কাঠগোলাপের পঙক্তিমালা
ফজলুর রহমান
আশ্বিনের মেঘ জানতো তুমি আসবে,
রোদে রোদে কী ভীষণ কানাঘোষা;
জলা-জঙ্গলের রুক্ষ ভাব উবে গিয়ে সেখানে পরিপাটি বাতাসের গীতল আসা-যাওয়া।
তুমি আসবে,
কাঠগোলাপ জানতো কী তা; জানতো কী তোমার মেঘকালো খোঁপা?
দর্জিবাড়ির উঠোন, সেখানে নুইয়ে পড়া মাধবীলতার গুচ্ছরা জেলে কন্যা মালতীর মতো অপেক্ষা করে আজকাল।
খেয়াঘাটের নৌকা; নদীপাড়ের বাড়ন্ত কাশবনের সাথে পত্রালাপের মতো কথা কয়।
ডুমুরডোবা হাওড়ের জলের ঢেউ,
তার সাথে ভেসে আসা নকশি রুমাল তোমার মুখোচ্ছবি ভাসিয়ে আনতো।
হেলে পড়া সূর্য যখন লাল শাড়ি পরা রাঙা বউ;
তখন তুমি কী এসেছিলে নরসুন্দার ঘাটে?
কাঠগোলাপ জানতো কী তা; জানতো কী তোমার মেঘকালো খোঁপা?
পিটপিট জ্যোৎস্না আর আলসেমি চাঁদ কী জানতো তোমার কথা?
শাপলার মতো মুখ যা নীলাভো আকাশকে মনে করিয়ে দ্যায় দূর দেশের ঠিকানা;
অমাবস্যার নদী, ঝিনুকের শঙ্খ জানতো তুমি আসবে।
কাঠগোলাপ জানতো কী তা; জানতো কী তোমার মেঘকালো খোঁপা?
পিতলের থালায় দেখা মুখ,
ঘোড়াউত্তরা নদীতে ভাসা আঁচল যে জলছাপ বুনে দিতো মনে,
সে মন জানতো রেলগাড়ি চেপে আসবে কেউ নরহরি কবিরাজের ভিটিতে।
ঝুঁকে পড়া চাঁপা ফুলের মতো তার দেহের গড়ন।
কাঠগোলাপ জানতো কী তা; জানতো কী তোমার মেঘকালো খোঁপা?
মৃন্ময়ী স্নান
বনশ্রী বড়ুয়া
মৃন্ময় লতায় কচিপাতা সাজ,
দেখেছো আঙুল ছুইয়ে?
কতটা রক্তে নিস্তব্ধতা আসে?
ঘেমে উঠে শিশির নিষিক্ত মাটির ফাঁকে,
পোড়া ধূপের গন্ধে বিষাক্ত ছোবলে
কৃষ্ণচূড়ায় ভাসে কায়া;
ফাগুন ছোঁয়া জলরঙে আঁকে ক্যানভাস,
ঘুমন্ত প্রজাপতি গুমরে কাঁদে;
কুমোরে গড়ে দেবীমূর্তি কামাসক্ত হাত!
ভালবাসার উষ্ণতায় দেবা নটরাজ!
কলাপাতায় মোড়ানো আবেগ,
কিছুটা ভুলে বরফ গলে হয়ে উঠে নিশচুপ নদী;
কাগজের পোটলায় আড়াল খুঁজে
মন খারাপের শহর।
হে প্রিয় অভিমানী
রাসেদুল হাসান রাসেল
হে প্রিয় অভিমানী,
সময় পেলে একটিবার এসো-
তোমাকে,
কাটাবন থেকে বেলি ফুলের মালা কিনে দেবো,
আরো দিবো-
শাহবাগ থেকে টকটকে লাল গোলাপ।
এসো কিন্তু।
তবে,
সময় পেলে।
সব সম্পর্ক ভালোবাসা নয়
অরুণ কুমার ঘড়াই
কথা রাখতে পারার মতো অহংকার সবার মধ্যে আসে না
যে পাখি চিনতে চেয়েছে আকাশটাকে হাজার বিশ্বাসে
তার বুকেও ঝড় ওঠে, নক্ষত্র খসে পড়ে, রাত নামে।
ভরসা প্রতি রাতে স্বপ্ন আঁকতে গিয়ে খালি হাতে ফেরে
হারানো ভুলগুলো উঠে আসে জীবনের কাছাকাছি
যে প্রেম যত বেশি চালাক সে ততো বেশি মর্যাদাহীন।
সম্পর্ককে অন্ধ থেকে উদার হতে দাও তবে সে স্বার্থক
শরীর অচল নদীর মতো মোহানা খুঁজে বেড়ায় নিতম্বে
লোভ তার সীমাহীন সে শুধু পেতে চায় স্বর্গে পারিজাত।
চোখ বন্ধ রেখে দেখি তুমি আগের মতো সহজ সরল
যার পাওয়ার চেয়ে হারানোর ভয় বেশি যন্ত্রণাদায়ক
সে কখনো কাউকে ঠকাতে শেখেনি মরীচিকা যেমন।
ভালোবাসার অস্তিত্ব নিয়ে এখনো বৃষ্টিতে ভিজি, হারাই
সব সম্পর্ক ভালোবাসা না হতে পারুক ক্ষতি নেই
যেন কৃষ্ণের মতো কারোর বিশ্বাস নিয়ে না খেলে।
শারদে শরৎ প্রেম
সাব্বির হোসেন
আমাদের শৈশব কেটেছে শরৎ এর রঙে, শিউলি ফুলের ডাঁটায়। ভোরবেলায় শিউলিতলায় উঁকি দিত শুভ্রতা।
ছেলেবেলার সেই শিউলিতলাকে মাড়িয়ে হেঁটে এসেছি নতুনের দেশে। আজও কি শিউলিতলায় বসা যায়?
পাল্টে গেছে সব। পাল্টে গেছে জীবন। শহর, বন্দর দালানের ভীড়ে পাল্টে গেছে মন। বিলাসিতায় মরে গেছে প্রেমিকের চিঠি, প্রেমিকার হাসি আর ভালোবাসা। এখন প্রেমের মত শরৎ বড্ড ক্ষণস্থায়ী। কারখানার ¤্রমিকের পদতলে মরে যায় শিউলির ঝরে পড়া যৌবন, হারিয়ে যায় পেঁজা তুলোর মতো ফুটফুটে সাদা মেঘ।
কিছু প্রাণ তবুও খুঁজে মরে কাশফুল। আহা শরৎ! তোমার জন্য অপলক পানে চেয়ে বসে থাকা আমার। তুমি শারদ হয়ে ওঠো আমার আত্মায়।
মুছে যাবে অন্ধকার
পেয়ার আহমেদ সুমন
কবিতার ছলে বহুবার আমি
স্বপ্নে বেড়িয়েছি পৃথিবীর বুকে,
মানুষগুলো সব সভ্য- শিষ্ট
নেই কোন হাহাকার -কোলাহল।
কাঁধে কাঁধ রেখে চলছে সবাই
চারদিকে মানবের জয়গান।
জীবনের তাগিদে বহুবার আমি
দিবালোকে হেঁটেছি পৃথিবীর বুকে,
মানুষ গুলো আর মানুষ নেই
পাপের মলাটে আবৃত সমাজ।
বলনে- চলনে নেই কোন মিল
পর সমালোচনায় নিবিষ্ট প্রাণ।
তবুও, আমি ভালোবাসি মানুষ
মানুষের হবে জয়,
মানবতার শিখা জ¦লবে এই ধরায়
মুছে যাবে ঘোর অন্ধকার।