অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
ফিলিস্তিন ভ্রমণের স্বপ্ন
মুঞ্জুরুল হক
মামার সাথে নিজেকে ফিলিস্তিনে আবিষ্কার করে চমকে উঠলাম। বর্তমানে নির্যাতিত-নিপিড়ীত ফিলিস্তিনের অবস্থা সম্পর্কে সবাই অবগত। এতদাসত্ত্বেও মামা কীভাবে কী পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাকে সাথে নিয়ে আসলেন এই পবিত্রভূমিতে আমি জানিনা। মসজিদে আল আকসা সম্মুখে পবিত্র ভূমিতে দাড়িয়ে আছি। ভাবতেই হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। অবশ্য পরিস্থিতির নাজুকতার দারুণ অভ্যন্তরে কিছুটা ভীতিও বিরাজ করছে। মামার সাথে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছি। আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি রকম যেন একটা গন্ধ আসছে না মামা? মামা উত্তর দিলেন, ফিলিস্তিনের মাটি থেকে তাজা রক্তের গন্ধ আসছে। উত্তরটা শুনেই আঁতকে উঠলাম । স্মার্টফোনে দেখা দৃশ্যগুলো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবো কখনো কল্পনাও করিনি। মামার সাথে সামনে অগ্রসর হলাম। চারিপাশে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন, লাশ ও কবরের আধিক্য, হসপিটালের শয্যাশায়ী শিশুদেরকে দেখে একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। আসলে মানুষের জীবনে যে কতো অসহায়ত্ব থাকতে পারে, তা এসব হসপিটালে না গেলে বুঝা যাবে না। কী বীভৎস! কি ভয়ংকর! হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটু দুরে আসামাত্র বিকট এক আওয়াজে আকাশ-পাতাল কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে মামাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। পেছনের দিকে তাকিয়ে এক্কেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় অসাড় হয়ে গেলো আমার গোটা দেহ। হসপিটালের উপর একটা বোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছে। পুনরায় স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো শয্যাশায়ী শিশুদের রক্তমাখা দৃশ্য। ভাবনার চোরাবালিতে ডুবে উ™£ান্তের মতো হয়ে গেলাম। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। চোখ খুলে নিজেকে নতুন একটা জায়গায় আবিষ্কার করলাম। উঠে পুনরায় মামার সাথে হাঁটতে লাগলাম পবিত্রভূমির সম্মুখভাগে। একটি শিশু গাছের ছায়ায় বসে অঝোরে কান্না করছে। মামা কিছুক্ষণ কথা বলে জানতে পারলেন, মেয়েটির নাম জান্নাত। তার পিতা-মাতা পিশাচদের নির্যাতনে ইন্তেকাল করেছে। ভেতরটা কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিলো। আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, আর কত্তো কিছু দেখাবেন মামা? মামা কিছু কথা বললেন। এই হলো আমাদের আবেগের শহর। পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্র শহর ফিলিস্তিন। এখানে পিতা স্বীয় সন্তানকে কবরস্থ করছে। সন্তানের সামনে নির্দোষ পিতাকে বন্দী করা হচ্ছে। নারীরা মানুষরূপী হায়েনাদের হিং¯্র থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রিয়জনদের সামনে। অবৈধভাবে দখলদারত্বের কাজ করছে নিকৃষ্ট মানুষেরা। চোখের সামনে প্রিয়জনদের শরীর ছিন্নভিন্ন হচ্ছে আধুনিক অস্ত্রের আক্রমনে। মামা রক্তচক্ষু নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁপছিলেন। হঠাৎ আমার শরীরে তীব্র উষ্ণতা অনুভব করলাম। রক্ত গরম হয়ে গেছে। তাদের জায়গায় নিজেকে রাখলাম। শিশুদের দৃশ্য আর মুসলিম ভাইদের অবস্থা ব্রেইনে স্থাপন করলাম। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। হাতে পাথর নিয়ে ক্রোধে দৌড়ে গেলাম মানুষরূপী নিকৃষ্ট প্রাণীদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। অল্প কিছুক্ষণ পর আমার বুকে বিশালাকৃতির বুলেট বৃদ্ধ হলো। মৃত্যু শয্যায় শায়িত আমি। মামা কোলের উপর আমার মাথা রেখে শিশুর মতো কান্না করছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমার একটুও কষ্ট হচ্ছিলো না। মুখে মুচকি হাসি লেগে ছিলো মৃত্যু অবধি।
ঘুমন্ত ছেলের মাথায় আদরের হাত স্পর্শ করলেন বাবা। কোমল কন্ঠে ডাকতে লাগলেন আবুল বাশার! আবুল বাশার! ওঠো বাবা! তাহাজ্জুদের সময় পেরিয়ে চলে গেলো যে। ঝটপট কাথা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে হাঁপাচ্ছিলাম। একি! নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম! স্বপ্নের ঘোর এখনও পুরোপুরি কাটেনি। স্বপ্নের স্মৃতিচারণে হৃদয় আকাশে মেঘের মতো ভেসে উঠলো নির্যাতনের নির্মম দৃশ্যগুলো। ঝটপট প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে নামাজান্তে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ জানালাম। সর্বযুগেই আল্লাহ তায়ালা মজলুমদের ফরিয়াদ কবুল করেছেন। অচিরেই ফিলিস্তিন বিজয় লাভ করবে ইনসাআল্লাহ!
জগন্নাথপুর, সলঙ্গা, সিরাজগঞ্জ