুমুর দাগ।


আমি দূরে বসে-

থৈ থৈ অন্ধকারে হাতড়াই ব্যথার প্লাবন।




চোখ রজনীর ফাঁদে  

রহমান মিজান 


এখনো রাত নামেনি 

ভুলে গেছি কখন নেমেছিল রাত চোখে, 

বুক পকেট অসহায়ত্ব বারো জোড়া বাঁপাশে যাতনা। 

ধারদেনা করা এক প্যাকেট আসক্তি পড়ে আছে নিয়মিত যেন জীবন্ত প্রযোজনা।

রাত নামেনি চোখে জীবিকার বিশ্রী ভাষায় অতিষ্ঠ, 

শেষ রাতের জংশন স্টেশনে নেমে কথোপকথন হয়েছে 

চারপাশের নীরব হত্যাকান্ডের চেয়ে ঢের ভালো কাকতালীয় জীবন।



ফেরারি

ইবনে আব্দুর রহীম খুরশীদ 


নগরের অলিগলি কংক্রিটের পিচঢালা পথ

পাহাড়ের উপত্যকা, বিস্তির্ণ মরুভূ’র মাঠ,

প্রত্যন্ত অঞ্চলেই খুজি তারে কাব্যের শপথ

যদিও বা তার খোঁজে আত্মদান নয়তো বিরাট।


পাখিদের ঘুমভাঙা, প্রভাতের দীপ্ত ঊষা-ক্ষণ

দুপুরের তীব্র রোদ- পিপাসার্ত লো-হাওয়ার দিন,

বিকেলের নিরুত্তাপ, নিশিথের কালো আবরণ

আকাক্সক্ষা সর্বদা তার খুজে থাকে উদাসীন।


আকাশের চাঁদ-তারা সাক্ষী আরো পাহাড়-পর্বত,

অরণ্য-জঞ্জালেও তার খুজে ঘুরেছি অধিক,

নদী আর সাগরের তীরে তীরে সুদীর্ঘ পথ,

নিশ্চিহ্ন করে শেষ হারিয়েছি উন্মুক্ত দিক।


একদিন খুজে খুজে অবিশ্রান্ত আশার ঝলক

প্রত্যাশার প্রান্তরে সহসাই দেখা পাবে তার,

অভিমানে হবে লাল আকুতির সোনার ফলক

একফালি হাসিতেই ঘুচে যাবে ক্লেশ সাধনার।



শিকড়ে পৌঁছাতে

মাজরুল ইসলাম


বুড়ো পানকৌড়ি বসে বসে কতগুলো কথা বলে গেল।


আর তাতেই

চেলার ধূসর ডানা হয়েছে রূপোলি।

এখন কাদা-বালি ধসিয়ে নদী, নদীর তীর

গিলার মিশনে মেতেছে বুড়ো পানকৌড়ির চেলা।


দেখছে বিশ্ব !


খরার মুখে পড়ে- অন্ধকার, হাহাকার

চারিদিকে লাশ আর লাশ !


পা রাখার জায়গাটুকু হারানোয়

বসে থাকতে পারলো না- মরণ আর কি !


বার বার নামে ওরা

নরকাসুরের থাবা দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দিতে 

কিংবা শিকড়ের নাগালে।




বেড নম্বর উনিশ

মুস্তফা হাবীব


যেদিন ভেসে আসে তোমার মুখরশ্মি- অবয়ব

মায়ায় জড়ানো কবিতার সংসারে রেখেছি খুব যতœ করে।


তারপর কত প্রকল্প গড়েছি, বুনেছি ফাঁদ 

তুমি আসবে, তুমি আসবে উড়ালপঙ্খী ডানায়

এসে বসবে পাশাপাশি। রিনিঝিনি হাসি

আর রসভারি কবিতার জলে ভেজাবে হৃদকমল।


আশ্চর্যের আশ্চর্য!

অনেক স্বপ্নের কাচাপাতা ঝরে গেছে বিনা নোটিশে

তবু এক নদী আবেগে তোমাকে দেখার শাশ্বত প্রবাহ

দু’চোখে মর্মরিত হতেই ছিল দিনের পর দিন।


অবশেষে বীরের বেশে তোমাকে খুঁজে পেলাম

একটি বনিদী হাসপাতালের ডি ব্লক- লিফটের পনেরো, 

ষোল- বি কক্ষের উনিশ নম্বর বেডে।



প্রেমিকের শার্ট আর সংগোপিত অক্ষরমালা

অনিন্দিতা মিত্র   

সাগরের উথাল পাথাল ঢেউয়ের কাছে গচ্ছিত রাখো সংগোপিত স্বপ্নের মণিমালা, স্মৃতির পত্রাবলিতে অভিমানের টুকরো টুকরো সংকেত, তোমার রয়াল ব্লু শার্টের কলারে টুপটাপ দীপ জ্বালায় ঝিলিমিলি তারাদের দল, নিঃসঙ্গতার বাকল খসিয়ে বিরহিণী স্টারলিং ঠোঁট রাখে প্রেমিকের ঠোঁটে। ঝরা ম্যাপেলের বনে উদাসী বিকেলের প্রবল উল্লাস, নতুন ভালোবাসার স্বপ্ন তুমি সন্ধান করতে থাকো নির্জন গোধূলির জলমহলে। 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট