পৌষের শীতার্ত আবহাওয়া
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
বাতাসের প্রবাহমান ¯্রােত
ক্রমাগত হিম দেহে
রক্তের নিস্তেজ অনুভব।
সূর্য আলো ছড়ায়নি সকাল দুপুর
গোয়ালে গরু জাবর কাটছে
খোয়ারে মোরগ মুরগী ঝিমুচ্ছে
কৃষক খড় কুটার প্রজ্জ্বলিত আগুনে
হিম দেহে উষ্ণতা আনছে।
আহ!
পৌষের এ শীতার্ত আবহাওয়া
স্থবির করেছে কত খেটে খাওয়া মানুষের
রুজি রোজগার।
চারদিকে কুয়াশা ঘেরা রাস্তা ঘাট
হাট বাজার ফসলী মাঠ। চোখে বেমালুম
দিগন্তের শেষ প্রান্ত...
বির্বণ শীতের সকাল
রফিকুল ইসলাম
শীত আসে বিবর্ণ হলুদ ঝরা পাতার খামে
প্রকৃতির মাঝে চুপিসারে হিমবুড়ি নামে।
টুপটাপ শিশির ঝরা শব্দে আসে কুয়াশার হামাগুড়ি ভোরবেলা,
বাতাসে শীতের শিহরণ কম্পিত আঙ্গুলের
ফাঁকে গরম চায়ের কাপে উড়ে ধোঁয়া।
জাম জারুলের পাতার ফাঁকে চলে
সূর্যের উঁকি ঝুঁকি খেলা,
শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে সোনা রোদে বসে
ঝলমল মুক্তার মেলা।
শিরশির বাতাসে গাছের পাতারা কাঁপে
নীড় ছেড়ে পাখিরা কোলাহলে মাতে,
কনকনে শীতে পাতলা চাদরে কৃষক হাঁটে
কুয়াশাভেজা মাঠের মেঠোপথে।
আড়াআড়ি বাঁধাকপির সারি হুমবুড়ি দিয়ে আছে হলুদ সরষে ক্ষেতের পাশে,
লাউ বরবটি শিম শীতে হয়ে আছে হিম
তাই দেখে ফুলকপি গুলো হাসে।
উঁচু দালানে শহরের মানুষ উষ্ণতা খোঁজে
আড়মোড়া ছেড়ে গরম লেপের ভাঁজে।
ছিন্নমূল মানুষেরা ঠাঁই খোঁজে শীতের রাতে
সল্প কাপড়ে গুটিসুটি শুয়ে ফুটপাতে।
সূর্য ওঠার প্রতিক্ষায় এই বুঝি রাত শেষ হয়...
আকাশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে সূর্যের মুখ
রোদে ভরিয়ে দিবে একটু উষ্ণতার সুখ।
শীতের সকালে মাকে মনে পড়ে
মোজাম্মেল সুমন
কার্তিক এবং অগ্রহায়ণ গেছে চলে,
শীত এসেছে ধরায়- রাতের কাঁথা দিচ্ছে বলে ।
আজ সকালে মেসে খাবার খেতে গিয়ে,
‘মা-কে মনে পড়ে’ অশ্রু ঝরে দুচোখ দিয়ে ।
পড়ালেখা ছেড়ে বাইরে কী তোর খেলা?
মনে পড়ে মা-নেওটা সেই মধুর কিশোরবেলা!
শীতের চোটে কুয়াশা যে কান্না করে,
মনে পড়ে আমার মা ভাত রাঁধতেন রান্নাঘরে ।
বাড়ির কথা- মায়ের কথা চোখে ভাসে,
আমি একটা পিঁড়ে টেনে বসতাম আখার পাশে!
ধীরেসুস্থে মা একটু তুষ দিতেন আখায়,
বিষয়টা এই- মা খড়িকে দিয়ে আগুন চাখায়!
আখা থেকে আগুনের তাপ নিতাম হাতে,
শীতের কনকন ঠান্ডার কিছু রেহাই হতো তাতে!
মাটির হাঁড়ি তো বেশ গরম হতে থাকে,
আমি অল্প কথা বলতাম এবং দেখতাম মা-কে!
তুষ ও খড়ির তাপে যখন বলক উঠতো,
আর ঠিক তখন মনে হতো হাঁড়িতে চাল ফুটতো!
মা আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে হাসতো,
ভাতের মাড়ের দারুণ ধোঁয়ার অনুভূতি আসতো!
মাড়ের ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতাম দুচোখ বুজে,
আমার মায়ের ভালোবাসা পেতাম তাতে খুঁজে।
আর এভাবে ভাতরান্না হয়ে যেতো,
এই ছেলেটা সেই সময়ে মায়ের খাবার খেতো।
‘নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম’ মা-কে ছেড়ে,
সময় আমায় এই কুষ্টিয়ায় নিয়েছে যে গেড়ে ।
ভার্সিটিতে পড়ছি বলে থাকছি দূরে,
মা-কে আমার মনে পড়ে ভালোবাসার সুরে।
মাগো দোয়া রেখো ইবাদাতের শেষে,
তোমার ছেলে যেনো ভালো মানুষ হয় এই দেশে ।
শীত
আবুল কালাম আজাদ
শীত
ঘন কুয়াশার চাদর
টুপটাপ পাতা ঝরার গান
স্তব্ধ পুকুরের জল
শিরিশের পত্রহীন ডালে বিষন্ন পাখি
প্রকৃতি নির্জীব
সারারাত শিশির পতনের শব্দই
একমাত্র সংগীত
সকালে পাতায় পাতায়, ঘাসের ডগায়
মুক্তোদানা-রোদে ঝিমকিম।
কিন্তু প্রকৃতি পৃকৃতই কি নির্জীব?
ভেতরে তার তুমুল সজীবতা
নিজেকে সাজাবার সংগোপন প্রয়াস নিরবধি
বসন্ত আসবেই
ফুল ফুটবেই
পাখি গাইবেই
প্রেমিক-প্রেমিকারা আনন্দ হিল্লোলে মাতবেই।
শীতকালীন প্রেমিক ঠোঁট
শফিক নহোর
শীত আসলে ঠোঁটের অভ্যন্তরে পাথর ভাঙ্গা হয়
চুইংগামের মতো তুমি মিশ্রিত হও স্বাদে
শিশির বিন্দুর মতো জ্বলে ভোরের দূর্বাঘাসের হৃদয়
পোড়া পোড়া কুয়াশায় জেগে ওঠে শীতকালীন প্রেম।
ঘন-কুয়াশায় বিলি-কেটে চলে পানকৌড়ির মতো ,
সদ্য ফুলকপির মতো বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে থাকে শীতকালীন প্রেমিক ঠোঁট,
নগ্ন পায়ে জড়িয়ে থাকে শিশির ভেজা আদরি মাটি
ঘন-কুয়াশা শীতকালীন প্রেম জোড়া শালিকের মতো রঙিন ।
মর্মভেদী শীতে উষ্ণতা
আফিফ জাহাঙ্গীর আলি
সূর্যালোকে উষ্ণতা মেলেনি
অবয়বজুড়ে কোল্ড ইনজুরি
কী উষ্ণতা পুষো তুমি মর্মভেদী শীতে?
রিরংসার উত্তাপে প্রতিটি রোমকূপ ভিজে উঠে
রাত্রি নামা চোখে অজ¯্র নক্ষত্র ফোটে
রাত্রির গভীরতা ভেদ করে স্বর্গীয় পাঠে
অনাবৃত সমুদ্র আর নদীর জল অবিরল
পুলকিত ঢেউ চিলেকোঠায় একতান
দেহ-মনÑশ্বাস-প্রশ্বানে বারুদ জ্বলা উষ্ণতা!
কুমারটুলির কবিতা
সৌরভ দত্ত
পথের কাছে হেরে বসে আছি
ক্লান্তির রেশ ঠেলতে ঠেলতে
সকালগুলো বিকেল হচ্ছে
তুমি যেন আস্ত একটা সরস্বতী
ছুঁতে চাইছি মৃত্তিকা দেহ-
কুমারটুলি পাড়ায় এখন শীত কমে আসছে
সুকিয়া স্ট্রিটের পুলিশ মিউজিয়ামে
কিংসফোর্ডের গাড়ির চাকা
বই-বোমার প্রো-কৌশল বেশ শিহরিত করে
ইতিহাসের কিনারে নিয়ে যায়
আগ্নিযুগের এই আলম্বন
কাল তেইশে জানুয়ারি
চারিদিকে লেটার প্রেসের কালির গন্ধ...
উত্তম-সুচিত্রার ছবি-
গঙ্গার পাড়ে একটা লাল টকটকে সূর্য
অস্থিরতার প্রতীক সেজে দাঁড়িয়ে
সরু গলির ভিতর দিয়ে গাড়ি ছুটছে
ফেলে আসছি ট্রাম লাইন
পান-বিড়ির দোকানগুলো
স্বপ্নে জাগরুক পান্ডুলিপির নীল খাতা
উড়ছে আমার চৌদিকে...
আমরা তো আর তেমন নই
দিবাকর মন্ডল
শীত সকালে সাতসকালে ধানের ভারা যাচ্ছে কই ?
নলেন গুড়ের গন্ধে ব্যাকুল মনভোমরা ছুটছে কই ?
সবই আছে, সবাই আছে
আমরা তো আর তেমন নই।
শীতের প্রাতে কিম্বা রাতে আগুন-পোহা হচ্ছে কই ?
টুসুর গানে, আমন ধানে গ্রামের পাড়া মাতলো কই ?
সবই আছে,সবাই আছে আমরা তো আর তেমন নই।
শীতের রাতে আর সাঁকরাতে হরেক পিঠের গন্ধ কই ?
নবান্ন গান, মকর পরব আর গাঁয়েতে হচ্ছে কই?
সবই আছে, সবাই আছে---
আমরা তো আর তেমন নই।