এই শহরে
আহমাদ সোলায়মান
এই শহরের প্রেম বাঁচে না প্রসবকালেই মৃত্যু হয়
এই শহরের অন্ধকারে রাত্রিগুলোর করুণ ভয়
এই শহরের উচু দালান হৃদয়গুলো করছে জয়
এই শহরের মানুষ যারা সবাই গভীর পরাজয়।
এই শহরের নিয়ন বাতি ঠিক হৃদয়ের অনুরূপ
এই শহরের কুকুরগুলো রাত্রি হলেও থাকে চুপ।
এই শহরের প্রেমিক বুকে স্মৃতি পঁচার গন্ধ খুব
এই শহরের ঠোঁটে ঠোঁটে পাতা আছে মৃত্যু টুপ।
এই শহরের শব্দগুলো বুক ফাঁটানো কথা কয়
এই শহরের আলো-বাতাস মহামারির বন্ধু হয়
এই শহরের অন্তরের লাশ রাস্তাঘাটে পড়ে রয়
এই শহরের রাত্রিগুলো লক্ষ তারার বন্ধু নয়।
এই শহরের এমন দশা খুব পুরনো এমন নয়
যখন তুমি বদলে গেছো তখন থেকে এমন হয়।
সম্পর্ক
মো. রাজিব হুমায়ুন
সম্পর্কে অনেক দ্রুত পচন ধরে যায়।
খুব সহজে পতিত হয় ঝরা ফুলের মতো,
পচন রোধে সম্পর্কে ফরমালিন ছিঁটায় কেউ কেউ!
ফরমালিন যুক্ত সব সম্পর্ক সতেজ হয়
এই টাটকা সম্পর্কে-
আড়াল থেকে বিষিয়ে তুলে সর্পাঘাত।
তাই সম্পর্কটা চাই-
ফরমালিন মুক্ত তাজা হৃদয়ের বন্ধনে বাঁধা সম্পর্ক।
আরতি ভেঙেছে রণে
মাহতাব উদ্দিন
আকাশের বিয়ে আজ
চারিদিকে দেখি সাজ
চাঁদ বর সাজে
বাজে বীণ বাজে
যাবো সেথা ফেলে কাজ।
নিভৃতে উদলা পায়ে
চলে যাই দূর গাঁয়ে
নিখিলের পানে
চারুতার টানে
চলি সততার নায়ে।
বাহারি হিজলবনে
হরিতের আবরণে
শতফুল ফোটে
মধুকর ছোটে
আরতি ভেঙেছে রণে।
মালিকানা
সুস্মিতা ঘোষ
কিছু স্মৃতির গলিতে আবেগের একটা বাড়ি থাকে।
বাইরে একটা প্রায়-প্রয়াত সম্পর্কের রঙচটা নেমপ্লেট,
ঘূণ ধরা দরজার কড়ায় মরচে পড়া তালা ঝুলছে,
উপন্যাস না হয়ে কিছু টুকরো টুকরো গল্প গড়েছে ঘর ।
পলেস্তারা খসা বাড়ির দেওয়াল,
অতীতে কত না সৌন্দর্যে হয়েছিল আশ্রয়।
সুখ-সংসার-পিছুটান অভিজ্ঞতায় জমেছে মাকড়সার জাল ।
দেওয়ালের দক্ষিণে টাঙানো আলোকচিত্র ,
লালচে কমলা সূর্যাস্ত বুকে ঘর ফেরা পাখি দুটো ক্ষণিক স্তব্ধ হল;
যেন সকৌতূহলে চেয়ে আমার চোখের শূণ্যস্থানের দিকে।
উৎসবমুখর কোনো এক সন্ধ্যায় হঠাৎ ফ্ল্যাশব্যাক...
যেন এক গামলা দুধে কেউ ঢেলে দিয়েছে এক বিন্দু গাঢ় নীল রঙ !
সমস্ত বিস্ময় চিহ্ন বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছে,
বাকরুদ্ধ ঠোঁট ক্রিয়াহীন এক পল।
এক নিমেষে চোখের সাদা জলমগ্ন বন্দর,
ঠোঁট ঠেলে তবু হাসির ঢেউ।
স্মৃতির গলিতে বাড়ি কিনে নিঃস্ব হয়েছি,
হয়েছি মালিক প্রয়াত সম্পর্কের, আবেগের।
মুক্তোর বিলাপ
তারানা নাজনীন
ভালোবাসি... ভালোবাসি... তোমাকেই ভালোবাসি...
বিশাল সাগরের বুকে তাইতো ঠাঁই নিয়ে আছি
কতশত বছর ধরে সয়েছি ঝড় জলোচ্ছ্বাস সুনামি
কখনোই ভাবিনি তোমাকে একদিন ছেড়ে যাবো আমি।
হঠাৎ করেই এক মাঝির জালে জড়িয়ে গেলাম
নাম না জানা মাছের ভীড়ে নিজেকে খুঁজে পেলাম
চুপটি করে খুব যতনে
আমাকে রেখে দিলো মাঝি অতি গোপনে।
প্রতিদিন প্রতি রাতে, ঝিনুকটি তুলে দুহাতে
মুক্তো আছে জেনেও মাঝি নেয়নি তার প্রাণ
ভাঙ্গেনি তার শক্ত আবরণে ঢাকা খোলসের সান।
মুক্তো হাসিয়া বলে; তবুও সর্বনাশ!
হীরার টুকরো মাঝির কাছে বন্দী বারো মাস।
কথা হোক
অসীম মালিক
কথা হোক,
মাটি-জলে
বীজ-মাটি
ফুল-ফলে।
কথা হোক মুখোমুখি,
মেঘ-রোদ চোখাচুখি।
ডালপালা
দোলাদুলি।
ঝড় এলে
কোলাকুলি।
কথা হোক মাটি মূলে,
ভোর হোক ফুলে ফুলে।
জনে জনে
মনে মনে
দেশ কাল
সীমা ভুলে।
কথা হোক,
পাখি-মনে।
ঘুড়ি সুতো
দুই জনে।
কথা হোক ওড়াউড়ি,
সীমাহীন ঘোরাঘুরি।
ডানা মেলে,
সীমা ভুলে।
পাখি ওড়ে
সুতো ভুলে।
কথা হোক স্বাধীনতা,
মেঘ, রোদ- মানবতা।
ঘুড়ি থেকে
পাখি হয়ে।
ডানা মেলি
ঝড় সয়ে।
কথা হোক,
সাঁঝতারা,
রাতপাখি
শুকতারা।
কথা হোক খেয়াঘাট,
জোছনার মাঠঘাট।
রাতজাগা,
শুকসারি।
লালপরী,
নীলপরী।
কথা হোক জানালায়,
খোলা দু’টি দরজায়।
ঘরে ঘরে,
দোরে দোরে।
রাতজাগা,
পাখি সুরে।
কথা হোক,
ভালবাসা,
হাতে হাত
আলো আশা।
কথা হোক পাশাপাশি,
ভালবাসা হাসাহাসি।
অনুরাগে,
অভিমানে।
ক্ষোভ ভুলে
গানে গানে।
কথা হোক খোলামনে,
পৃথিবীর কোণে কোণে।
বেলিফুলে,
জুঁই ফুলে।
কথা হোক
মাটি-মূলে।
ওরা ভেজে বৃষ্টিদিনে
সাদিক আল আমিন
সমূহ বৃষ্টির উপগান নিয়ে লিখছি কবিতা
আর ভিজে যাচ্ছে আমার শুকনো পাতাদের শরীর
ওরা বলতে চেয়েও পারছে না বলতে কোনো লুকোনো গোপন
অথবা কোনো ছেড়ে আসা জলপদ্মের আত্মগ্লানি
ওরা শুধুই ভিজতে থাকে কাকভেজা বৃষ্টিদুপুরে
মুছে ফেলতে থাকে ঘোর অনুতপ্ততার অভিশাপ
কেবল জড়াতে থাকে দেহে মেঘশিলা অথবা কোনো
অবহেলায় পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার হিম-লাল
বৃষ্টির উপগান লিখে লিখেই
ভিজছে আমার হলুদ খড়, গলে যাওয়া জৈব-গবর
ভিজছে বাঁশঝাড়, শীর্ণ পাটকাঠি, খড়িঘর, নড়বড়ে মাচাঙ
ওরা সবাই ভিজছে লুকিয়ে লুকিয়ে, চাইছে হতে
কচুপাতা, কলাপাতার মতো; যাতে
দুঃখ ঝেড়ে ফেলা যায়...
আমি কি কখনো চেয়েছি দুঃখ ঝেড়ে ফেলতে?
বৃষ্টিধারা সব লুকিয়ে বলে তোমার কানে কানে
বোনের ঘরে সিঁদ কেটেছি
কামাল আহমেদ
আর কোনদিন বলিস্ না মা করতে গোসল;
তুইনা যদি পুত হবি।
তোর প্রশ্রয়েই সাদা হাতে কালি মেখেছি,
লক্ষ বোনের যোনিঘরে সিঁদ কেটেছি!
-সে কালি আর মুছব না;
তুই যদি মা মোড়লিপনার লোভ-না ছাড়িস্।
যোনি চোরের লালন করে লাভ কি রে তোর?
তুই না রোজ স্বপ্ন দেখাস্ আকাশজুড়ে ডানা মেলে,
সাত সমুদ্দুর সেতু বেঁধে,
আঁধার পথে আলো জ্বেলে ?
উড়তে আমি চাইনা মা আর
ডিঙ্গিতেই সাগর দেবো পাড়ি
এমন আলোর চেয়ে কালোই ভালো।
দোহাই মা তোর, কালিমাখা হাত কেটে নে...
এহাত আমার রাখবোনা !
ঘেন্না লাগে আপন কাজে!
সিঁদ কেটেছি! ছি !!
দিনের আলোয় কেমন করে মুখটা দেখাই? ছি !!!