এইসব আধারের নৈঋত




এইসব আধারের নৈঋত
নৃ মাসুদ রানা

জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েই সোজাসুজি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে হাজির। পরিচিত কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। মুখটা চুপসে বিবর্ণমুখ। কপালে বুঝি একটা বিড়িও জুটবে না।
পকেটে টাকা নেই। চায়ের দোকানে বসে শুধু এদিকসেদিক তাকাচ্ছে। যদি পরিচিত কাউকে পাওয়া যায়। দোকানে অল্পবয়সী এক ছেলে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার আব্বায় কই গেছে? দোহানে আয়ে নাই?’
আব্বায় তো খাইতে গেছে। আইয়া পড়বো। কিছু লাগবো? আমারে বলেন।
দুপুর বিকেলের মাঝামাঝি। দূর থেকেই বলে উঠলো – ওস্তাদ নাকি? কখন আইলেন?
হ রে মজনু, আমিই। তোর পোলাই কইলো তুই নাকি খাইতে গেছোস।
হ ওস্তাদ। খাওনের পর চোখটা লেগে আইছিলো। সেজন্য একটু...।
তা ওস্তাদ বাসায় গেছিলেন নাকি? ভাবি একদিন আইছিল কিছু ট্যাহা লইয়া গেছে।
নারে মজনু। এখনো যাই নাই। পকেট খালি একটা বিড়িও...।
বিড়ি ধরিয়েই হাঁকিয়ে টানতে শুরু করলো। মজনু মিয়া বিড়ি টানা দেখে হা করে চেয়ে দেখছে।
কি রে মজনু! কি দেখছিস?
না ওস্তাদ। কিছুই না। অনেকদিন অইলো আপনারে বিড়ি টানতে দেহি না।
আর কইস না। নেশা লাগছে। জব্বর নেশা লাগছে।
ওস্তাদ! আর কিছুর নেশা লাগছেনি।
হ, মনের কথাডাই কাইড়া নিলি। অনেকদিন খিদা লাগছে। পরানডায় খুব চাইতেছে।
মজনুর ফোন বাজছে। ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না...
কেডায় ফোন দিছেরে মজনু?
ওস্তাদ আপনে চিনবেন না। পোলাডা নতুন। কাজকামে খুবই ভালা। মরতুজের গ্যারেজে থাকে। বাস চালায়।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে। ওপাশ থেকে বলছে
আইজকা কড়া একটা মাল পাইছি ওস্তাদ। নাদুসনুদুস গোলগাল দেখতে। কচি বয়স। সেইরহম অইবে।
কি কস! কথা সত্যি? এতো ভালা খবর।
হ ওস্তাদ! একদম হাঁচা কথা। আপনে দেখলে মেলা খুশি হইবেন।
কোত্থেকে আনছোস? কেউ দ্যাহে নাইতো।
না ওস্তাদ। কেউ দ্যাহে নাই। মুখ চেপে ধরে আনছি।
চিল্লায় নাই?
হ, খুব চিল্লাচিল্লি লাফালাফি করছিল। পরে গামছা দিয়ে চোখমুখ বাইন্ধা...। আমাগোর লগে কি আর পারবোনি (হেসে হেসে)?
তোরা কাজ সারছোস?
লাল্টু শুরু করতে নিছিলো ধমক দিয়া থামাইয়া রাখছি। আমি বলছি আগে ওস্তাদ, তারপরে আমরা। না কিতা কন ওস্তাদ?
হ, ঠিক কথাই কইছোস।
তাইলে ওস্তাদ আপনের পাওনের টেহা...
ঠিক আছে। আর দিতে অইবো তোকে। কি খুশিতো?
হ, ওস্তাদ। খুশি মেলা খুশি অইলাম।
কথা বলা শেষ। মজনু আরেকটি বিড়ি ধরাইয়া রহিমের হাতে দিলো। মজনু নিজেও একটি বিড়ি ধরিয়ে হাঁকিয়ে টানতে শুরু করলো।
কি রে মজনু? কোন খবর আছেনি?
হ ওস্তাদ। আপনের কপালডা খুবই ভালা। মেলাদিন পরে একটা পাখি পাইছি। খেয়েদেয়ে তারপর বাসার দিকে রওনা দিয়েন। না কি কন ওস্তাদ?
হ, এতোদিন পরে সুযোগটা হাত ছাড়া করা উছিত অইবো না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে কিছুটা রাত। গ্যারেজের দিকে হাঁটছে দুইজন। কথা জমেছে বেশ। হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
গ্যারেজের পিছনে পরিত্যক্ত একটি টিনের ঘর। টায়ার, গাড়ির এটাসেটা দিয়ে ভরা। তালা খুলেই মজনু মিয়া বলতে শুরু করলো – ওস্তাদ! আপনিই আগে মজা লইয়া আহেন। পরে আমরা যাবো। না কি কস লাল্টু।
হ, ওস্তাদ। ঠিকই কইছেন।
সুইচ টিপে লাইটটা জ্বালালো। মেয়েটি গুটিসুটি হয়ে টায়ারের পিছনে চুপটি করে বসে আছে। চোখ ভিজে ভিজে অশ্রু ফোঁটা বেঁয়ে বেঁয়ে পড়ছে। হঠাৎ আলোর কারণে চমকে উঠলো সে। ভয়ে আরও গুটিসুটি হয়ে বসে রইলো। বুক ধড়ফড় করছে। হাতপা কেঁপে কেঁপে উঠছে মেয়েটির।
শামসু টায়ার সড়িয়ে মেয়েটিকে ধরতেই সে মোচড়ামুচড়ি করতে শুরু করলো। চুল দিয়ে ডাকা মুখখানি তখনো চোখে পরেনি শামসুর। সে ধস্তাধস্তি জাবরদস্তি করে গামছা খোলা মাত্রই মেয়েটি চিৎকার করে উঠলো। শামসু মেয়েটির মুখ চেপে ধরতেই মেয়েটি বলে উঠলো - বাবা তুমি।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট