অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
বড়দের ক্লাস থেকে ভেসে আসছে পায়ের নির্মম আওয়াজ
দেলোয়ার হোসাইন
আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের পাতাজুড়ে
কেবলই লেখা আছে মৃত্যু। তবু পড়া না
পারার ভয় নিয়ে আমরা রোজ মক্তবে যাই,
পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে টের পাই কাঁপছে
শরীর। ভিতরে বড় হতে থাকে- নাবালক
অসুখ, পাশ কেটে বাঁচতে গিয়ে দেখতে পাই
আমাদের ডাকছে প্রতারিত লোভ! ক্রমশ
দূরে সরে যায় প্রার্থনার আকাশ। মাঝে
মাঝে ভুল করে ঢুকে পড়ি বড়দের ক্লাসে...!
রুটিনের পাতায় কোনো দাগ পড়ে না, কেবল
দীর্ঘ হতে থাকে পড়া না পারার ভয়, বাড়ছে
শরীরের কাঁপুনি, সাবালক অসুখ, প্রতারিত
লোভ, দূরের আকাশ, বড়দের ক্লাস থেকে
ভেসে আসছে পায়ের নির্মম আওয়াজ...!
হাতের রেখা
আসহাবে কাহাফ
এখনো আহত পাখি দেখি- ডানা ঝাপটায়
রক্তাক্ত পালকের ভাজে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে
স্বাধীন একটা ভোরের আশায়
আলপথে হেটে হেটে পাড়ি দিবে সোনালি ধানের বিল
হায় চিল, রঙিন ডানার সফেদ শঙ্খচিল!
দেশে দেশে আজো শিকারী পাতছে ফাঁদ
গণকের সম্মুখে অগণিত হাত- হাতের রেখা
পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে পাখির মতন একা।
ফিলিস্তিন বিষয়ক
নাঈমুল হাসান তানযীম
একটি কবিতা লিখতে চাইলাম
ফিলিস্তিনকে নিয়ে
লিখতে পারিনি
কলম হাতে নিতেই হাত কাঁপতে থাকল
জানাল নিজের অক্ষমতার কথা
সাদা কাগজের বুকজুড়ে
ফুটে উঠল ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
হাত থেকে কলম পড়ে গেলো
কাগজ বল-
শোনো,
ফিলিস্তিন নিয়ে কবিতা লেখা এতো সহজ নয়
আমি নিজের সবটুকু দিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করে গেলাম
পারলাম না
হাত কাঁপে
কলম কাঁপে
হৃদয় কাঁপে
আমি আর স্বাভাবিক থাকতে পারলাম না
কবিতা লেখা হলো না
বুঝলাম
ফিলিস্তিনকে কবিতার ভাষায় ব্যক্ত করার
শক্তি আমার এখনও অর্জিত হয়নি
স্বপ্নে দেখা জুতা
যাকারিয়া মুহাম্মদ
ঠিক ক’জোড়া জুতা পা’য়ে দিয়েছি জীবনে?
যে জোড়া জুতা সেই বে-বুঝির দিনে
আমার তুলতুলে পায়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল-
কী রঙের ছিল সেটা?
শত চেষ্টা করেও মনে করতে পারি না আজ।
একবার আম্মাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি
শুধু হেসেছেন, কিছু বলেন নি।
মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি,
ছোট্ট একজোড়া জুতা-
রঙ চেনা যায় না; ফ্যাকাসে হয়ে গেছে
পুরোপুরি। রিয়ানদের যে শিমুলগাছ ছিল
তার তলে পড়ে আছে।
ওটা কি আমার?
স্মৃতিগুলো ভীষণ পীড়া দেয় আজকাল-
যে স্মৃতি যত দূরের
সেটা তত বেশি মনে পড়ে-
ক্যাসেটের রিলের এই জীবনে, নির্বিঘেœ
আস্ত কত মানুষকে ভুলে গেলাম, তবুও
একজোড়া জুতা- রঙহীন ফ্যাকাসে-
ভুলতে পারি না।
ফিলিস্তিনের শিশু
শওকত এয়াকুব
আমি ফিলিস্তিনের অবুঝ শিশু
সন্তান হারা মা’র শব্দহীন কান্না,
চোখের সামনেই ভাইয়ের লাশ
বিশ্ব মোড়লেরা দেখতে পান না?
যুবক, তরুণ, সব শোকে মাতম
বৃদ্ধের স্মৃতি হলো ধ্বংসস্তূপ,
বোনের শরীর লালে-লাল রক্তে
মানবতাবাদীরা সব নিশ্চুপ।
কতকাল পেরিয়ে গেল
তাওহিদ ইসলাম
কতকাল পেরিয়ে গেল।
ছেড়ে গেল কতজন। হারিয়ে যাওয়া কত মুখ। প্রিয় কতকিছু। বদলালো পৃথিবী।
আমি নিদ্রাচ্ছন্ন। এতো কিছুর বদলে যাওয়া বুঝতে পারিনি। অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ে রইলাম। কতকাল!
সময় গড়ালো। মধ্যে পথে হোচট খেলাম। ভেবেছিলাম ইচ্ছেহীন কাটিয়ে দিবো। এক জীবন। যাযাবর হতে চাইবো না আর। চাইবো না কবি হতেও। অনুভূতিশূন্য মানুষের কবিতা লিখা মানায় না।
সড়ক পথের কেনার ঘেষা সারিবদ্ধ ল্যাম্পোস্ট। রাত্রি জুড়ে আলো দেয়। আধাঁরকে খানিকটা আলোর ঝলকানি পাইয়ে দেওয়া যার কাজ। রাত্রিজুড়ে বিষাদ নামে সেখানে। আলো-আধাঁরের মিলনে বিষাদেরা প্রাণ পায়। জীবিত হয়। ছুটে যায়। যার-তার কাছে।
বেহিসাব অনেক রাত পেরিছে। নিভু নিভু জ্বলতে থাকা ল্যাম্পোস্টের আলোয়। বিষন্নমনা হয়ে প্রকৃতি বিলাস। অনুভূতিটা কেমন যেন! শূন্য শূন্য। আনমনে ভীষণ ভাবনা। কেউ একজন আমার হোক। সমুদয় সুখ-দুঃখে সমান্তরাল ভাগ থাকবে যার।
অনাগত কারো ভাবনায় আকাশ হলাম। ছেড়ে এলাম সব! চোখের সামনে অজানা এক বাসনা। দীর্ঘ সেতু। রোজ কিছুটা পথ পেছন ফেলে এগোচ্ছি ধীর গতীতে। আপনি কিংবা অজানা কারো গন্তব্যে। সঙ্গী হবো বলে।