পদাবলি

 

    অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


সবুজ শাড়ির রূপকথা 

অনিন্দিতা মিত্র     


তোর সবুজ রঙের শাড়ির আলোকলতায় জসীমউদ্দীন এঁকেছেন নকশি-কাঁথার কাব্যচিত্র। আনমনা রোদ চা বাগানের সর্পিল গ্রন্থি ছুঁয়ে হাওয়া হয়ে মিলিয়ে যায় তিস্তার জলে, ইলোরার নিপুণ কারুকার্যে নীলাভ রঙ কাজল হয়ে ধরা দেয় তোর চোখে। নক্ষত্রের অনন্ত গর্ভে মুখ গোঁজে সভ্যতা। সম্পর্কহীন সম্পর্কে উষ্ণতা খুঁজে চলে অবুঝ মন। ভালোবাসার অকৃত্রিম আদিম গন্ধে শুদ্ধ হয় পৃথিবী। 



ফেরা হবেনা কোন দিন

আতিক এ রহিম 


কোন একদিন তোমার শহরে বৃষ্টি নামবে 

আমরা দু’জন মুখোমুখি ফুটপাতে বসে টুংটাং চায়ের কাপের 

শব্দের সাথে কথা মিশিয়ে সুখ দুঃখগুলো ভাসিয়ে দিব বৃষ্টির সনে।

শরতের অলস বিকেলটা ঝিমিয়ে পড়বে সারা শহর জুড়ে 

সঙ্গী বিহীন কাকের কর্কশ শব্দে তোলপাড় করে তুলবে বিজন সড়কটা।

অশত্থ গাছের নিচে বসা পাগলি মেয়েটারও একটা স্বপ্ন ছিল 

হয়তো কোন কপটতার ভাণে পড়ে আজ স্বপ্নটা ভাগাড়ে নিমজ্জিত। 

তোমার শহরে বৃষ্টি নামুক অথবা রোদে ঝলসে যাক আমার আর ফেরা হবেনা এই শহরে কোন দিন।


মেঘনার মেয়ে

গোলাম রববানী 


মেঘনার মেয়ে তুমিতো মুঠোর মতো মুক্তির লিফলেট 

তুমিতো বদ্ধঘরের খোলা দরজা জানালার মতো 

খোলা আকাশের মতো- মাঝেমধ্যে মেঘলোক- 

কখনওবা সূর্যে প্রচন্ড প্রখরতা, আবার কখনওবা ভেজা সন্ধেবেলা-ই বৃক্ষপাতায় লেগে থাকা জল

জলেরও আন্তযোগাযোগ- চাঁদের জোছনার আলো। 


যে কবিতা গনগনে আগুনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়

অসমান্তরাল কোনোএক চলমান প্লাটফর্মে

মর্মে মর্মে মূর্তিরূপে হৃদয়দানিতে সুসজ্জিত হয়

একটি পুতুল আরও একটি প্রজাপতি হয়ে 

সে আর কেউ না- মেঘনার মেয়ে 

মন ও মননজুড়ে আছে সেরিব্রামে


মেঘনার মেয়ে তুমি কবিতার মতো চিন্তার দৃশ্য 

সুউচ্চমাত্রার এক মেডিটেশনথ না পাওয়া ধ্যানজ্ঞান 

যাকে বলা হয় প্রেম: চাইছি ভালোবাসার ফ্রেম।



খুব ভালো আছি

মুস্তফা হাবীব 


রাত কতোটা গভীর হলে

সিঁধেল চোরগুলো শাহানশাহ্ হয়ে যায়

হয়ে যায় ঘুমমগ্ন পৃথিবীতে রাজাধিরাজ! 

এখন রাতের সুনসান নীরবতা, 

বাজার সিন্ডিকেট নির্বিঘ্নে কেড়ে নেয় 

মানুষের ক্ষুদ্র সঞ্চয়, বেঁচে থাকার স্বপ্ন ও সাহস। 


রাত শেষে সূর্যে আলো ফুটলেও

রাত ভেবেই বেনেরা সমুদ্রচুরি করে, 

স্বৈরবৃক্ষের ছায়াকে পুঁজি করে লুটপাট করে

কিছু মানুষ গড়ে তোলে অভয় অরণ্য, 

অত:পর ডায়াসে দাঁড়ায় 

সগৌরবে জানান দেয় ‘খুব ভালো আছি’।



ফিরে এসো 

ইউনুছ ইবনে জয়নাল 


ফিরে এসো; ফিরে এসো হৃদয় পাড়ে; এ বাংলায়-

ফিরে এসো জীবনের সৈকতে,

পালের লাগাম দাও কেটে

তরী ভিড়াও ঘাটে হৃদ্যতে।


ফিরে এসো সেখানে- যেখানে

হৃদয়ের স্পন্ধন থেমে গেছে,

অনেক আগে; সেখানে-

নতুন বন্দর গড়ার মানসে।


ফিরে এসো- যেখানে বুনো হাঁস নীড় বেঁধেছে;

শ্বাপদেরা সারা রাত জেগে থাকে,

নক্ষত্রেরা আলো ছড়ায় আপন মনে

ফিরে এসো-  সেই গাঁয়ের বাঁকে।


অবারিত মাঠে ফসলের ক্ষেতে

ফিরে এসো এ বাংলায়,

আমারে অনুভব করিবে যেথায়

ফিরে এসো সেথায়-

এ রূপসীর দেশে জলে কিম্বা ডাঙ্গায়।


আমরা ও রাজপথ

হিলারী হিটলার আভী 


যে রাজপথে সত্যের কলম থাকার কথা 

সেই রাজপথে রয়েছে লাঠি বোমা আর কামান!


যে রাজপথে মনন আলো থাকার কথা 

সেই রাজপথে রয়েছে তীর্যক মশাল আর শ্লোগান! 

যে রাজপথে স্নেহ মমতা আর অমোঘ প্রেম থাকার কথা 

সেই রাজপথে রয়েছে রক্তশোষক সুদখোর ঘুষখোর আর দালাল!


যে রাজপথে ফুল পাখি আর ইথার-পা থাকার কথা 

সেই রাজপথে রয়েছে সাইরেন রক্তমাখা বুট আর অত্যাধুনিক ব্যারিকেড!

যে রাজপথে স্বর্গীয় হাসি আর হাসি থাকার কথা 

সেই রাজপথে রয়েছে নির্মম ফাঁসি আর ফাঁসি!


যে রাজপথে শুধু রাজা আর প্রজা থাকার কথা 

সেই রাজপথে রাজাও নেই প্রজাও নেই 

রয়েছে শুধু আমার তোমার ও তার অসীম ব্যথা!

অর্থাৎ আমরা রাজা ও প্রজার আদর্শ আসন থেকে হাজার বছর ধরে বিচ্যুতি...!




ভালোবাসার বিচ্যুতি

আশরাফ চঞ্চল


জীবনের সর্বস্ব দিয়ে যাকে ভালোবাসলাম

চরণতলে বিছিয়ে দিলাম নৈবেদ্যের ফুল

সে যখন আমার দিকে তাক করে রাখে

বিষমাখা তীর আর নানা ফন্দি ফিকির

ঘায়েল করার চক্রান্তে থাকে বিভোর

তখন খুবই খারাপ লাগে-


যাকে সুখে রাখতে যেয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলি

যার মুখে খাবার জোটাতে নিজে না খেয়ে থাকি

যার ভালো পোশাক কিনতে দামি মার্কেটে যাই

সে আমার পোশাক দেখে যখন নাক সিটকায়

তখন খুবই খারাপ লাগে-


যার একটু অসুখ হলেই দিশেহারা হয়ে যাই

পাগলের মতো হাসপাতালে দৌড়াই

নিজ শরীরে হাজারো অসুখ রেখে

সুস্থ থাকার ভাণ করি

সে যখন আমার মৃত্যু কামনা করে

তখন খুবই খারাপ লাগে-


যার মুখে হাসি ফুটাতে নিজের হাসি জলাঞ্জলি দিই

যার বিলাসিতার জন্যে নানা ধান্দামিতে লিপ্ত হই

পরিজন ছেড়ে ভেতরে ভেতরে নরক পুষি

সে যখন বলে আমি তাকে কিছুই দিইনি

তখন খুবই খারাপ লাগে-


মন চায় ওকে ঘর ছাড়া করি

কিংবা নিজেই ঘর ছাড়া হই!



চিত্রনাট্য

দীপঙ্কর ইমন


ওখানে নুন ফুরিয়ে যাচ্ছে

এখানে বায়বীয় জল আরও উত্তপ্ত হয়।


মাঝখানে ভাত চাষী

সিন্ধু সভ্যতা থেকে আজ অব্দি

মহাজনের ভুল অঙ্ক মেনে নেয়।


ঈশ্বরের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি আজও শেষ হলো না

যদিও,

ধান গাছ গুলো নাস্তিক হয়ে উঠলো এক এক করে।


নুন আনতে আনতে জল উধাও হয়ে যায়!

এখন ভাতের জন্য আরেকটি সভ্যতা চাই

এক পৃথিবী নুনের গল্প।


যদিও

পৃথিবীটা আজ

নিলাম হয়ে গেছে ঈশ্বর সমেত।


ছায়াছবির চিত্রনাট্যে

কেবল মহাজনেরই চরিত্র লেখা আছে।




তোমাকে ছোঁবো না কোনোদিন 

ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ 


বারুদের গন্ধ হব

যুদ্ধের কান্না ছোঁবো 

তবু তোমাকে ছোঁবো না কোনোদিন

তোমাতে জমে আছে অপ্রেমের ঋণ।


বজ্রপাতের ঝিলিক হব

বিষধর ফণী ছোঁবো 

তবু তোমাকে ছোঁবো না কোনোদিন 

তুমি যে অস্পৃশ্য, প্রেমহীন!


পথিকের পথ হব

সারাদিন লাথি ছোঁবো 

তবু তোমাকে ছোঁবো না কোনোদিন 

তুমিই করেছ আমায় বিষাদে বিলীন।


মহাকাব্যিক দুঃখ হব

অগ্নিকুন্ডের ফুলকি ছোঁবো

তবু তোমাকে ছোঁবো না কোনোদিন 

তুমি যে নিষ্ঠুর মায়াহীন!




ভালোবাসাহীন নগরে 

রুদ্র সাহাদাৎ 


শুক্রবার এলে বাবাকে খুব করে মনে পড়ে, মা’কেও 

“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা”

কাঁদে চোখ মোনাজাতে দু’হাতও 

জানালাহীন ঘরে যাব আমিও দু’দিন আগে পরে 

শূন্যতায় হাসি রোজ ভালোবাসাহীন নগরে....



প্রতীক্ষা

জহুরুল ইসলাম


 যমুনার বালুচরে কাশবন,

কতোদিন আসি আসি করে আজও আসোনি।


ঘর ছাড়া মন অপেক্ষায় থেকে থেকে,

ঘরে ফিরতেই ইচ্ছে হয় না।

তোমার ঠোঁটের মতো পাতার নড়াচড়া দেখি-

আশ্বিনি আকাশের ধুলোট মেঘ।

ক্ষয়ে যাচ্ছে সময়-

এসো এবার বালুচরের কাশবনে।


একবার এসো-

ভালোবাসার কথা বলিনি,

তোমার রক্তে তা নেই।


চাতকের মতো অপেক্ষায় আছি-

যমুনার ধারে- কৃষ্ণের বৃন্দাবনে।



সত্যিকারের প্রণয় 

কনক কুমার প্রামানিক


জেনে রেখো ওগো প্রিয়তমা

এ প্রণয় ক্ষণিকের নয়,

বিলাসিতা বা বাজীও নয়

এতো দুটি আত্মার জয়।


কামনা বাসনা মোহ নয়

দ্বৈত হৃদয়ের মিলন,

নিদ্রাময় অলীকও নয় 

সুখময় জীবনের ক্ষণ।


আবেগমাখা বচন নয়

আঙ্গুল ছুঁয়ে হাটা নয়,

ভালোবাসা অমর অমলিন

সত্যি প্রেম চিত্ত বিনয়



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট