ঘুড়ি
শারমিন আক্তার
লাগোয়া বাতাসে চুলওড়া সকাল খুঁজি নির্লিপ্ত,
যতটুকু এড়িয়ে গেছে ক্যাকোফোনি, এই খিটমিটে শহরের।
কে বা কারা এখানে ওখানে গুঁজে দিয়েছে ভারী লেড,
উদ্বায়ী নিঃশ্বাসের অবকাশ খোঁজ?
কোথাও কেউ মনে রাখেনি আমাদের, প্রিয়তম।
অথচ কেমন-
ঘুড়ির মতন ঘুরতে ইচ্ছ করে লাটাই ভুলে, আকাশ জুড়ে।
গুঁড়ো গুঁড়ো সাদা দলছুট রোদে কখনো মেঘলা শতদল!
দিন শেষে সব রঙিন ফানুস
মোস্তফা হায়দার
তাঁদের চিৎকারে আকাশ ভারী
যন্ত্রণার সায়াহ্নে সবাই বধির
ভোগের পেয়ালায় অভুক্ততার আস্ফালন;
এক সুতো সলতে আর যন্ত্রণা
মানুষের দৌড়গোড়ায় হাঁপাচ্ছে
কাঁতরানো সোহাগে ভুলে থাকে পেছনকথা।
বেহায়ার মধুর বারতা নিমিষে
দিন শেষে সব রঙিন ফানুস
দাঁত কেলিয়ে ভাসিয়ে দেয়
জাগতিক সুখের আয়নায় উড়িয়ে দেয়া বিসর্জন
ভোগ আর ক্রন্দন
সুতোবাঁধা বিশ্বাসের আস্তিন ধরে হাটে ।
আনন্দছাপ
অভিজিৎ মান্না
আলো আসছে কার্নিশে-
ওখানে তোলা আছে স্বপ্নেরা;
একটু নড়ে উঠছে মনে হয়
চক করে উঠছে ঝিমানো চোখ,
কতো এলোমেলো ঝড় এসেছিল
তবু পড়ে যায়নি ।
বাসি ফুল তুমি আর কেঁদো না
দেখো- লোমে লোমে রোমাঞ্চ জাগছে,
অনেকটা পুড়েছি ভিতরে ভিতরে ।
এবার জল ফড়িঙের ডানায়
মাখিয়ে দেবো আনন্দছাপ ।
শরত
আনোয়ার রশীদ সাগর
স্বপ্নে বিভোর শরতের রাত, জোছনা ভাঙে বুকের পাঁজর;
নীরবতা ভেঙে অভিসারী হয় কাঙ্খিত বাতাস।
ছুঁয়ে ছুঁয়ে রংধনু কুঠিরে আবেশী শ্রাবণী ধারা,
সীমারেখা এঁকে ভেঙে দেয় পাখির পালক।
জল ভালবাসায় সুদূর অতীত চাহনি,
কৈশোরের ভাঁজে ভাঁজে কিশোরী মুখ,
চাঁদনী রাতে নিদ্রাদেবী খেলে পলানটুক।
শ্বেত সাম্পানে হেঁটে যায় স্কুলের পথে,
স্মৃতির রথে চলি আমি জোছনা এ রাতে,
আকাশ চাঁদরে নিঃশব্দ কষ্টধ্বনি।
বেহালা সুরে অভিমানগুলো শব্দ বুননে
নেমেছে আঁধারের ঠিকানায়, হেঁটেছে অবিরাম;
স্মৃতির ক্যানভাস এঁকে চলেছে, শূন্যের পাতায়
শঙ্খচিলের পালক ভাঙা শিশিরে শরতের খাতায়।
জলরঙের ব্যথাফুল
মাহবুব মিত্র
তোমাদের প্রতিদিন জন্মোৎসব- মৃত্যুর বাঁশি ডাকছে
তোমাদের প্রতিদিন কামোৎসব- বাতিগুলো জ্বলে-নিভে
তোমাদের প্রতিদিন বিবাহোৎসব- মাটির পুতুল ভাঙছে...
এবং দিনগুলো রাত আর রাতগুলো হয়ে যায় দাঁড়কাক;
রঙিন ফটকের দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে
তাকিয়ে থাকে মানিকজোড় নয়নযুগল,
তোমাদের জন্মদিনে ফুটতে থাকে নাইটমেয়ার
কাশিমপুর কারাগারে লাফিয় লাফিয়ে বাড়ছে কাঁটাতার;
নামাঙ্কিত কেকগুলো শয়তানের জলপাই-রঙ মুখোশ
তোমাদের প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানেরা আঁকছে বিমূর্ত চিত্র
স্বপ্নগুলো হামাগুড়ি দিচ্ছে উত্তপ্ত হেঁসেলে কাঁচা ভোরে,
তোমাদের নেশাফুল- ঘ্রাণে ভরে যাচ্ছে বুকের আঁচল;
তোমাদের চোখ থেকে ঝরে পড়ছে শিশ্নতীর
তোমাদের মুখ থেকে ঝরে পড়ছে যোনির লালা,
তোমাদের এইসব উৎসব ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে
থোকা থোকা আঁধার; দুঃখরা জলরঙে আঁকা ব্যথাফুল।
অর্কিড
জীবন রাজবংশী
সবুজের কোলে ঘুমিয়ে আছে আমার মা,
সাদা চাদর মুড়িয়ে গায়ে সবুজের বিছানায়।
তাল তমাল সেগুনগাছের তলায়,
কি অপরূপ দৃশ্য দেখছি, আমি নই শুধু-
দেখেছেন বাপ ঠাকুর দা, কবি জীবনানন্দ দাস।
ছুট
আবু হানিফ জাকারিয়া
ছুটছি অবিরাম নিশিদিন একাকার করে ক্ষমতার জন্য,
অর্থের জন্য, খ্যাতির জন্য।
মৃত্যু সন্নিকটে ভুলে যাই, চেষ্টাও নেই না ভোলার।
হয়ত বিশ বছর নয়তো বড়জোর একশ বছর।
ক্ষুদ্র এই সময়টুকু পৃথিবীতে বাঁচার জন্য বরাদ্দ।
এই অবধারিত সত্য উপেক্ষা করে যাই মোহাচ্ছন্ন নেশাগ্রস্থ আমি।
এ নেশা সুখ খোজার নেশা, সুখী হওয়ার নেশা, এগিয়ে যাবার নেশা।
অথচ এই সুখের সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়নি আজও।
হলফ করে কেউ বলতে ও পারেনা আমি সুখী।
দল নিয়ে দলাদলি, মারামারি, হানাহানি, খুন
কি করেনা মানুষ বা আমিও।
ক্ষমতার লড়াই, সম্পদের লড়াই, পদের লড়াই, পদবীর লড়াই।
সব লড়াইয়ের সেরা লড়াই সুখী হবার লড়াই।
ছুটছি অবিরাম নিশিদিন একাকার করে
সুখের লড়াইয়ে সামিল হতে, জয়ী হতে।
ছুটছি বাড়ি গাড়ির মালিক হতে হবে কিনা,
বিলাসী বাড়িতে প্রাসাদোপম সজ্জাও লাগবে।
ছুটতে ছুটতে জীবনের শেষ বেলাতে এসে হয়ত
উপলব্ধি হবে নচেৎ উপলব্ধি হবার আগেই আমি নেই।
অনন্তকালের আবাসের জন্য ছোটাছুটি নেই, নেই কোন প্রস্তুতি বা আয়োজন।
সব আয়োজন শুধুই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে সুখী হবার।
সব ছোটাছুটি শুধুই স্বল্পকালীন লোকদেখানোর।
তারপর সব খেলা সাঙ্গ হবে, বন্ধ হবে ছোটাছুটি,
এটাই অবধারিত বাস্তবতা কেউ মানি বা না মানি
তারপর ফিরতে হবে স্রষ্টার কাছে তার হুকুমেই।
মৃত্যু বনাম মধ্যবিত্ত
সম্রাট তারেক
বৈষম্যের গর্ভে মধ্যবিত্তের জন্ম
আত্মসম্মানের হাতে হাত রেখে
তার হাঁটতে শেখা।
এরপর মৃত্যুই তার দায়িত্ব নেয়
মায়ের আদরে গড়ে তোলায়।
উপমৃত্যু,অর্ধমৃত্যু, আদিমৃত্যু
হরেক রকমের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
বাস্তবতা কতৃক খন্ডিত ক্ষুধায়,
মধ্যবিত্ত বেঁচে থাকে
নীল, গাঢ়, বাদামী, কালো রঙের আইরিসে।
মধ্যবিত্তের জন্ম হয়
এক পা, এক হাতের অক্ষমতার অভিশাপে।
পঙ্গু পা নিয়েও, সে দৌড়বিদ হবার স্বপ্ন দেখে
হেরে যাবার পর, বাড়ি ফিরে বিজয়ের হাসি মেখে।
হাত ছাড়াও সে কবিতা লেখে
কবি হবার স্বপ্ন দেখে।
মধ্যবিত্তে অসুখ নেই
তার শরীরের চামড়া
রেইনকোটের কাপড়ে তৈরি।
বৃষ্টি ভেজা জামা, জগত শ্রেষ্ঠ ছাতা।
মৃত্যু ও মধ্যবিত্ত, অ্যানোড ক্যাথোড
গৃহপালিত বেদনা গুলো, লবণ সেতু।
স্বপ্নের ফুল
নূর মোহাম্মদ
পৃথিবীর মনিটরে মনভরে অনেক কিছুই দেখি
আজকাল বেশিদেখি হরেক রকম ফুলের হাসি
বিদেশি ফুলের নিত্য চাকচিক্য আধিক্য প্রভাব
আমাকে একটুও আকৃষ্ট করতে পারেনি...
আমাকে আকৃষ্ট করে সবুজ গাঁয়ের ঘাসফুল
তারপর একে একে সুবাসিত বাংলার পুষ্পরা
তাই সব স্বপ্নিল বৃক্ষ তরু লতা
সুবিমল ছায়ার মায়ায় আমাকে জড়ালো...
আজো যেনো স্বর্গের সুখ সব পবিত্র ফুল
জানিনা কোন মনোহর বৃক্ষের স্বপ্নের ফুল
শাশ্বত বিধানের সুরভীর সমীরণ মেখে
সুবাসিত ভালোবাসা বিলানোর অপেক্ষায়...
হৃত্বিকময় দিগন্ত
টিপু সুলতান
সেদিনকার বেণীগাঁথা চুলে
আঁধারের রোপণ কেটে কদমের ফুলে
শ্রাবণের জল আমনের চারা ধানে
নারিশ গেরুয়া শালিক
আর আকাশের ঠোঁটবাঁকা মুখ
অরণ্যের দু’হাত বাড়ানো
বাতাসের মাতৃমঙ্গল পাড়াগাঁয়-
বেড়ালচখু, ব্রক্ষ্মপুত্র নয়নে এক অবেলা নারী
নদীর কল্লোল ধ্বনি,
শিরিষ কুয়াশার ফোঁটাফোঁটা এক গ্লাস জল
গাছের ছায়ায় হলুদ বিকেল জড়িয়ে
সুরতশ্রী ডাকছে
যৌবন ভরা সবুজের আইলজোড়া মাঠ,
অবমুক্ত খালাসের হৃত্বিকময় দিগন্ত;
সে রূপ আনন্দে বনানীরা আজো ক্লাপ শোনায়...
একাঙ্কিকা
সাহিনা মিতা
প্রেমতো চাই নি, তবু যে এগিয়ে দিলে
মুঠবদ্ধ হাত! তুলে নেই মৃত চড়ুইয়ের পালক!
অশ্লেষ্য বলে আত্নহত্যায় নামে তাবৎ কাক,
পাখনা চুয়িয়ে মাথায় পরে ফোঁটা ফোঁটা ঘৃনা।
কতটা অসুন্দর থরে থরে সাজালে
এতটা রূপময় হয় ব্যথা!
সমর্পনের হাতে হাতে মোহর খচিত গ্লানি,
আবেদনে অনুগ্রহ যাচনা, নিবেদনে ত্যাগ,
তথাপি সাপপুষ্ট দুষ্ট নাগ হয়ে
ঘরময় বিশনিশ্বাস ফেলি মনি হরণের ক্ষোভে,
রাত নামলে তবু উঠোনে ফোঁটে হাসনাহেনা ফুল;
পিনপতন
হাবিবাতুল উম্মে
তোমার নাম দিলাম বাবুই;
খড়কুটোর বালাই নেই-
চাইলে তুমি ঘুমোতে পারো এ বুকে,
আমি শান্তি পাবো ভীষণ ।