মুখোমুখি
মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী
মৈনাককে বহুবার এড়িয়ে গেছে মৃদুলা তবুও মৈনাকের এক জেদ- কেন নয় !
মৃদুলা ওকে বুঝিয়েছে জীবনটা ছেলেখেলা নয়। ওর চ্যালেঞ্জটা একটু অন্য রকমের। সেখানে কাউকে সে জড়াতে চায় না। মৃদুলা মৈনাক এক ব্রাঞ্চে প্রায় এক বছর হল একসাথে কাজ করছে। দুজনেই সমবয়সী।
মিল্কশেকে চুমুক দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে মৈনাককে আজ সবকিছু খুলে বলতে শুরু করল মৃদুলা-
“আমার যখন চার বছর বয়স তখন মা লক্ষ্য করেন আমি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছি। দিনের অনেকটা সময় বিছানা আঁকড়ে থাকছি। তারপর একদিন মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ডাক্তারের নির্দেশ মত নানা টেস্ট করে জানা যায় আমি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ কয়েক মাস আমার স্কুল বন্ধ হলো তবে ছবি আঁকা, পড়াশুনো, গান সব কিছুই মার কাছ থেকে শিখতে থাকলাম।
কয়েক বছর পর আমাদের ঘরে বোন এলো । ডাক্তারের নির্দেশেই আমার বোনের পৃথিবীতে আসা। ডক্টর বলেছিলেন দ্বিতীয় সন্তান সুস্থ হয়ে পৃথিবীতে এলে এনগ্র্যাফ্ট করবেন ।
মৈনাক কৌতূহলে প্রশ্ন করে,
“এনগ্র্যাফ্ট মানে ?”
“ যাকে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলে।
মা প্রেগনেন্ট হলে নানা পরীক্ষা করা হয় , জানা যায় গর্ভে সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ। পরিবারের সবার চোখে তখন আশার আলোর ঝিলিক কিন্তু কোন কারণে কোথাও কোন ভুল থেকে যায় । আমার বোনও থ্যালাসেমিয়া অসুখ নিয়ে জন্মায়। মার সব ইচ্ছা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তবুও লড়াইয়ে মা থেমে যেতে শেখে নি কখনও। পাঁচটা স্বাভাবিক সুস্থ মেয়েদের মত মা আমাদের মানুষ করেছেন। সংগ্রাম করতে শিখিয়েছেন। আমরা দুই বোন লেখাপড়ায় জোর দিই, খুব ভালো রেজাল্ট করি, বোন ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়। ওর এ বছর ফাইনাল ইয়ার আর আমার ব্যাপারে তোমার তো অনেকটাই জানা।
মৈনাক কল্পনা করতে পারে নি আজ তাকে এসব শুনতে হবে কিন্তু মৃদুলাকে যে বলতেই হবে। মৃদুলা আবার শুরু করে,
-তোমার মা বাবার তুমি একটি মাত্র সন্তান। আমি জানি, কিছু নিয়ম মেনে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা বিয়ে করতে পারে কিন্তু আমি তা চাইনা। বলো , আমি কি কিছু ভুল বলছি ?
হাজার চিন্তার সমুদ্রে ক্রমাগত ডুবতে থাকে মৈনাক। ভেঙে খানখান হতে থাকে। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় মৃদুলার।
-কি হলো মৈনাক, এই খেজুর-কফি মিল্কশেক তোমার তো খুব পছন্দের তাই জন্যই তো অর্ডার করেছি , নিচ্ছ না যে !’
ধীরে ধীরে গ্লাসটা মুখের কাছে তুলে নেয় মৈনাক কিন্তু খেতে না পেরে অবশেষে নামিয়ে রেখে দেয়।