এমন কইরা কেউ যায়
জিয়া হক
তুমি হারাই গেছিলা সে-ই ভালো ছিল
দুই যুগ পর ক্যান আইসা ধরা দিলা তাও পূর্ণিমা চান্দের মতো
শুধু দূর থেইকা মুগ্ধ করো
ধার করা টাকায় কেনা আমার ছোট্ট লাল সাইকেলও হারাই গেছিল
কই আমি তো তার জন্য কান্দি না
দুঃখ করি না
মায়াও করি না
হারাই গেছিল আমার শিল্পীও যার আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুইছা দিতো
স্কুলে টিফিনের সময় মুখের চকলেট কামড়ে ভেঙে অর্ধেক আমারে দিয়া দিতো
কই আমি তো তার জন্যও কান্দি না
তারে মনেও করি না
আমার মা আমারে ইলিশ মাছের ডিম খাওয়াই দিতো
ঘুম থেকে তুইলা জোর করতো এক গ্লাস দুধ খাওয়ার জন্য
এহন মা’রেই খাওয়াই দিতে হয়
কই আমি তো মা’র জন্যও কান্দি না
আমি কান্দি না আমার সন্ধ্যা নদীর জন্য
যেই নদীর রূপ-ঢেউ আমারে পাগল করতো
ফুল যেমন পাগল করে ভ্রমরকে প্রজাপতিকে
আমি কেবল তোমার সাথেই পারলাম না
তুমিই আমার ঘুমের মধ্যে ‘আপু আপু’ বইলা কাইন্দা ওঠা
সেই দুই যুগ আগের রাবেয়া বসরি
তুমি এমন ক্যান কও তো
তুমি কোন দুঃখে আমারে ফালাইয়া
সাত সমুদ্রের ওপারে চইলা গ্যালা
এমন কইরা কেউ যায় ?
আইলা-সিডরও তো এমন কইরা কাউরে ভাইঙা-চুইরা যায় নাই!
কতভাবেই না পুরুষকে দেখো
ইয়াসিন আরাফাত
নারী তুমি কতভাবেই না পুরুষকে দেখো
নারী তুমি কতভাবেই না প্রেমিককে দেখো।
কখনও সিদ্ধ ভাতের মতো থেঁতলে থেঁতলে দেখো
কোথাও শক্ত আছে কিনা।
কখনও টাকার মতো উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখো
কোথাও ছেঁড়া আছে কিনা।
কখনও কাপড়ের মতো নিংড়িয়ে নিংড়িয়ে দেখো
কোথাও জল আছে কিনা।
অথচ যেভাবে দেখার সেভাবে দেখো না;
পথের বালির মতো উড়িয়ে উড়িয়ে দেখতে পারো না?
আউলা বাতাসে প্রেমিক তোমার উড়ে যায় কিনা।
ফেনিল সমুদ্রে চিনির মতো নেড়ে নেড়ে দেখতে পারো না?
সাধু প্রেমিক তোমার নোনাজলে মিশে যায় কিনা।
দেখতে পারো না ঝরা পাতার মতো শুকিয়ে চৈত্রের রোদে?
রসিক প্রেমিক তোমার মর্মরে হয়ে ওঠে কিনা।
নারী তুমি প্রেমিককে কতভাবেই না দেখো
কেবল যেভাবে দেখার সেভাবে দেখো না।
দু’টি কবিতা
নুরুল ইসলাম তানঈম
হৃদয়
আকাশের নীলের মতো ছিলো আমার হৃদয়
বিশালাকার ও প্রসস্থ।
তুমি,
সংকুচিত করে গুটিয়ে ফেলেছ
লাল শাড়ীর আঁচলের বৃত্তে!
নিষ্ঠীবন
নিষ্ঠীবন ভাইবা থুক করে
ফেলে দিলে তুমি
অথচ,
আমি ততটা তুচ্ছ ছিলাম না;
যতটা তুচ্ছ করেছ তুমি!
আত্মহত্যা
শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া জয়
আত্মহত্যা মহাপাপ সে’তো বহুজনেই বা করে
কেহ বালুচর কেহ বা বিষাদের ঝড়,
জপে বেড়ায় বিষাদের নীল-জলাশয়।
তবে বা কেনো?
মানুষ মরণশীল! আগ শেষে মরিবে আহা
তবে মৃত্যুর লাগি কাম্য যেনো,
দুয়ারে-দুয়ারে মৃত্যু জপে আলিঙ্গন পেতে সচরাচর।
তরুলতা ঘেরা উদ্ভিদ-শেবাল বাঁচিয়া রয় প্রাণী,
বেঁচে রই মোরা।
স্বাদের জীবন বাঁচিবে যাহা দুঃখ-বিলাস আমাদের জীবন।
অপ্রিয় হই প্রিয় বলে, অতৃপ্ত তৃপ্তির স্বাদে
হঠাৎ জীবন থমকে যাবে নিশ্চিত জেনেও, অনিশ্চিতের ভিড়ে।
তবু মিছেমিছি বিষন্ন কুঁড়ে খায় আত্মহত্যার চোবলে
তবুও দুয়ারে-দুয়ারে মৃত্যু জপে আলিঙ্গন পেতে সচরাচর।
মধুচন্দ্রিমা
এম সোলায়মান জয়
এক ভরা পূর্ণিমা রাতে হোক আমাদের মধুচন্দ্রিমা
পূর্ণিমার আলোয় আদম-হাওয়ার মতো
গভীর হোক আমাদের মিলন
ও আমার অপরূপা প্রেয়সী
লাল শাড়ির গভীরে তোমার লুকানো প্রেম
আমি জোঁকের মতো নীরবে চুষে নেব
গভীর চুম্বনের আস্বাদনে একাকার হব দুজনে
ইতিহাসের মতো অমর হবে আমাদের প্রেমকাহিনী।
চন্দ্রিমার উজ্জ্বল আলো এসে পড়বে
তোমার দুধবরণ কেন্দ্রনিন্দুতে
স্বেদ কপালে একে দেবো তিলক চুম্বন
কৃঞ্চকাজল চোখে পরিয়ে দিব মায়ার শিকল
আকাঙ্ক্ষার অসীম গহ্বরে হারিয়ে যাব দুইয়ে
কামনার সুখানুভব আগুনে পোড়াবো শরীরের আত্মা
হাত ধরো ও আমার স্বপ্নরাজ্যের সুকেশিনী
আলিঙ্গনে স্বাগত জানাও তোমার রূপের গৌরবে
দেখ-সহ¯্র শতাব্দীর পর প্রথম ভরা পূর্ণিমা জেগেছে
চিরচারিত উদ্দ্যোম ভালোবাসায় আজ হোক
আমাদের মধুচন্দ্রিমা।
প্রতীক্ষা
হুসাইন আহমদ
ভরা কার্তিকের দিন
ভিষণ ঠান্ডায় জবুথুবু হৃদয়ের চৌহদ্দি
আলগোছে তোমাকে ছোঁবো বলে
আমার কালান্তরের প্রতীক্ষা
দ্যাখো, কী গভীর হাহাকারে আকাশে
ওড়ে বিষণ্ন প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস
নাভিফুলের সেই জলছাপ চিত্র
এবং বুজে আসা কৈশোরিক প্রেমের ঋণ
তোমাকে ছোঁবো বলে আমার জন্মান্তরের প্রতীক্ষা
মেয়ে, সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায় তুমি বন্দী
তোমাকে ছুঁয়েও ছুঁতে পারি না কোনোদিন।
যদি কেউ বলে
হোসাইন জাহান
যদি কেউ বলে
নিষিদ্ধ হোক তোমার ধূসর পদচিহ্ন
দহনদিনের কোলাহলে,
তবে আর চাইবনা বৃষ্টি, জোছনা মাখা রাত
এ নির্মল নিভৃত কোলে।
যদি কেউ বলে
উদাস ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ভিজবে না
নিঃশব্দ একাকীত্বের ভীড়ে,
তবে দুঃস্বপ্ন নিয়ে নির্বাসিত হবো
শেষ রাত্রির তিমিরে।
আফ্রোদিতি ও আমি
দ্বীপ সরকার
একবার আফ্রোদিতির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো
চলন্ত সিঁড়ির ওপরেÑসিঁড়ির ঝাকুনিতে আমাকে
ঝাপটে ধরে সামলাতে পেরেছিলো বটে
আরেকবার দেখা হয় মান্না দে’র গানের আসরে
তখন রাতের আকাশ খুব করে ডাকছিলো
‘এই আফ্রোদিতি এই আফ্রোদিতি’
আমি চিনে নিলাম তাকে
মানুষকে খুব করে চেনা যায়
যদি তার ভেতর আয়না থাকে
আফ্রোদিতির ভেতর
ভিষণ রকমের একটা আয়না আছে
ভিষণ রকমের পৃথিবী আছে
শহরের পিচঢালা পথে আঙুরের মতো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টসটসে স্মৃতির ভেতর
আমরা গভীরভাবে জড়িয়ে গেলাম