নূরে জান্নাত
আমরা কেউ’ই ঘরে নেই,
অথচ সবাই জানে
আমরা ঘরেই আছি।
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকির আলো,
শিশিরের আলিঙ্গনে সারা দেওয়া
ধান ক্ষেত, আলপথ মারিয়ে
গ্রাম্য মেলায় পৌছে গেছি।
আমি টানছি মাটিতে বিছানো
ছোট খাট বইয়ের দোকানের দিকে;
তুমি অন্য!
তোমার মুষ্ঠিতে চেপে ধরা
আমার হাত ছাড়াতে ব্যর্থ হলাম।
তুমি নানান রকম টিপের দিকে
আঙ্গুল তুললে...
আমি বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালাম।
পর পর লিপিষ্টিক, নেইল পলিশ, অন্যান্য
সাজ সরাঞ্জামের দিকে ইঙ্গিত করলে...
আমি ঝটকা মেরে ছারিয়ে নিলাম
তোমার বিশাল হাতের মধ্য থেকে
লিক লিকে লম্বা আঙ্গুল গুলো
হন্নে হয়ে আমাকে খুঁজছ !
পিপাসায় হাতে তুলে নিয়েছো
চপ বিক্রেতার ড্রামের উপরে রাখা
একাধিক জনের অধর ছোঁয়ানো
স্টিলের তেল চিট চিটে
পানি ভর্তি গ্লাস।
তোমার যুগল অধর পানিকে আলিঙ্গনে
অদম্য আগ্রহী..
ঠিক প্রথম চুম্বন মুহূর্তের মত।
হঠাৎ পেছন থেকে কাধে হাত পরায়
চমকে বিষম খেয়ে বসলে।
আমি তোমার মাথায় হালকা করে
তিনটি চাপর দিয়ে আদী যুগী
দাদী নানীদের মত বললামÑ সাট সাট।
কাজ হলো না, অবস্থা বেগতিক!
তোমাকে দাড় করিয়ে পিঠে
হাত বুলিয়ে আবারো বললামÑ সাট সাট।
শুনেছি এরকম করলে এবং এই শব্দ বললে
কেউ বিষম খেলে সেরে যায়।
তোমার চোখ দুটো লাল; টলমল জল!
চায়ের টংয়ে মাচালে পাশাপাশি বসে,
বিস্কিটের প্যাকেটের ফাঁক দিয়ে
২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ বাল্বের ঘোলাটে
হলদে আলো এসে পরেছে
আমার ডান চোখের কোনের
তিল টির উপরে।
লুকিয়ে তুমি বার বার আমায় দেখছো..
আমি বুঝেও না বোঝার ভানে রত।
চায়ের দাম চুকিয়ে ফিরে এসে
দেখি তুমি নেই!
আমি জানি ৯টায় পুতুল নাচের
২য় শো শুরু হলে তুমি ঠিকি
পাশে থাকবে।
অপেক্ষা করলাম, পাশে তুমি নেই!!
দুটো বাচ্চাকে টিকেট দিয়ে
সিদ্ধান্ত নিলা পুরো মেলা
একাই ঘুরে দেখবো।
হঠাৎ কোত্থেকে কাধে কাধ মিলিয়ে
চলতে শুরু করলে!!
এক সময় তোমার ডান হাত
আমার মৃত ও নিথর বাম হাত
চেপে ধরে বার বার বলাÑ
‘আমার হাতের উপর পৃষ্ঠে
তোমার আঙুল গুলো একটি বার
হেলিয়ে দাওনা প্লিজ !
বিরক্তিতে মৃত হাত থেকে
সরে গেল জীবিত হাত।
গোল হয়ে বসা কিছু
মানুষের দিকে এগুচ্ছিলাম।
ওদের মুখ থেকে ধোওয়ার কুন্ডুলী
নির্গত হচ্ছিল।
আবারো নির্লজ্যের মত শক্ত করে
আমার হাত ধরলে!
আমি বড় বড় চোখে তোমার দিকে তাঁকাতেই..
তুমিও কড়া চোখে ডানে বামে
মাথা নাড়লে শব্দহীন।
কিছুটা অবাক হলাম তোমার কর্তৃত্বে!!
প্রশ্ন করলে...
বাড়ি যাবে না ? ঘুমোবে না ?
উত্তরে...
আজ আমার ঘুম পালানো রাত।
আমার চোখ বন্ধ তোমার নির্দেশে।
কিছু অনুভব করছিলাম,
চোখ খুলে হাত ভর্তি নানান রঙের
কাচের চুড়ি দেখে..
তোমার চোখে চোখ রেখে
অধর দুটো ডানে বামে প্রসারিত করলাম।
তুমি আমার হাসি দেখে ছোট বাচ্চাদের
কান্না শেষে যেমন দীর্ঘশ্বাসে ফুঁপিয়ে ওঠে,
তেমন ফুপিয়ে উঠলে।
সামনে এগিয়ে দিলে নির্মলেন্দু গুণের
‘প্রেমের কবিতা গুচ্ছ’।
আমার উচ্চারিত..
লজ্জ্বা, শরম একটু কম’ শব্দ গুচ্ছে
তুমি ভ্রু কুচকিয়ে বললেÑ
মানে?
- নির্মলের।
পড়েছো নাকি?
-হু।
সব গুলো কবিতা?
-কয়েকটা কবিতা, তাতেই বুঝেছি
উনার লজ্জ্বার মাত্রা।
তবে মনে ধরেছে উনার উপেক্ষা, প্রশ্নাবলী,
ফুলদানী, ভয়, মানুষ, পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু
কবিতা গুলো।
.আর আমাকে?
-লিখালিখির বিশেষ উপকরণ হিসেবে।
আমাকে ভালোবাসো না ?
-অন্য সব মানুষের মতই।
সবাই আর আমি.....?
- প্রতিটি মানুষই আমার লেখার উপকরণ।
অতশত বুঝিনা..তুমি আমার কবে হবে?
-সবাই আমার, আমি সবার নই, আমি কেবল
আমারই।
‘জানি কল্পনা ভর করায়
ঘুম পালিয়েছে।
আর এমন ঘুম পালানো রাতেও
আমি ঘুমোতে চাই।
তাইতো কুপি নিভিয়ে, ডায়রি বন্ধ করলাম।
আঙ্গুলের খাঁজ থেকে
কলমকে ছুরে দিলাম
হাতের কাছে থেকে অনেক দূরে !
নাইস
Reply