অবশেষে আমি মিলিয়ে যাচ্ছি,
নাদিম আমিন
অবশেষে আমি মিলিয়ে যাচ্ছি,
ধুলো থেকে ধোঁয়াতে কিংবা বায়ুকণাতে,
শহুরে রৌদ্র-তাঁবুর ওমে,
এবং নর্দমার জলের বদ্ধতাতে।
আমাকে তো নর্দমার জলে মানায় বল?
আজীবন কীটের মত গুমড়ে থেকেছি,
শ্রাবণ কাকের মত হয়েছি সিক্ত ও পরিত্যক্ত,
প্রতিটি সময়ে হয়েছি আমি গারদ গাঁড়ল,
আর তোমার চোখের মত স্বচ্ছ সমাজে ব্রাত্য।
আমাকে তো ব্রাত্য হয়ে বাঁচা মানায় বল ?
এক বাক্যে সবাই স্বীকার করে নেবে,
আমার চাইতে তুমিই বেশি দামি,
তাই কখনও নিজেকে আয়নায় দেখি না,
কারণ ওপাশে দেখা যায় আত্মঘৃণিত আমি!
আমাকে তো ঘৃণা করা মানায় বল ?
তোমার আজন্ম যে আভিজাত্য,
ঝিনুকের মত পোষা যে রহস্য,
তোমার অদেখা যে হাসি আজও অনাবৃত,
সবকিছুর ওপর অধিকার ছেড়ে হলাম নিঃস্ব।
আমাকে তো নিঃস্ব হয়ে থাকা মানায় বল ?
আমি প্রতিদিন সকালে মার্ক্সেতে কামড় বসাই,
বিকেল ঘনালেই আমি পান করি ইবনুল আরাবি,
তোমার এসবে বরাবরই নাক সিঁটকায়,
তোমার পশ্চিমা পবনে আমার ফুসফুস খায় খাবি!
আমাকে চিরকাল প্রতীচ্য নামক নোংরা ভাগাড়ে মানায় বল ?
তাই আমি তোমার থেকেও লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে
কারণ তোমাকে মানায় অত্যুচ্চ অহমি দালানের ভিড়ে
আর আমাকে মানায় প্রাগৈতিহাসিক গুহায় ধ্যানমগ্ন ফসিলরূপে
আদিম সত্য দ্রোহকে বুকে চাষ করে থাকবার জন্য
যাকে তোমার মিথ্যে মনে হয়েছিল
অথবা মনে হয়েছিল ঠাট্টামো !!
দেয়াল
দ্বিপ্রহর
কোনো কারণে আশপাশের মানুষগুলোর খোঁজ না নিলে,
তারা ভাবে-
খোঁজ না নেওয়ার কারণ হলো, অবহেলা কিংবা ভুলে থাকা
অথচ তারা একবার খোঁজ নিয়ে দেখেনি,
কোন পিড়া আমার আর তাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে
আজন্ম অসুখ
সাগর আহমেদ
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে বুকের ভেতর
অনুবাদ হয় তোমাকে দেখার আজন্ম অসুখ
অন্ধকারের সারাৎসারে মৃত্যুর মত মিশে আছো
ঘুনে জর্জরিত দরজা মৃদু বাতাসে নড়েচড়ে উঠে
ঘোলাটে চোখে তাকাই তুমি এলে কি?
অপেক্ষারা বৃদ্ধ হয় কেটে গেল সহ¯্র বসন্ত
শরীরের কোণায় কোণায় অসুস্থতার বসবাস
সঙ্গম নয়, শুধু একটু অন্ধ আলিঙ্গন চাই
ব্যাকুল দু’হাতে আঁকড়ে ধরবে নিভৃতে
পৃথিবীর শেষ দিনটিতে অমীমাংসিত আলো
নিয়ে এসো শরীর হয়তো চলে যাবে মাইনাসে।
শহুরে বসন্ত
মোহাম্মদ আল রাহাত
হাওয়ায় আটকে ছিলাম বাসতলি লেকের পার দূষিত নগরী থেকে আঠারো মাইল দূরে; তবুও নগরীর রাস্তাঘাট, দেয়াল জুড়ে জাগ্রত বসন্তের বাতাস বহে। বাতাসে ভাসছে আমের মুকুলের কড়া স্মেল দুপুরে প্রেমিকার চুলে আমের মুকুল ঝরে পড়ে কখনো চিরুনির ছুয়ায় সন্ধ্যার সাক্ষাৎকারে হয় এর পতন ; কখনো বা প্রেমের সুখ বহে হৃৎপি-ের কাছাকাছি অন্ধকারের মতন। শহরের অট্টালিকায় বন্দী প্রেয়সীর প্রার্থনা ফাল্গুনের শিউলি বা রঙ্গন যেন ঝরে না আর। কিন্তু হাওয়ার ঝাপটায় যদি তোমায় ঝড়ে যেতে হয় ? কষ্ট পেয় না। যেমন কষ্ট পাইনি শহুরে চড়–ই ও ম্যাগপাই।
ক্ষুধা
নাঈমুর রহমান
আমার ক্ষুধা এই মানচিত্র খাওয়া নয়
কিংবা নয় এই শহর খাওয়া,
আমার ক্ষুধা দুবেলা অন্ন, শুধুই দুবেলা অন্ন।
আমার ক্ষুধা মার্সিটিজে চড়ে মানবতার বাণী ছড়িয়ে
পাঁচ তারকায় বসে প্রমোদ ভোজ নয়,
আমার ক্ষুধা শুধুই দুবেলা অন্ন।
আমার ক্ষুধা ঐ দর কষাকষি করা ত্রিশ কিংবা ষাট
মিনিটের মোল্লার মত পকেট ভারী করা নয়,
আমার ক্ষুধা দুবেলা অন্ন, শুধুই দুবেলা অন্ন।
আমার ক্ষুধা লক্ষ মুখের অন্ন লুটে
প্রাসাদসম বাড়িতে বসে রাজ ভোজ নয়,
আমার ক্ষুধা শুধুই দুবেলা অন্ন।
আমার ক্ষুধা নদী খেয়ে, গাছ খেয়ে
উন্নয়নের সোপান গাওয়া নয়;
আমার ক্ষুধা একটু বিশুদ্ধ অম্লজানের
আর একটি জীবন্ত নদীর।
সব দাগ মোছে না ইরেজার
ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ
সব দাগ মোছে না ইরেজার
সব ক্ষত হয় না পূরণ
ভূমিকম্পেও টলে না অভিমানী পাহাড়
আহ্নিকগতির তাড়া খেয়ে ঘুরতেই থাকে পৃথিবী
সূর্যের বিচ্ছেদ সইতে না পেরে কোমায় চলে যায় দিন,
স্বজনদের প্রার্থনায় ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপে আবার ফিরে আসে সূর্য,
অতঃপর সুস্থ দিবালোক বসুধার সাথে আলোকিত করে প্রেমের সংসার।
হে ঈশ্বর,
তুমি এমন প্রেম দাও আমার ‘তুমি’ কে।