প্রণয়ের সন্ধ্যাফুল
রিয়াদ এনাম
এই যে বিমূঢ় একাকী জীবনের স্বরলিপি গুনি আজও। আলোর পেখম মেলে ধরা তোমার সচিত্র প্রতিমা আঁকার অভিকল্প খুঁজি দিনমান। আমার বিমর্ষ স্বপ্নভেজা সন্ধ্যা না হয় একটি পেয়ালায় তুলে রাখবো, কিন্তু ভোরের আলমিরায় কে তুলে রাখবে আমার নিশীথ জাগা রোদন। যখন দিবাকরের মতো প্রস্ফুটিত চুমু এঁকে দেবো আমার খসখসে গালে। যদিও আমি তোমার আঁচলে মাথা রাখতে চাও না। অদৃশ্যের হাতছানি তাই আমাকে ভিখেরি বানিয়েছে, আমি অবশ্য নতুন কিছুর পিপাসা বোধ করি আজন্ম অনুরোধে।
অবৈধ মানচিত্রে আমি কোন দিন চোখের জানালা খুলে দৃষ্টিপাত করিনি। দেখিনি কারো গালের টোল পড়া বিমুগ্ধ হাসি। আমার ইচ্ছে তো আমরণ বেঁচে থাকা পবিত্র জায়নামাজে; ভুলের সাহু সিজদা আমার জীবনে ক’বারই বা এসেছে! আমি তার মূল্য চুকিয়েছি হাজার বার। সন্ধ্যে নামার আগে একটা পাখি আমায় বলে গেছেতোমার প্রণয়ের সন্ধ্যাফুল আর ফুটবে না। বর্ষায় যদি নদী ভরে যায় শাপলা শালুকে, তবুও আমি বেসে যাবো ভালো; এ কথা আমার জীবনের মতো অদ্বিতীয় সত্য।
শ্রাবণ বর্ষায় যেদিন আমি তোমার খোঁপায় গুঁজে দিয়েছিলাম বেলী ফুলের পাপড়ি, সেদিন আমি ছিলাম উড়ন্ত ঘুঘু আর তুমি ছিলে ডানা ভেজা শালিক। আমি নির্ঘুম চেয়েছিলাম তোমার বাহুর আস্তিনে। আর কান পেতে ছিলাম তোমার ঠোঁট চাপা কোকিলের মিষ্টি গানে। এ যেন অন্তিম ইচ্ছার চিলেকোঠা। কোথাও কোন ছন্দপতন নেই যে সুরের, যেই জাগ্রত মূর্ছনার। তবুও দিনান্তে দ’জন নিহত নক্ষত্রের মতো খসে পড়ি দোটানার তুফানে।
আ, তুমি ভুলে গেছো তোমায় নিয়ে নয়া স্বপ্নের কতো বেসাতি আমি গড়েছি, কত সুঠাম চিন্তার বাহনে হইহুল্লোড়ে যাপিত জীবনের বায়ান্ন বসন্ত পার করে এসেছি। তা তোমার ভুলে যাবারই কথা; কিন্তু আজও আমি ঐ নিমগ্ন চিরকুটের শব্দ দিয়ে বুনি বেঁচে থাকার শীতলপাটি। এটা যদি শেষ ইচ্ছে হয় তবে তো কথা নেই। অন্যথা আমি এর ষোলোআনা পুষিয়ে দেবো কোনো আঁধার মানবীর পথ খুঁজে খুঁজে। জানো না কি, এক অচেনা দুপুরে তোমার পত্রে লিখেছিলাম প্রণয়ের চাদরে কত না আকাশ পাতাল স্বপ্নযুদ্ধ!