বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের সাধক কবি হেয়াত মামুদের সাহিত্যকর্ম



বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের সাধক কবি হেয়াত মামুদের সাহিত্যকর্ম
জাহিদ হোসেন

কবি কাজী হেয়াত মামুদ রংপুর জেলার অর্ন্তগত পীরগঞ্জ থানাধীন ঝাড়বিশালা গ্রামে ১৬৮০ থেকে ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দের কোন এক সময়ের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিলেন দাউদ খাঁ। বাংলায় বার ভুঁইয়াদের বিদ্রোহের সময় উত্তর প্রদেশের গাজীপুর থেকে এদেশে সম্রাট আকবরের সেনাবাহিনীতে সামন্ত নায়ক রূপে আগমন করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ কবির, মায়ের নাম খায়রুন্নেছা। কবি কাজী হেয়াত মামুদের পিতা ঘোড়াঘাট সকারের অধীন দেওয়ান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি নিজেও ছিলেন একজন কবি। রংপুর জেলার অর্ন্তগত পীরগঞ্জ থানাধীন ঝাড়বিশালা গ্রাম সেকালে ‘সুলঙ্গা-বাগদুয়ার’ পরগণার একটি সমৃদ্ধ জনপদ। জন্মভূমির প্রতি কবির ছিল সুগভীর ভালোবাসা। কবির জন্মভূমির বিবরণ ও আত্মপরিচয় দিয়ে ‘জঙ্গনামা’ কাব্যে লিখতে দেখা যায়-
‘শুন ভাই নিবেদন/কহি আমি বিবরণ/যেন মতে রচিনু পয়ার।/এঝার বিশেলা গ্রাম/চতুর্দিকে যার নাম/প্রগণে সুলঙ্গা বাগদুয়ার।/সরকার ঘোড়াঘাট/কি কহিব তার ঠাট/নানান বাজার দেখি যারে।/সে গ্রামে আমার ঘর/আছে লোক বহুতর/ছাত্তাল পন্ডিত বোলি তারে।’
 কবি কাজী হেয়াত মামুদ শৈশবে নিজগৃহে এবং পরবর্তী সময়ে ঘোড়াঘাটে বিদ্যা শিক্ষা অর্জন করেন। করতোয়া নদী তীরবর্তী ঘোড়াঘাট ছিলো প্রসিদ্ধ নদীবন্দর ও সুরক্ষিত শহর। সে সময় বিদ্যাশিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র ছিলো ঘোড়াঘাট। বাল্যকাল থেকেই কবি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী। তাঁর ভাষাপ্রীতিও প্রশংসনীয়। তিনি মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও আরবী, ফারসী, উর্দু, ভাষায় অসামান্য ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। ফারসী ভাষা ও সাহিত্যের উপর তাঁর এতদূর দখল ছিলো যে, প্রধানত ফারসী সাহিত্য থেকে তিনি কাব্যকল্পনা গ্রহণ এবং বঙ্গানুবাদ করেছেন। তিনি পাঠ সমাপ্তির পর ঘোড়াঘাটের নায়েব ফৌজদারের অধীনে ‘সুলঙ্গা-বাগদুয়ার’ পরগণার কাজী হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। সে সময় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ছিলেন বাংলাদেশের শাসনকর্তা।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কবি হেয়াত মামুদ। ডঃ ওয়াকিল আহমদের মতে, তিনি ছিলেন মধ্যযুগের কাব্য সাধনার শেষ প্রতিনিধি। কোন কোন গবেষকের মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে তার মতো প্রতিভাধর কবি খুব কমই জন্ম নিয়েছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর  শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র গুনাকার (১৭২২-১৭৬০) ও শাহ গরীবুল¬াহ (১৭০০-১৭৭০) এবং পূর্ববর্তী মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, আলাওল (আনুঃ ১৬০৭-১৬৮০) ও দৌলতকাজীর (আনুঃ ১৬০০-১৬৩৮) সমসাময়িক ছিলেন তিনি। নৈতিকতার শীর্ষে অবস্থান করে তিনি চেয়েছিলেন সকলকে হিতোপদেশ শোনাতে ও ধর্মের পথে পরিচালিত করতে। মধ্যযুগে যে ক’জন মুসলমান কবি সাজাত্যবোধ এবং স্বীয় ধর্ম ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে আরবি ও ফারসি ভাষায় রচিত ধর্মীয় সাহিত্য অনুসরণে কাব্যরচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন কবি কাজী হেয়াত মামুদ তাঁদের মধ্যে উলে¬খযোগ্য। অলংকার প্রাচুর্যে বক্তব্য বিষয়কে অযথা ভারাক্রান্ত না করে সহজ সরল অভিব্যক্তির মাধ্যমে পাঠক সাধারণের সম্মুখে তুলে ধরার প্রয়াসী ছিলেন তিনি। বক্তব্যের সারল্যেই তাঁর কবিকীর্তির শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট। রচনা পরিপাট্যে, রসমাধুর্যে ও সুললিত ছন্দবদ্ধে তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থসমুহ বৈশিষ্টের দাবিদার। সপ্তদশ শতাব্দীর কবি আলাওল ও কবি দৌলতকাজী ছাড়া মধ্যযুগের অন্য কোন মুসলমান কবি রচনা করেন নি কাজী হেয়াত মামুদ অপেক্ষা অধিক সংখ্যক কাব্যগ্রন্থ।


ব্যক্তিগত জীবনে কবি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক প্রকৃতির ছিলেন বলে তার সবক’টি কাব্যগ্রন্থে প্রাধান্য লাভ করেছে নীতিবোধ ও ধর্মীয় প্রেরণা । পন্ডিতগণের মতে, তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ একজন কামেল ব্যক্তি এবং কাদেরিয়া তরিকাভূক্ত একজন সাধক। তিনি যে সময়ে কাব্য সাধনায় ব্রতী হন সে সময় দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা বিরাট ধ্বস নেমে এসেছিলো। সমাজের এই দুর্দিনে তিনি চেয়েছিলেন মানুষের নীতিবোধ জাগাতে। তাঁর কাব্যসাধনা নিছক কল্পনাবিলাস ছিলো না বরং এক মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি কাব্য সৃষ্টি করে গেছেন। কবি কাজী হেয়াত মামুদ মোট কতটা গ্রন্থ রচনা করেন সে বিষয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা থাকলেও ডঃ মাযহারুল ইসলাম সহ বেশির ভাগ গবেষক তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন চারটি । নিচে কবি কাজী হেয়াত মামুদ রচিত কাব্যগ্রন্থ চারটির নাম ও প্রকাশের সময়কাল উল্লেখ করা হলো-
 (১). জঙ্গনামা বা মহরম পর্ব................রচনাকাল....১৭২৩ খ্রীষ্টাব্দ/ ১১৩০ বঙ্গাব্দ।
(২). চিত্তউত্থান বা সর্বভেদবাণী............রচনাকাল....১৭৩২ খ্রীষ্টাব্দ/ ১১৩৯ বঙ্গাব্দ।
(৩). হিতজ্ঞানবাণী...........................রচনাকাল....১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দ/ ১১৬০ বঙ্গাব্দ।
(৪). আম্বিয়াবাণী.............................রচনাকাল....১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দ/ ১১৬৪ বঙ্গাব্দ।
জঙ্গনামা বা মহরম পর্ব-কাব্যটি কারবালার সর্বজন পরিচিত বিষাদময় ও করুণ কাহিনীকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয় মানবেতিহাসেও মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক কাহিনী কারবালার বিষাদময় ঘটনা। ১৭২৩ খ্রীষ্টাব্দের কোন এক সময় রচিত হয়েছিলো কাব্যগ্রন্থটি। ফারসি ভাষায় বিরচিত মুক্তাল হোসেন বা অনুরূপ কাব্য অনুসরণে রচিত হয়েছে ‘জঙ্গনামা’ কাব্যগ্রন্থ। কাহিনীর কাঠামোটুকু ছাড়া রচনা প্রায় সর্বাংশ কবির নিজস্ব। ‘জঙ্গনামা’-কাব্যগ্রন্থে ধর্মীয় চেতনার প্রতিফলন যথেষ্ট পরিমাণে আছে এর পাশাপাশি কবির চিত্রকল্প নির্মাণ, ভাষা প্রয়োগে কুশলতা, উপমা প্রয়োগে শিল্পবোধ, ছন্দ ব্যবহারে পারদর্শিতা সহজে চোখে পড়ে। যেমনঃ
‘পালঙ্ক উপরে আছে বসিয়া যুবতী
উজ্জ্বল করিচে ঘর শরীরের জুতি,
প্রেম রূপে জুড়িয়াছে কাম পঞ্চসর
বিন্ধিয়া মুসার মন করিল জর্জর।’

এই কাব্যখানি পড়ে ঘোড়াঘাটের নায়েব ফৌজদার অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং কবিকে পঞ্চাশ বিঘা জমি জায়গীর হিসাবে দান করেন।

কবি হেয়াত মামুদ রচিত দ্বিতীয় গ্রন্থের নাম ‘চিত্তউত্থান বা সর্বভেদবাণী’। ডঃ সুকুমার সেনের মতে, হেয়াত মামুদ ‘হিতোপদেশ’-এ যে অনুবাদ করেছিলেন তা সংস্কৃত থেকে নয়, সংস্কৃত অবলম্বনে লেখা ফারসি কাব্যগ্রন্থ থেকে। নীতিকথামূলক এ কাব্যখানি কবি হেয়াত মামুদের আগে আর কোন কবি ‘হিতোপদেশ’-অবলম্বনে কাব্যগ্রন্থ রচনা করেননি। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, সংস্কৃত হিতোপদেশের ফারসি অনুবাদ হইতে বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে যা ‘চিত্তউত্থান বা সর্বভেদবাণী’-নামে পরিচিত। ‘চিত্তউত্থান বা সর্বভেদবাণী’ -কাব্যগ্রন্থটি ১৭৩২ খ্রীষ্টা্েব্দ রচনা করেন। কবির ভাষায়-
‘বিষ্ণু রাম বিরচিত/ছিল পুঁথি নাগরিতে/হিত উপদেশ নাম যার/চারি খন্ডে সেই পুঁথি/বিরচিল দ্বিজপতি/প্রতি খন্ডে নানা জ্ঞান তার।’
কবি হেয়াত মামুদ বহু শ্রম স্বীকার করে রচনা করেছেন ‘চিত্তউত্থান বা সর্বভেদবাণী’ কাব্যগ্রন্থ। কবির নিজের কথায়- সর্বভেদ নামে পুঁথি/শ্রম করি দিবারাতি/বিরচিনু ছাড়িয়া আলিস।/কহি সে সালের কথা/যাতে বিরচিনু পোথা/সন এগার’শ ঊনচলি¬শ। (মুসলিম বাংলা সাহিত্য,পৃষ্ঠা-২৩০)। কবি হেয়াত মামুদ এ কাব্যটি রচনা করেছিলেন মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত করে তাদের অজ্ঞনতা দূর করতে। তাই তিনি বলেছেন-
‘যার বিদ্যা নাই সে না জানে ভাল মন্দ
 শিরে দুই চক্ষু আছে তথাপি সে অন্ধ।’


‘হিতজ্ঞানবাণী’-কবি হেয়াত মামুদ রচিত তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। ১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে এই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। ‘হিতজ্ঞানবাণী’-কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তু ইসলাম ধর্মের বিধি-নিষেধ, ঈমান-আমল, মারেফতি বা আধ্যাত্মিক সাধনা। এই কাব্যে ওজু, গোসল, নামাজ, রোজা, হায়াত, মউত, কেয়ামত ও আখিরাত সম্মন্ধে লিপিবদ্ধ আছে। এই কাব্যটি অনুবাদ না হলেও বিভিন্ন আরবি ও ফারসি গ্রন্থের ভাব অনুসারে রচিত। এই কাব্যগ্রন্থে কয়েকজন নবীর জীবন কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কবির নিজের কথায়-
‘ফারছির কথা সব আনিয়া বাঙলাত
পদবন্ধ করি কহে মামুদ হেয়াত।
হিতজ্ঞান বাণী ভাল শুন সর্বজন
মোছলমান হয়া পূজা না কর কখন।
ভূত প্রেত পূজে যেবা মোছলমান হয়া
মহা পাপী হয় সেহি ঈমান হারায়া।’

 এই কাব্যগ্রন্থের শেষাংশে কবির জীবন দর্শনের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘হিতজ্ঞানবাণী’-ইসলাম ধর্মের মূলতত্ত্ব সমন্ধে একটি উপাদেয় কাব্যগ্রন্থ এবং বাংলাভাষায় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত কাব্য রচনার অগ্রদূত।

‘আম্বিয়াবাণী’-কবি কাজী হেয়াত মামুদ রচিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ। ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে এই কাব্যগ্রন্থটি রচিত হয়। পূর্ববর্তী কবিগণ রচিত অনৈসলামিক নবী কাহিনীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইসলাম সম্মত নবী কাহিনী রচনার মহতী উদ্দেশ্যে কবি হেয়াত মামুদ ‘আম্বিয়াবাণী’ কাব্যগ্রন্থ রচনায় ব্রতী হন। ডঃ সুকুমার সেন বলেন,- ‘‘আম্বিয়াবাণী’-তে ইসলাম শাস্ত্রের পুরান কথা, সৃষ্টি হইতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মদীনা গমন পর্যন্ত বিবরণ আছে। এই কাব্যগ্রন্থই হচ্ছে হেয়াত মামুদের বৃহত্তর রচনা। যতদূর সম্ভব ‘মঙ্গল’ কাব্যের ছাঁচে গড়া। বন্দনা অংশে মাঝে মাঝে বেশ ভালো কথা আছে।’’ গুরু বন্দনায়-
‘একে  একে গুরু বন্দো চরণ আরাধী
পাট গুরু হাট গুরু বাট গুরু আদি।
শিক্ষা গুরু বন্দিব উদ্দিশে দুই পাত্র
রাগরস তালমান শিখাইল তাত্র।’
 ‘মঙ্গল’-কাব্যে দিগবন্দনায় যেমন দিগদেশের দেবদেবীর  উলে¬খ থাকে ‘আম্বিয়াবাণী’-কাব্যে তেমনি  উল্লেখ আছে নানা পীরের। যেমন-
‘পূর্বেতে বন্দিব পীর আব্দুল গফ্ফার
পশ্চিমে বন্দিব পীর আব্দুল সত্তার।
উত্তরে বন্দিব পীর আব্দুল করিম
দক্ষিণে বন্দিব পীর আব্দুর রহিম।’
‘আম্বিয়াবাণী’-বৃহদায়তনের একটি কাব্য। এ ধরনের বৃহদায়তনের কাব্য বাংলা সাহিত্যে খুব কমই রচিত হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু চন্ডীদাস রচিত ‘শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্য। শুধু আকারে বা আয়তনে নয়, কাব্য গুণের জন্যেও বৈশিষ্টপূর্ণ এই ‘আম্বিয়াবাণী’ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে মহাকাব্যের ব্যাপকতা ও গভীরতা বিদ্যমান।  এই গ্রন্থ রচনাকালে কবি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েন। তাই অ¯পূর্ণ অবস্থায় তিনি ইতি টেনেছেন এই গ্রন্থের-
‘একে শেষ কাল তাতে জঞ্জাল অপার
কহিতে না পারি আমি একাধিক আর।’
ডঃ সুকুমার সেন বলেন,- ‘আম্বিয়াবাণীর পরিসমাপ্তি আকস্মিক; তাঁহার জন্য হেয়াত মামুদ নিজের বৃদ্ধ বয়স ও অক্ষমতাকে দায়ী করিয়া বলিয়াছেন,যাহার আরও জানিতে ইচ্ছা হইবে সে যেন মূল বই (কিতাব) পড়ে এবং লিখিতে ইচ্ছা হইলে কিতাব দেখিয়া লিখে।’ এই কাব্যের শেষ ছত্রটি বেশ করুণ ও আবেদনময়-
‘হেয়াত মামুদ ভুণে আম্বিয়ার বাণী
আমি না রহিব পুথি রহিব নিশানী।’
কবি হেয়াত মামুদ ছিলেন একজন শক্তিমান কবি। ফারসি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী বাংলা ভাষায় তিনি কাব্য রূপ দান করেছেন। বৃহদায়তনের কাব্য রচনায় শুধু নয়,অল্প কথায় গভীর ভাবদ্যোতক প্রবচনের মতো পদ রচনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যেমনঃ
‘উচিত বচন মোর মন্দ লাগে তাগে
দুগ্ধ বিষ হৈল যেন পড়ি সর্প মুখে।’
আবার,
‘দুঃখ করি যদি কেহ সম্পদ কামায়
প্রাণ সম করি রাখে না খায় খাওয়ায়।’
আবার,
‘যথা সুপুরুষ তথা সুপুরুষ যায়
জলের উদ্দিশে জল হেট মুখে ধায়।’

তারপর খুব বেশী দিন কবি হেয়াত মামুদ জীবিত ছিলেন না। ১৭৬০ থেকে ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দের কোন এক সময়ের মধ্যে কবি হেয়াত মামুদ ইন্তেকাল করেন।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট