অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
বেঈমান
সজিবুর রহমান
আমি হতে পারতাম সেই অনাগত শিশু
যার মা প্রসব বেদনা নিয়ে শুয়ে আছে গাজার হাসপাতালে
যে মা জানে না কিছুক্ষণ বাদে ফুলসহ বিনষ্ট হবে গাছ!
হতে পারতাম ধূলিস্যাৎ হওয়া বাড়ির সামনে
বসে থাকা নিরুপায় বাকরুদ্ধ পিতা
যার চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে কংক্রিটের ধুলায়!
কিংবা পাতা ঝরা জলপাই গাছ
যে ভাবছে প্রতিটি ফলকে বুলেটে রূপান্তর করবে,
কেননা পেট্রোডলারে চেতনারক্ষী অস্ত্র কেনায় ব্যর্থ আরব প্রতিবেশীরা!
হতে পারতাম দখলদার বাহিনীর কোনো সৈন্য
যে যৌবনের সমস্ত শক্তি ব্যয় করছে জুলুমে,
কিন্তু খোদার দয়ায় আমি প্রকাশ্য জালিম হইনি!
বদলে আমি হয়েছি নাফরমান, নিমোকহারাম মুসলমান!
যে রাসূল বলে গেছেন আমি তাঁর ভাই
আমি যার উম্মতের অংশ বলে গর্বে বুক ফুলাই,
যে উম্মাহ একই দেহে লাখো প্রাণ
সে উম্মাহর বিপদে আমার পরিচয়- আমি বেঈমান!
তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে
এ এম তোফায়েল
তবুও স্বপ্ন দেখে মানুষ! গভীর সমুদ্রে দোদুল্যমান বিপন্ন জাহাজে অথবা ভেঙে পড়া অট্টালিকায় আঁটকে পড়া মানুষ যেমন বেঁচে থাকার স্বপ্ন হারিয়েও হারায় না! তেমন করেই স্বপ্ন দেখে কিছু মানুষ! ঢেউয়ে ভেঙে যায় নদীর কুল; জীবন চলে- অতীতে করা নিয়ে কতো ভুল- তা যদি জানতো মানুষ! লেখকের মতো করে বলতে হয় ‘যে জীবন ফড়িংয়ের- দোয়েলের মানুষের সাথে তাঁর হয় নাকো দেখা!’ আঁধার কালো দূর আকাশেও আলো দেখা!
অতিথিশালা
হাফিজুর রহমান
ফিরে গেলেই একবার- প্রমাণ করে দিব
আমিও ছিলাম পৃথিবী নামের এই অতিথিশালায়
শুধুমাত্র একটিবারের জন্য ভ্রমণের;
না-জানা সময়ের, নিয়ে এসেছিলাম ভিসা।
আমি এসেছি বেড়াতে, শিখতে- শেখাতে
আমি এসেছি নেয়ার থেকে বেশি দিতে;
অতিথিদের মাঝে অতিথি হয়ে-
পর্যাপ্ত সম বরাদ্দে- এই জগৎ স্রষ্টার ইচ্ছায়।
এখানের আতিথেয়তায় অতিথিরাও লোভী হয়!
লুটপাট করে কেড়ে নেয় একে অন্যের হক;
ভুলে যায়, অতিথিগণ চিরস্থায়ী নয়!
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে, ফিরতে হবে একসময়।
যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই
আশরাফ চঞ্চল
দেখো-
ফিলিস্তিন জ্বলছে
ধ্বংসস্তুপের নিচে হাজারো মানুষের লাশ
পশ্চিমা শাসকেরা
মানবতার নামে মানুষেরই রক্ত খাচ্ছে।
দেখো-
বিশ্বের পিশাচেরা
জোটবদ্ধ হয়ে মুসলিম নিধনে মেতেছে
প্রাচ্যের মুসলিম
স্বার্থের মোহে পশ্চিমাদের পাছা চাটছে!
আমরা যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই
রক্তের বদলে সম্প্রীতি চাই।
খিদে
স্বপন গায়েন
উনুন থেকে ধোঁয়া উড়ছে
মোটা চালের গন্ধ ছড়াচ্ছে চারিদিকে
অভুক্ত অভিমান নিষেধ মানে না
ছুট্টে যায় থালা নিয়ে।
শাক সিদ্ধ আর মোটা চালের ভাত
ওদের কাছে ওগুলোই পরমান্ন মনে হয়
প্রতিদিন দু’বেলা জোটে না-
একটু একটু করে মজে যাচ্ছে জীবনের হৃদ।
ভাঙাচোরা সংসার-
অবহেলা অনাদরে মানুষ হয় সন্তান
হাড় জিরজিরে শরীর, তবুও দু’চোখে রামধনু রঙ
তবুও ওদের খিদে পায়...
খিদে যে কারুর কথা শোনে না।