পদাবলি : ০২

 



নস্টালজিক প্রতিপক্ষ 

মাসুদ চয়ন


প্রতিপক্ষের ঘাস লতা ও গুল্ণগুলো আজও আমাকে ভালোবাসে দৃঢ় চিত্তে

প্রতিপক্ষের নদী তীর হতে আজও বিরহী গন্ধ ভেসে আসে

গিড়িখাত ও মরুদ্যানে বেদনাব্যাঞ্জক প্রতিধ্বনি প্রবাহিত হয়

বিষন্ণ মেঘের আনাগোনায় নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে সন্ধ্যার বাতাস

সন্ধ্যার সবথেকে শৈল্পিক অনুসঙ্গগুলো আমাকে খোঁজে

আমার জন্য কাঁদে 


সন্ধ্যা ছেড়ে শূন্যের দিকে হেলে যাচ্ছি ক্রমাগত

অশ্রু ঝরিয়োনা একা পাখি নীল কস্তুরি

আমিও ভালোবাসি

সত্যি ভালোবাসি


এই তো শীত আসি আসি করছে

সন্ধ্যা মাখানো নির্জন ছায়াঘন শৈত্য আমেজ

কুয়াশার নির্জন ¯্রােতে মৃত্যু গন্ধের স্বাদ নিবো ভাবছি

সন্ধ্যা ছেড়েছি তাই রাতের উদ্দেশ্যে...


মৃত্যু নিয়ে খেলতে ভালো লাগে

মৃত্যুর গালিচায় ভেসে ভেসে বিরহ কাতর যাপনে সিদ্ধহস্ত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই...

কে চায় নস্টালজিক প্রতিপক্ষের অশ্রু ঝরাতে রক্ত ঝরাতে!!



গ্রেনেড ও স্বাধীনতার গল্প 

জাহিদুল ইসলাম 


আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা কালো গ্রেনেড আমাকে দৌঁড়াচ্ছে। কেবল দৌড়াচ্ছি। দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছে যাচ্ছি অন্য এক বায়ুমন্ডলে। আমি এখন শ্বাস নিতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি যেনো বিশাল এক গ্রেনেডের ভিতর ডুকে যাচ্ছি। আমার চোখ খসে পড়ছে মৃত্তিকায়। আমার হাত পা কাতরাচ্ছে ভীষণ রকম। 

এখন আমার পায়ে জুতোও নেই। আমি শরিয়তের সব আলখাল্লার খোলে ফেলেছি। আমি এখন নগ্ন। আমার চোখের সামনে মারিফতের এক বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তর জুড়েই লাল আর সবুজের অনাকাঙ্ক্ষিত মিছিল। স্লোগান একটাই- স্বাধীনতা তুমি কোথায় যাচ্ছো??

অকস্মাৎ কে যেনো ছুড়ে মারলো একটা লাল কাঁচামরিচ আমাকে দিকে। আমি এবার দৌড়ালাম না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। মিছিল ভিতর থেকে আর্তচিৎকার করে বলে উঠলো গ্রেনেড গ্রেনেড বলে। আমি বুক উজাড় করে সেই গ্রেনেডের স্বাদ নিলাম। আমার দেহ ল-ভ- হয়ে উড়ে গেলো আকাশে।  

অসংখ্য কালো বাঘের হিং¯্রতা নিয়ে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলতেই দেখি আমার বুকের উপর হাজার হাজার কাঁচামরিচ ; রক্তাক্ত হয়ে গড়াগড়ি করছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। 

আজ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল পুড়ছে না। পুড়ছে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত মানুষের তরতাজা হৃদপিন্ড। প্রতিটা হৃদপিন্ড জুড়ে এক একটা কাঁচামরিচ সাদৃশ্য গ্রেনেড। গ্রেনেডের পাজর জুড়ে লিপিবদ্ধ এক কেজি কাঁচামরিচের স্বাধীনতা চাই। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা চাই।



নিরুপমা, শূন্যহাতে

জহুরুল ইসলাম


নিরুপমা,

পালক গজানো পাখির ছানার মতো ছটফট করে মন-

বাতাসে বট পাতার নড়াচড়ায় চমকে ওঠে ।

আতœধ্যানের আসনে একটা ছবি ঝলমল করে।


সারা ঘরময় যে তুমুল আলোড়ন,

তা যেন দেখেও দেখোনা।

তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে এ জগতে।

অথচ নিত্য ফিরে আসি শূন্য হাতে।


অনন্ত ঝড়ের পূর্বাভাসে আহত মন।

চোখের জোয়ারে তোমার আসন তো টলে ওঠে,

অতল তলে যে আগুনের তান্ডব!

তোমার সান্নিধ্যে সে আগুন নিভে যায়, নিরুপমা!



ব্যবধান

আবু বকর সিদ্দিক


যেই রাত আলোহীন সেই রাত আমার,

তোমার রাত্রি জোছনার শুভ্র চাদরে মোড়া,

আমার আকাশ জুড়ে বিষাদের মেঘ,

তোমার আকাশ রৌদ্র-ঝিলমিল।

তোমার আকাশ নির্মেঘ, নির্ঝঞ্ঝাট।

আমার বুকে আহত হৃদয়, চোখ বাষ্পাকুল।

তুমি অনিবার আনন্দ-প্রাণ, বাষ্পহীন লোচন তোমার। 

তুমি সুখ সায়রে নিত্য ভাসাও তোমার নাও, আর আমি দুঃখের তরী বাইছি নিরন্তর।

তোমার আর আমার মাঝে শুধু এতটুকুই ব্যবধান, বেশি না!



নির্ঘুমো মানুষগুলোর স্বার্থে

গোবিন্দলাল হালদার 


চোখে ঘুম না এলে আমার কিচ্ছুটি করার নেই। রাত 

রাষ্ট্রদ্রোহী ঘুমকে গণতান্ত্রিক রায়ে নির্বাসন দিয়েছে।

আমার দুচোখ কী তবে রাষ্ট্রদ্রোহী। এই কারণেই কী  

নির্ঘুমের মোড়কে আবদ্ধ হয়ে আছি। দয়া করে কেউ

আমাকে বের করার ব্যবস্থা করুন। এভাবে জীবনের উপর অত্যাচার মানেই তো আমি পাথর। 

একটি যুগ

পেরিয়ে গেল। ঘুমের আদালত আমার পক্ষে কেনো

রায় দিচ্ছে না। এখানেই আমার প্রশ্ন। তোমরা কী

নির্ঘুমো মানুষগুলোর স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় বরাবর প্রার্থনা লিপি লিখতে জান না। 

তড়িঘড়ি মানববন্ধন করো। দেখবে জনতা দ্রুত এসে লাইনে দাড়িয়েছে।

সেদিন নির্বাসিত হাট্টিমাটিম ঘুমেরা বড়োসড়ো হয়ে আমার বাড়িতে এসে 

প্রকৃত ঘুমের দেশে নিয়ে যাবে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট