শীতকাল








শীতকাল
ওবায়দুল মুন্সী

শীত বাংলা সনের পঞ্চম ঋতু পৌষ ও মাঘ মাস এই দুই মাস মিলে শীতকাল । শীতকাল প্রধানত শুস্ক এবং দিনের তুলনায় রাত বেশি দীর্ঘ হয়। শীতের সাথে পিঠাপুলির রয়েছে গভীর সম্পর্ক। পিঠা ছাড়া গ্রামের শীতকালটাই যেন মাটি মনে হয়। ঘরে ঘরে তখন শীতের পিঠা খাওয়ার ধুম লেগে যায়! শীতকালে এই পিঠাপুলির উৎসবে যোগ দিতে বাপের বাড়িতে জামাইকে নিয়ে আসে মেয়ে। এছাড়া আরও অনেক নতুন কুটুমও আসে। শীতকালে গ্রামের অনেক মা-বাবারা মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে পিঠা বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এখানেও রয়েছে উৎসবের একটা দারুণ ব্যাপার। অনেকসময় ঋতুর পরিবর্তনে আমাদের দেশেও শীত দেরিতে আসে। কখনো শীত খুব একটা বুঝা যায় না এটা অনেকেই বলেছেন।
কথায় আছে-‘শীত এলেই বাঘ পালায়!’ সত্যিই এবছর শীতের শুরুটা খুবই প্রকট। ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন হারে নেমেছে। তাই গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড শীত ঝেকে বসেছে।
গ্রামবাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির যত আয়োজন রয়েছে তার বেশিরভাগ আয়োজিত হয় শীতের রাতেই। শীত মানেই উৎসব! রাতভর যাত্রা পালা ছিল গ্রামের মানুষের সবচেয়ে সেরা বিনোদন। কালের বিবর্তনে সেটাও হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামে এখন খুব একটা যাত্রাপালা হয় না বললেই চলে।

শীতের সাথে খেজুর রসের এক অপূর্ব যোগাযোগ আছে! খেজুর বৃক্ষাঞ্চলে দুরন্ত কিশোরেরা চুরি করে গাছ বেয়ে হাড়িতে পাঠকাটি ডুবিয়ে রস পান করতো। আহ! কী মধুময় সেই সময়টা। আমারও ইচ্ছে হয় কিন্তু চাইলেই কি সেই সময় আর ফিরে পাবো?
ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের সবার বাড়িতে পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালি তৈরির প্রতিযোগিতা হতো। খেজুর রসে তৈরি হয় নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও বালি গুড়। আজ সেই খেজুর রসও খুব একটা নেই।

শীতকাল এলেই শহরে চলে বানিজ্যমেলা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহরে শীতকাল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। একদিকে শহরের বিত্তশালীদের নানা আনন্দ আর অন্যদিকে গরীব মানুষের নিদারুণ কষ্ট থাকে এই শীতে। শীতের দাপটে যবুথবু হয়ে যায় পথশিশুর দল। শীতকাল এলেই একটি গরম কম্বলের স্বপ্ন দেখে শীতার্ত ভাসমান মানুষগুলো। সমাজের বিত্তবানদের উচিত শীতার্ত ভাসমান মানুষের হাতে একটি গরম কম্বল তুলে দেওয়া।

শীতসন্ধ্যায় শহরের কফিশপ কিংবা গাঁয়ের হাটে চায়ের দোকানে চা-কফির ফাঁকে জমিয়ে আড্ডা দেয় আড্ডাবাজেরা। এছাড়া শীতসকালে রোদপোহানো আর রাতে আগুন থাবানো খুবই আরামদায়ক।
প্রচন্ড শীতের কারণে অনেকসময় বিভিন্ন রোগাক্রমণ ঘটে। একারণে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আসা এই শীত, সব প্রকৃতিকে করে দেয় নিরাভরণ।
কাব্যিক ভাষায়-‘শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন
                       আমলকীর ওই ডালে ডালে
                       পাতাগুলো শিরশিরিয়ে
                       ঝরিয়ে দিল তালে তালে।’
তাই শীত এলে গাছের সবগুলো পাতা ঝরে পড়ে, প্রকৃতি হয়ে যায় বিবর্ণ। মনে হয় প্রকৃতি যেন কোনো এক যাদুর কাঠির স্পর্শে ঘুমিয়ে আছে।











শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট