তুমিই আমার বিজয়
সুমন আহমেদ
বাবা নেই ভাবতেই এলোমেলো হয়ে যাই আমার পুরো পৃথিবী,
আজ কতদিন দেখিনা আমার আকাশে তোমার প্রতিচ্ছবি।
বাবা তুমি নেই- তবুও তুমি আছো বিজয়ের লাল-সবুজের চিত্রে-
বাংলার আকাশে-বাতাসে বঙ্গ মানব দেহের শিরা-উপশিরা
বিন্দু-বিন্দু রক্তকণিকায়- বিজয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে।
বড্ড বেশি ভালোবাসতে দেশকে; তাইতো দেশও দেশের
মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছো...
জানো বাবা, সাদা শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে মা আজও কাঁদেন,
জানি তুমি ফিরবে না; তবুও নিরাশার বালুচরে আশার প্রদীপ
জ্বালিয়ে তোমার ফেরার মিথ্যে আয়োজনে দীর্ঘ প্রতীক্ষার
বাঁধ ভাঙেন রোজ; বাবা, তুমি আমার গর্ব; তুমিই আমার বিজয়।
মানচিত্র
সোহেল রানা
যদি ভালোবাসতে চাও
ভালোবাসো সবুজ;
যদি ভালোবাসতে চাও
ভালোবাসো লাল;
যদি ভালোবাসতে চাও
ভালোবাসো লালে লাল আর সবুজে সবুজ।
তাহলে পেয়ে যাবে অজস্র ভালোবাসার সমাহার:
সবুজ বৃক্ষ, সবুজ তৃণ, সবুজ সুশীতল
লাল কৃষ্ণচূড়া-লাল গোলাপ-লাল জবা
পেয়ে যাবে এদের মতো যারা-
তোমার অজস্র ভালোবাসার সমাহার,
ভালোবাসার সাগর আর ভালোবাসার প্রশান্তি।
আর যদি নিজেকে ভালোবাসার আগুনে ঝালিয়ে নিতে চাও
ভালোবাসা খাঁটি গৌরবান্বিত করতে চাও
তাহলে ভালোবাসো বাংলার আকাশের রক্তিম সূর্য!
বাংলার মানচিত্র- বাংলার লাল সবুজ পতাকা-
তাহলে পেয়ে যাবে বাংলার জনক-জননী, ভাই-বোন
প্রেমিক আর প্রেমিকার গৌরবমন্ডিত ভালোবাসা।
তোমার ভালোবাসা শহীদের রক্তের আগুনে পুড়ে খাঁটি হবে !
তোমার ভালোবাসা গৌরবের হবে !
তোমার ভালোবাসা প্রশন্ত হবে !
তোমার ভালোবাসা অম্লান হবে।
ষোলোই ডিসেম্বর
শরিফুল ইসলাম
বিজয় মানেই অট্টহাসির মুখ বাঁকা ঐ সুখ,
বিজয় মানেই তোমার প্রেমের মন ব্যামো ঐ রোগ!
বিজয় মানেই মন কাড়া ঐ নোটন নোটন ছড়া,
বিজয় মানেই মুখের কথায় নতুন স্বপ্ন গড়া।
বিজয় মানেই রাজ্যসভায় আমরা সবাই রাজা,
বিজয় মানেই রুক্ষ সমাজ নেই তো কোনো প্রজা,
বিজয় মানেই রক্ত হলির একাত্তুরে কবর,
বিজয় মানেই স্বাধীন দেশের ষোলোই ডিসেম্বর।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি
মোজাম্মেল সুমন
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি মুয়াজ্জিনের মুগ্ধকরা সুমধুর সুরের তালে,
কিংবা বিজয় দেখি সকালের সূর্যের আলোতে যখন ছোঁয় বাঙলা মায়ের গালে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি শঙ্খের ধ্বনিতে যার ধ্যান, চৈতন্য, আনন্দ আছে,
কিংবা বিজয় দেখি পবিত্রতার নীরব প্রার্থনাতে যা পৌঁছে দেয় মহান ¯্রষ্টার কাছে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি সোঁদামাটিতে মোহনিয়া ঘ্রাণময় পল্লী গাঁয়ে,
কিংবা বিজয় দেখি কিশোরীর হাতের মেহেদিতে আর আলতা রাঙা দুটি পায়ে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি দালানকোঠায় সুসজ্জিত ব্যস্ত সমস্ত শহরে,
কিংবা বিজয় দেখি কলকারখানার কর্মীদের শ্রমের পরেও বিশ্রাম পহরে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি লাউয়ের ডগায়, বাঁশঝাড়ে, মাছভরা পুকুরে,
কিংবা বিজয় দেখি রাখালের বাঁশির সুরে উদাসকরা রোদেলা দুপুরে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি খালেবিলে নদনদীতে ধ্যানী বকের সারিতে,
কিংবা বিজয় দেখি ভাওয়াইয়া গানের তালে ছুটেচলা মহিষের গাড়িতে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি শিশুকিশোরের প্রাণখোলা হাসির মায়াতে,
কিংবা বিজয় দেখি মাঝির বৈঠা হাতে নৌকার প্রতিচ্ছবি জলের ছায়াতে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয়দেখি সবুজ অরণ্যে পাখপাখালির কলতান সভায়,
কিংবা বিজয় দেখি কলমিশাকে, শাপলাফুলে, রজনীগন্ধায় আর জবায় ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি কৃষকের প্রিয় একজোড়া লাল গরুর মাঝে,
কিংবা বিজয় দেখি কাদামাখা দেহে লাঙল জোয়াল নিয়ে ফিরতে সাঁঝে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি লাল সবুজের পতাকা ওরে যখন আকাশে,
কিংবা বিজয় দেখি শীতে গ্রীষ্মে বর্ষায় শরতে হেমন্তে আর বসন্তের বাতাসে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি রাজপথের স্লোগানে বাংলা বর্ণমালায়,
কিংবা বিজয় দেখি প্রতিটি গৃহে, শিক্ষালয়ে, কর্মালয়ে আর ধর্মশালায় ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি মা-বাবা আর ভাইবোনের মায়া মমতায়,
কিংবা বিজয় দেখি গণতন্ত্রের সংবিধানেতে সরকার ও জনগণের ক্ষমতায় ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ পদ্যে,
কিংবা বিজয় দেখি সহজসুন্দর বাঙালিদের সহজসরল জীবনের গদ্যে ।
আমি স্বাধীনতার বিজয় দেখি শহিদদের জন্যে ডিসেম্বরের ষোল তারিখে,
কিংবা বিজয় দেখি বিশ্ব যখন বাঙালিদেরকে ভালোবাসে শ্রদ্ধায়, তারিফে ।