অসংহতি
জায়্যিদ জিদ্দান
‘তুই যা করার কর। আমি কিছু করতে পারবো না। তোকে বলছি না? কিছু করার আগে আমাকে আগে জানাবি। না জানিয়ে কিছু করবি না। কথা তো শুনোছ না। এখন যা ইচ্ছে কর।’
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে একটু থামলো ফরিদ। ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আগুন বেরুচ্ছে যেন। একটু বেশিই রাগ হয়েছে মনে হয়। আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছি ওর বকবকানি। আমারো ইচ্ছে করছে অনেককিছু বলতে। কিন্তু কিছু বলছি না। এখন না বলাটাই হয়তো ভালো হবে। ফরিদকে আমি চিনি অনেকদিন। আমি জানি কিছুক্ষণ বকাবকি করে ও ঠিক শান্ত হয়ে যাবে। বড়ভাইয়ের মতো মমতা মিশিয়ে একটু পরেই আমাকে শান্তনা দিবে। বুঝাবে। মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শিশুর মতো আদর করবে। তখন মনে হয় ফরিদ আমার কত বছরের বড়। কিংবা আমরা এক মায়ের । পেটের ভাই। ও আমার বড় ভাই।
তারপর কথা বলতে বলতে ও একসময় কেঁদে ফেলবে। অনেকক্ষণ কাঁদাকাটি করার পর বলবে ‘তোর কি লাগবে বল। আমি সব দিবো। তারপরও উল্টাপাল্টা কিছু করিছ না’। এই সময়টার জন্যেই আমি অপেক্ষায় থাকি। যা চাই তাই পাওয়া যায়।
ফরিদের চেহারার রং পাল্টাচ্ছে। আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছে গলাটা অসম্ভব নরম করে ও বললো।
‘তুই একটা কথা কেন বুঝিছ না। আমার এসবে ভীষণ ভয় হয়। তুই জানস আমি তোরে কতটা আপন ভাবি। তোকে আমি এত তারাতাড়ি হারাতে রাজী না।
‘আমি তো তেমন কিছু করি নাই। জাস্ট...
‘চুপ কর ! জানি তো কি মহান কাজটা করেছিস। এখন বল কি করতে চাচ্ছিস? কি করবি?
‘তুই জানস আমি এখন কি করবো। প্রত্যেকবার যা করেছি এখনো তাই। নতুন করে বলার কিছু নাই।
‘মানে? তুই এখনো খুন করবি?
‘হুম। এ খেলার শেষ পরিণাম শুধুই মৃত্যু।
‘কিন্তু লোকটা তো ভালো ছিল। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন।
আমি একটু মেকি হাসলাম। এ হাসির আড়ালে এমন কিছু আছে যেটা ফরিদ জানে না এবং কখনো জানবেও না।
‘রজব আলী কি শ্রদ্ধাভাজন ছিল না? রাতুল মল্লিক? ওরা সবাই হাজী সাহেব ছিল।
‘হুমম। শুনেছি শিহাব শিকদারও নাকি হজ্বে যাচ্ছে দুইদিন পর।
‘ভুল শুনেছিস। শিহাব শিকদার আর হজ্ব করতে যাচ্ছেন না।
‘কেন? একটু আগেই দেখা হলো আমার সাথে। এবং কিছুক্ষণ পর ফোনও দিবে বললো আমাকে।
‘তাহলে এটাও জেনে রাখ, শিহাব শিকদার তোকে আর ফোনও করবে না।
‘মানে..?
ফরিদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর চোখের চারপাশে শিশির বিন্দুর মতো ফুটে আছে অসংখ্য জিজ্ঞাসা।
আমি গলা ছেড়ে হেসে উঠলাম। হাসির বিকট আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হলো দেয়ালের চারপাশে।