ভেঙ্গে পড়ছে সব
রফিকুজ্জামান রণি
তুমুল উল্লাসে ভেঙ্গে পড়ছে সব
রোদ থেকে ভেঙ্গে পড়ছে মেঘ
কোলাহল থেকে ভেঙ্গে পড়ছে শব্দ
তুফান থেকে ভেঙ্গে পড়ছে গর্জন
শুধু স্তব্ধতা, ভীষণ রুক্ষতায়
ভেঙ্গে পড়ছে তারা থেকে তারা।
ফিরে এসো
সুমন আহমেদ
দীর্ঘ দূরত্বের মাইল পেরিয়ে- সমস্ত বাঁধার প্রাচীর ভেঙে
অন্তত একটি রজনীর জন্য হলেও ফিরে এসো পূর্ণিমা।
কথা দিচ্ছি- অনন্তকালের দাবি নিয়ে ধরে রাখবো না...
ভোরের সূর্য উদয় হবার আগেই ছেড়ে দেবো-
ফিরে যেও তোমার সুখের গন্তব্যে।
জানো পূর্ণিমা-
আজ কতদিন, কতমাস,বছর পেরিয়ে যুগ-যুগান্তর
তোমার আলোয় আলোকিত হয়না আমার পৃথিবী।
কেবল শুধু তুমিহীন অমাবস্যার ঘন অন্ধকারে ঢাকা রাত্রির শহর;
এই শহরে এখন আর বেলী ফুলের গন্ধ নেই
আছে শুধু তৃষ্ণনার্ত যন্ত্রণার অগ্নি দাবানল- বিষণ্ন হাহাকার।
খেয়াল বিষয়ক যুক্তি
আকিব শিকদার
খেয়াল বিষয়টা নেড়িকুত্তার পিঠে মনিবের পা রাখার মতো;
পা যতক্ষণ ধীরে চলবে কুই-কুই, পা যখন জোরে চলবে
কেওও... কেওও...।
আমার এ যুক্তি চোখ বন্ধ করেই মানবে অনেকে;
অনেকে ভেবে-চিন্তে নেবে, বিপক্ষ-যুক্তিও দেখাবে
কেউ কেউ।
ঈষৎ খেয়ালের নরম খোঁচায় যে হাসে মুচকি হাসি
বৃহৎ খেয়ালের ঝামার ঘষায় তার মুখেই ফোটে ক্রোধান্বিত
ঘেউ... ঘেউ...।
আশ্চর্য যুবক
দালান জাহান
পাহায় চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলো
আশ্চর্য এক যুবক
যার এক হাতে আলো
আরেক হাতে অন্ধকার
মুহূর্তের ঢেউ থেকে ছুটে আসলো
ধোঁয়ার মতো তিনটি মিজাইল
দুর্ভেদ্য আঘাতে তিনটি মানুষ হয়ে
ওড়ে গেলো সে তিন দিকে ।
বিকেলের শেষ আলোয়
কথার গন্ধে ঢেকে গেলো পথ
ট্রিগারে আটকে গেলো আঙ্গুল
বিষাদগ্রস্ত স্বপ্নের ভেতর
ভয়ে তাড়া মাথাগুলো দৌড়ে চলছে
আধুনিক আকাশের দিকে
যার পেট ভরা পারমাণবিক ডিম
কিন্তু মানুষেরা ভাবলো সুষম খাবার।
পরমায়ু
শ্যামলী বিনতে আমজাদ
জীবন বিন্দুর সঞ্চারপথ বড্ড কুটিল।
যে পথ পরিমাপক যন্ত্র মহাকাল ধরে অনাবিষ্কৃত।
যার গতি নিবারক গুলো খাড়া উচ্চ তীরভূমি সম।
দৃঢ় আয়াস, প্রয়াস, চিত্তের অবিচল ভাবের সংমিশ্রণই
বাঁধার পাহাড় টপকানোর মূলনীতি।
অতঃপর ঘর্মাক্ত শরীর পুলকিত হয় মৃদু সুখে।
ভুল শুধরে পরিশীলিত হয় আপন সত্ত্বা।
অপরদিকে কুঁড়ে কলেবর পড়ে থাকে মুখ থুবড়ে,
দোষী সাব্যস্ত হয় কপাল।
পথের বাঁকগুলো সমতলীয় ক্ষুদ্র কোণ বিশিষ্ট,
সতর্কহীন পান্থজন ছিটকে পড়ে কালে অকালে,
শেষমেশ মৃত্যুবিন্দুকে স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে
নির্ণীত হয় সঞ্চারপথের দৈর্ঘ্য।
সানজুর জন্যে
মাহমুদ নোমান
বিয়ান বেলায় ডিমের কুসুম ফেটে-
সূর্যটার একটু একটু
ব্রাশ করা দাঁতের হাসি,
তেলচুকচুকে বাসন কোসনে
আমার হৃদয় পিছলে,
আয়নায় রাতে নষ্ট করা ছবি
দেখে আর চুল আঁচড়ায় না
মন খারাপের মৃদঙ্গ দাপাদাপি করে
সিলিন্ডার গ্যাসের আগুনে
বাংলা আমার মা
টিপু সুলতান
যতদূর দেখি-
নাবি কুয়াশার বাঁক ফেলে
পৃথিবীর প্রান্ত ঘেঁষা আঠারো বয়সের মতন
একটি বাংলাদেশ।
আকাশের চোখে
টি এস সির শোকেসে চেতনার মুখ-
পাহাড়ের কোরচে
মাটির সুষমায় গজে ওঠা
অশ্বখুরের দলিত মাটির দানায়
অঙ্কুরিত বৃক্ষের বুক।
মেলতে চাইনি কোন বিষাদবৃষ্টির নিরণ্য পাতা আর,
শুনতে চাইনি কোন বিনাশী কিতাবের কথা-
ব্দ্বীপ ভাটিবেলায় জ্বলে ওঠে ইতিহাস।
যতদূর জানি
যতদূর চোখ যায়
হৃদয়ের ডোরে চারণভূমি
রূপসী বাংলা আমার মা।
সেইসব দিনগুলো
রেবেকা ইসলাম
সেইসব দিনগুলো প্রায়শই মনে পড়ে
মনে পড়লেই মন ভিজে হয়ে যায়
ঝুম বর্ষার একাকী বারান্দা,
ওতে ভেজা শালিকের জবুথবু আশ্রয়
নেতিয়ে যাওয়া পালকের আঁশটে ঘ্রাণ
বিস্ময়ে ঘোরলাগা ঊষর ভাবনায়
কাঁচপোকাদের অহেতুক সন্তরণ
এলোমেলো দ্রুত চলাফেরা...
সেইসব কথাগুলো প্রায়শই মনে পড়ে
নির্ঘুম নিঃশব্দ রাতগুলোতে,
যখন জোছনায় ভেজে পর্দার ঝালর
নাগেশ^রের কেশর,
মনে পড়ে এক আকাশ জিজ্ঞাসার
এক সমুদ্রনীল ঢেউ উত্তর
অথবা না লেখা উত্তরের সফেদ খাতায়
না বলা অনুভূতি ।
সেইসব দিনগুলো প্রায়শই মনে পড়ে
সেইসব কথাগুলো প্রায়শই মনে পড়ে।
প্রেমিক সিরিজ-৩
জাহিদ আল হাসান
একজন প্রেমিক-
বুকের উপর সাতাশি টন পাথর নিয়ে যেভাবে ঘুমিয়ে পড়ে নরকের বিছানায়
সেভাবে আমার বুকের উপর প্রতিদিন
বিস্কুটের টুকরো নিয়ে একটি পিঁপড়ে হেঁটে বেড়ায়।
ঘুমিয়ে ব্যথা ভুলতে গিয়ে একজন প্রেমিক যেভাবে স্বপ্নে দেখে নেয়
জ্যামিতিক প্রেমের বীজগাণিতিক বিনাশ সেভাবে যুদ্ধের বদলে
আমরা পৃথিবীতে লিখে নেই এক মহাযুদ্ধের ইতিহাস।
তারপর তবুও বুকে পুষে নেওয়া; ব্যথা- সে কি ভোলা যায়?
গতকালের রাস্তায় পেছনে ফেলে আসা কদমের মতো;
ক্ষমতার আগে মিছিলে বক্তৃতারত নেতার মিথ্যে কথার মতো
আমার ফেলে আসা লাটিম, ঘুড়ি আর গোল্লাছুটের শৈশবের মতো;
ভোলা যায়?
ব্যথা- সে তো প্রজনন উপযোগী বীর্যের মতো
হৃদয়ে গিয়ে কেবলই নিষিক্ত মনে বেদনার তীব্রতা চায়, পরিপক্কত্বা পায়
আর এভাবেই একজন প্রেমিক ব্যথার আগুনে পুড়ে পুড়ে
পাখি হয়ে উড়ে উড়ে আহত পাখির মতো ডানা ঝাপটায়।
আজও তনুরা কাঁদে
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
আমরা তো ভুলে যাই রোজ,
রাখি না তনুদের খোঁজ।
বিউটি কিংবা আসিফার,
নেই দেশ নেই কাঁটাতার।
সব দেশে এতো হাহাকার,
চরম পরাজয় মানবতার।
আমরা তো রাখি না খোঁজ,
কতশত জীবন গেল রোজ।
এখন বাকি বিষ
এনামুল হক
একটা সিগারেট;
কত কিছুই না আছে তাতে
তোমাকে ভুলে থাকার মন্ত্র ধোঁয়ার সাথে
তোমাকে উড়িয়ে দেই শূণ্যে।
তারচেয়ে বড় মদ,
তোমাকে ভুলে থাকার বড় এক যন্ত্র
বিষ তো আরো অনেক উপড়ে
একেবারে তোমার কাছ থেকে
আলাদা করে দিবে আমায়,
সবকিছুই ছুঁয়েছি, এখন বাকি বিষ।
একলা খনিজ
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
তুমি বরং জোছনালোকে বাজিয়ে যাও কুহক বীণা:
আমি না হয় নিঝুম কারোর বেহিসাবি প্রমোদ হব।
আমি না হয় উসকে দেব সমুদ্রকে সহজ কোনও অন্ধকারে।
নিকটে যার কামের উড়াল!
তাকে তুমি নস্যি ভেবে দিব্যি কোথাও ভ্রমণ হয়ো।
কাচ ভাঙা সব শব্দগুলো জড়িয়ে দিয়ো ঘুমের আগে।
রাঙিয়ে নিয়ো পাখনা তোমার-
আমার অবুঝ স্পর্শগুলো ঝেড়ে।
হয়তো আমি কারও চোখে ছন্নছাড়া, মুখচোরা মেঘ।
হয়তো আমি কারও ঠোঁটে খুব দুপুরের সুখের অসুখ।
হয়তো আমি খামখেয়ালি কারোর ডাকেই দিইনা সাড়া;
তুমি বরং লজ্জা ভুলে শালুক তুলতে থাকো:
আমি না হয় মুখ ফিরিয়ে রোদ্দুর হয়ে রবো;
আমি না হয় চুপসে যাবো দুরারোগ্য খাদের তলাই।
তোমার আছে একলা খনিজ, চড়ুইভাতি।
ঘন হয়েই মিশে যেয়ো অন্যকারোর বুকের কলরবে;
দাগগুলো সব ফুটো করে মগ্ন থাকো উতল হাওয়ায়।
অনুতাপের পায়রাগুলো গলাটিপে হত্যা করে-
সোজা উঠান দখল নিয়ে নাচতে থাকো।
আমি না হয় নিজের খুনের দায় রেখেছি মুঠো ভরে।
আমি না হয় ভুলেই গেছি কবে কখন প্রেমিক ছিলাম;
আমিই না হয় ছাই হয়েছি তোমার মতো জ্বলতে চেয়ে।
একখন্ড ধূলোবেলার কাব্য
দ্বীপ সরকার
তখনকার কথাগুলো মনে হয খুব,
বিস্তৃত আতীত জমিয়ে তুলছে পোয়াখানেক বৃষ্টি শহর,
আমার চোখে-
আমি এমনই মানুষ ছিলাম,খেলনার ছলে ভেঙেছি মাটির
মাইক অজ¯্র, ফের বানিয়েছি তুল তুলে শরীরের রেডিও,
বিনা তারের ছুঁইছুঁই গল্প, আজও চোখের ঝালোরে ঝুলছে
ঔরষজাত স্বপ্ন, ঝালোরের ওপারে স্মৃতিরোদের দিনতালিকা।
এই সমস্ত উঠতি বয়সে উচ্ছৃঙ্খল আঙুল উঁচিয়ে যখন
যোবন মোড়ে আসি, মনে হয় মাটির মাইকে ভেসে
আসছে ধূলোবেলা,র পুঙতি,আবৃত্তির কালো কালো পেখম।
দারুন আবছায়ার নোটবুক, কান্নার ধাঁচে রচিত হয় বিষম
অতীত,শুধুচেনালাগা আমার ভেতরের অতীতসমূহ ঊড়ছে।
ধূলোমাখা হাত আজও ঊবু হয়ে আছে নিষ্ঠায়। স্বপ্নেরা গ্রীবা
ছুঁয়ে আছে আমার,ধূলোবেলা,র চাঁইয়ে আমি আটকে থাকা
চুনোপুঁটি,ধবধবে স্মৃতিচারন সম্মেলনে কবি কোথাও নেই ।
চারপাশ অব্যয় সুনসান।
কবিতার শিশির
বজলুর রশীদ
হিসাব মিলছে না
তোমার রকমারি দৃষ্টিতে-
বুকের ভেতর অফুরান বিশ্বাসী বীজ বুনে বুনে
সুখের দরজায় খিল আটকে যায় প্রতিরাত!
আচমকা দমকা হাওয়ায় উড়ে যায়
কোমল পুষ্পের রেণু হাজার ডানায়..!
ঋতুবতী জ্যোৎস্নায় ছুটে যাই অন্ধকার দিকে
কখনো বেদনায় নীল,
বিশুদ্ধ ভোলোবাসার চোখের নীলায়।
পুষ্টিহীন ওষ্ঠ ফ্যাকাসী বর্ণে
চেয়ে থাকে দু’চোখ,
দৃষ্টি চন্দনচিতায়
স্মৃতির প্রণয় হাসে রাতের গভীরে।
অনিশ্চিত জ্যোৎস্নায় সাঁতার কাটি কষ্টের সমুদ্রে-
কারুকার্যময় রাতের সিঁড়িতে দেখা বিপন্ন সময়
শব্দরা বাউল করে কবিতার শিশিরে..!
অন্ধকার যাত্রা
শৈলেন চৌনী
আর কত এমন পা দিয়ে মেড়ে যাব নিয়ত রোদরাত্রি,
কতবার মিথ্যের পসরা হৃদয়ে সাজিয়ে বাবাকে বলব
‘খিয়া মৃত্যুতে রাখব না’
যেভাবে বাবা গর্ভান্তরিত করে রাখে হাতের ইন্দ্রজালে
গাছের নিয়তি, নিনাদ
বাবাও জানে, কীভাবে কাঁচি দিয়ে
ছেঁটে দিতে হয় রোগগ্রস্থ সমস্থ, স্মৃতি
‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও হে নগর’
সমস্ত মায়াপাশ কাটিয়ে, ঘিরে ঘিরে বৃদ্ধি হয়েছে নিজস্ব গাছ,
আজ ফুল গাছের দিন নয় বন্ধু, অন্তরে বিষবৃক্ষ-
তবুও লালিত, গর্ভজাত- যা কিছু শাশ্বত শুধু তাহারই দান
যদি কখনও চুরি হয়ে যায় অরণ্য,
আমার যাবতীয় স্মৃতি-
বলব- দাও ফিরে সে বিষবৃক্ষ, লও অমরত্ব
সুখ ভাবি; সংযম ভাবি; প্রেম ভাবি-
বিষ জানি যাকে সে আমার সম্ভবতকেউ না অথবা তুমুল আত্মীয়তা,
ঠিক এভাবেই আমরা রওনা দিই,
যেখানে হলুদ চৈতন্য জমে স্মৃতির খামে খামে
বন্ধুদের বলি, এটাই আমার ‘অন্ধকার যাত্রা’