এই অধ্যায়ে
মোহাম্মদ জসিম
এই অধ্যায়ে তোমার চোখ আর চুল কিংবা গালভর্তি বসন্তের দাগ নিয়ে আলোচনা হোক ঋতি রায় উহ্য থাক স্মৃতিক্ষত, মনবদলের গল্পগাছা...
জোৎস্নায় যা কিছু সুন্দর- যেমন ধরো তোমার প্রশস্ত কাঁধ কিংবা বুক, বুকের উপত্যকায় লালরঙ তিল নিয়ে কথা হোক এই অধ্যায়ে; হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি-আর যত ঢেউ সবকিছু এড়িয়ে যাবো আজ।
নাভিতে নয়নতারা ফুটে থাকে- ক্রমাগত নিকটবর্তী হই সমুদ্ররেখার। এই সুসজ্জিত ভ্রমণের শেষভাগে লবনচাষীদের জন্য রেখে যাওয়া সুসংবাদ নিয়ে কথা হোক।
বিগত অধ্যায়সমূহে আলোচিত চিৎকারগুলো আপাতত লুকিয়ে রাখো খামারবাড়ির কালকুঠুরিত; খরা ও খরিপ যতগুলো মৌসুমি বাতাসের শব্দ আমরা জমিয়েছি বুকের গভীরে-আজ তার কিছুই ছোঁব না...
কথা পরম্পরায়- এই অধ্যায়ে আমরা শুধু গোলাপি কার্ডিগেন, তার লাল বোতাম আর অন্তায়মান সূর্য নিয়ে আলাপ করবো- যতটা গভীরে গেলে নীলরঙ উথলে ওঠে ততটা গভীরে যাবো না মোটেই।
সবকিছু সবার সয়না
মারুফ আহম্মেদ নয়ন
সবকিছু সবার সয়না। কেউ মেঘ না চাইতেই পেয়ে যায় জল। কারো কারো আজীবন খরা। কারো কারো ফাগুন সয়না, কারো বৈশাখ, কারো চৈত্র। কারো কারো বাগানে ফুল ফোটার আগেই ঝরে যায়। কেউ কেউ বোঝেনা, ঋতু বদলের খেলা। কারো হাঁটুজলে ডুবে যায় নৌকা, কারো থাকে ভেসে। কারো সুখ সয়না, কারো কারো দুঃখ। কেউ কেউ কিছু না বুঝেই থেমে থাকে মাঝপথে...
শুধুই প্রশ্নবিদ্ধ
তরণী কান্ত সুমন
কেঁদে উঠে মন!
যখন দেখি মানুষে মানুষে লাঠালাঠি হিং¯্রতা ছড়িযে দেয় বুক বরাবর।
মানুষের রক্তে পিপাসা মেটায় মানুষ, নিজের পশুত্বকে লালন করে বাহুবলে।
আঘাত হানে দূর্বল মানুষের পেশীতে!
বীরত্ব; জ্বালিয়ে দেয় অসহায় মানুষের
বেঁচে থাকার আশ্রয়। পোড়া গন্ধে ভেসে দেয় পশুত্বের বাহ্বা।
লুঠিয়ে নেয় পশুত্বের আড়াচোখে যুবতীর শেষ সম্ভ্রম।
জিহ্বায় চটিয়ে দেয় রক্তের স্বাদ উন্মাদ করে দেয় বিবেকের মৃত্যু ।
শুধুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়!!
এরা কি মানুষ? কে লড়বে এই বর্বরতা, প্রভুত্বের বিনাশ করবে?
বিশ্বাস; একদিন ঈশ্বর হস্তে পশুত্বের বিনাশ ঘটবেই।
বোধ
শোয়াইব শাহরিয়ার
কুয়াশার চাদরে ঢুকে যাচ্ছে নদী। নদীর ভেতর ঢুকে যাচ্ছে দেহ।
দেহের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে নারী। নারীর ভেতর ঢুকে যাচ্ছে পুরুষ।
পুরুষের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে লোভ।
একটু ভেবে দেখো- তোমার কারণে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এমনকি তুমি নিজেও শেষ হয়ে যাচ্ছো। পুরুষ, ভাবো।
তুমি বরং ভাবতে শেখো। তুমি বরং ভালোবাসতে শেখো।
তুমি আজ-
এই অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জ্বালাও মোমের আগুন
ভালোবাসা হয়ে গলতে গলতে পৃথিবী হবে বৈষম্যহীন।
পুনরাবৃত্তি
মোহাম্মদ অংকন
দু’চোখে অসম ঘুম; তবুও টেনে তোলে ব্যস্ততার এলার্ম।
চোখে দু’চিলতে জলের ছাপ মেওে ছুটতে হয়-
যেখানে জীবনের বাস্তবতা অপেক্ষমান কিংবা ভবিষ্যৎ ডাকছে।
চেতনায় আসে; এখনই তো জীবনের দৌঁড়ানোর সময়।
পিছিয়ে পড়লে কেউ হাত বাড়িয়ে ডাকবেনা হয়তো;
উপলব্ধি করতে হবে তখন- নিগ্রহতার বোঝা কত ভারি।
দৌঁড়ানোর পালাক্রমে- দিন শেষে ক্লান্তগুলো ঝাঁপটে ধরে,
চোখেঅসম ঘুমের পসরা সাজায়; ঘুমিয়ে পড়ি অবচেতনে।
কেননা আবার সকালে ছুটতে হবে চোখে দু’চিলতে জলের ছাপ মেরে।
আর এভাবেই প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছি;
প্রথম হওয়া হয়ে ওঠেনা চর্চার অভাবে। পুনরাবৃত্তি হয় না শৈশবের-
পুনরাবৃত্তি হয় শুধুবহমান সময় আর ক্লান্তবৃত্ত ঘুমের।
পৃথিবী থামবে কোথায়?
সাদ সাইফ
নিঃসঙ্গরা খুঁজতে থাকে একটু প্রশান্তির হলকা
সঙ্গ পারাবারে পানি থেকে মৃত্তিকার স্বগর্ববাণী।
ভড়কে গিয়ে হিমালয় হয় আগ্নেয়গিরি
চরম নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে একাকিত্বের অচলকে।
কোথাও নেই এতটুকু স্বস্তি কিংবা আশার বাণী
মোটিভেশনাল স্পিকাররাই মন জ্বলিত সমালোচক।
হতাশার বুদ্বুদ কড়া নামে আত্মাহূতির রাস্তায়
তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এক চিমটি বিবেক।
পাপ পূণ্যের হিসাব তখন আড়াল করে রাখে হতাশাকে
ঝাঁপিয়ে পড়ে মহাপ্রস্থান, মহাপাপে।
বৈশাখর তাপে
রুদ্র সুশান্ত
রোদ্দুরে বসে থাকা বুড়োটা,
গঙ্গাস্নানে যাবে আজ,
জলে নিমগ্ন করবে শরীর পুরোটা।
ছন্দের তালে বৈশাখ এসে
হা-হা-কার করে দিলো পুরো রাজ্যময়,
রাজ্যজুড়ে রোদ্দুর তাপে,
রাজকুমারী খোলা চুলে শান্ত বাতাস খুঁজছে আজ;
এ যেনু আগুনের ফুলকি বৈশাখ নয়।
ব্যথার দাগ
আহমদ মেহেদী
(উৎসর্গ : মিষ্টি, তাহার ডাকনাম)
জানি, এই ছোট্ট জীবনে আমার ফেলে আসা অতীতের বিছানায় ভুলের রক্ত বিন্দুর দাগগুলো;
আর মুছবেনা কিংবা কখনোই মুছার নয়, এই পৃথিবীর ছলনার অবশিষ্ট কোন রং দিয়ে।
তুমি রাঙাও তোমার শহর আমার কথা ভুলে।
আমি চেয়েছি পাথর- প্রেম তুমিই জয়ী হও চিরতরে, জয়ের লোভ আমার নেই; ছিলো ও না দুজনের সম্পর্কের কৈশোর থেকে আজ পর্যন্ত, মায়া-কান্নার আদুরে সিংহাসনের রাজা আমি- তুমি রাণী ছাড়া হতে পারিনা আর পারবোও না আমৃত্যু।
এই বেলায় জেনে গেছি অন্তর জমিনে এক বিন্দু সুখ চাষের প্রজা খুজতে যাওয়া বড্ড বেমানান; উড়ে চলে যাওয়া চাতক পাখির অপেক্ষায় দিন গোনা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না, হয়তো কিছু ব্যাথার দাগ একদিন মাথা গুঁজে উঠবে ঐ অচিন হাশরের জলকেলিতে, কেননা করেছি পাথরের সাথে প্রেম আমি- তবুও আশায় থেকে থেকে চলে যাচ্ছে জীবন সেই পাথরের’ই খোঁজে।
পা ভেজাবো সাগর জলে
শর্মি ভৌমিক
একদিন এসো,
এসো এই সাগরবেলাভূমে;
আমি তোমার জন্য
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় বসে আছি
নিঃসীম বালুকাবেলায়;
কোন একদিন এ পথে তুমি আসবে বলে।
কি আবেগে অপেক্ষারত এই আমি!
প্রতি ভোরে এলোমেলো সামুদ্রিক হাওয়ায়,
খালিপায়ে একাকী নির্জনে হেঁটে হেঁটে
জমে যায় আমার উত্তাল প্রভাতফেরী;
জল আর শূন্যের মাঝামাঝি
অসংখ্য গাংচিলের দুরন্ত উড়াউড়ি!
সমুদ্রতীরে ঝরা পালকের গায়
নিবিড় দৃষ্টি মেলে চেয়ে থেকে,
খুঁজেফিরেছি আমি সহ¯্রবার
আগমনী ফেলে যাওয়া
কোন স্মৃতিচিহ্ন তোমার।
নিঁখুত চাহনিতে
দেখতে চেয়েছি হয়ে অবুঝশিশু,
হয়তো লেখা আছে তাতে
তোমার আসার কথা কিছু!
কতো লোক আসে যায়,
কতো যুগল হাওয়ায় চুল উড়ায়!
তুমিতো জানো না,
কেউ রয়েছে তোমারই অপেক্ষায়!
আমি আজো ভেজাইনি পা,
নামিনি সেই গহন জলে!
অনুভূতিসব অভিমানে জমে জমে,
নয়ন জলে গড়েছে আরো একটি তটিনী বুঝি!
কতো রৌদ্রস্নান শেষে
হারিয়েছি হাওয়াদের আবেশে!
শুভ্র ঢেউরাশি আকুল হয়ে
সকাল-সন্ধ্যা ডেকে গেছে নিরবধি!
কল কল কয়েছে কথা,
নীরবে গিয়েছে হৃদয় চুমে।
তবুও যাইনি জলে,
কাতর হইনি কারো কৌশলে!
দু’জন মিলে সূর্যোদয় দেখার পরে
বালুকাবেলায় শুয়ে রৌদ্রস্নান শেষে,
হারাবো দু’জন দু’জনাতে;
তোমার হাতটি ধরে সূর্যাস্ত দেখা হলে,
জীবনের পূর্ণতা নিয়ে ঘরে ফিরবো বলে
আজো বসে আছি সুতীব্র প্রতীক্ষা নিয়ে,
আমি নামিনি ঐ সাগর জলে;
ভেজাইনি পা, তুমি আসোনি বলে!