ঝুমুর, ঘুম ও হাসি আপা
সাকিব শাকিল
অসংখ্য বাজনা বাজে ঘুমের ভেতর। ঝুম ঝুম ঝুম, বাজনা নাকি বৃষ্টি বুঝতে পারি না। কবরের কান্নাও কি বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে? যেদিন হাসি আপার লাশ আসলো মোহনপুর থেকে সেদিনও এমন বৃষ্টি। আজও কি কোনো পৃথিবীর হাসি আপাকে হত্যা করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কচুরিপানার পুকুরে? আমার ঘুমের বিছানা তাই পুকুর হয়ে যায়। আর ঘুমগুলো ভাসতে থাকে কচুরিপানা হয়ে কিংবা হাসি আপা হয়ে। ঘুমের ভেতর ভাসতে থাকি আমি। কবরের কান্নার মতোন- ঝুম ঝুম বাজনা বাজে। অসংখ্য বাজনা বাজে ঝুম ঝুমের ভেতর...
নুপুর কিংবা ঝুমুরের বাজনার ভেতর আমার এ ঘর হয়ে যায় হাজেরা মঞ্জিল। যার সামনে একটি পুকুর, আর তার ভেতরে ঘুমিয়ে আছে আমার ঘুম, হাসি আপার ঘুম, মৃত মানুষের ঘুম। নৃত্য শুরু হয় হাজেরা মঞ্জিলে। অসংখ্য শব্দের ভেতর ঝুমুরটা ঝুম ঝুম বাজতে থাকে। যেন পৃথিবীতে আর কোনো শব্দ নাই আর কোনো কথা নাই শুধু বাজনা আর বাজনা। ঝুম ঝুম ঝুম ঝুম।
সকলেই নেচে যায় ঝুমুরের তালে তালে। আমাকে ঘিরে ফেলে সকলের নৃত্য। কেন্দ্রীভূত হয়ে যাই এই নৃত্যদলের মাঝে। মাথা টলতে থাকে শব্দে শব্দে। আমার মাথা কি শব্দ হয়ে গেছে নাকি ঝুমুরটা আমার মাথা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারি না।
প্রচন্ড ভয়ে আমি ঢুকে যাই হাসি আপার কবরে, হাসি আপা হাসতে থাকে শুধু হাসতে থাকে।
আর দূরে চলে যাওয়া চিৎকারের মতো ঝুমুরের শব্দটাও নাই হয়ে যায়।
হাজেরা মঞ্জিলে কিংবা হাসি আপার কবরে আমি একা পড়ে থাকি। চারদিকে নিরন্ন অন্ধকার আর অন্ধকার। যেসব অন্ধকারে চোর পালানো খেলতে খেলতে শিল্পী আপা হারিয়ে ফেলেছিলো তার শৈশব তেমন এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছি আমি।
নৃত্য অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে বহুবছর আগে। অনেক নৃত্যের অংশ পড়ে আছে মাটিতে, মঞ্জিলের দেয়ালে দেয়ালে, হাওয়ায় ভাসছে নৃত্য ও শব্দঝুমুর। ঘুমগুলোও ভাসতে থাকে কচুরিপানা হয়ে কিংবা আমাদের হাসি আপা হয়ে।
সিরাজগঞ্জ