শব্দমিছিল : নাহিদ ধ্রুব




শব্দমিছিল
নাহিদ ধ্রুব

কবিতাকে একটা আশ্রয় বলা যায়
কবিতা আমার কাছে একটা এস্কেপ রুট। জগতে যখন সবকিছু পলকা মনে হয় তখন আমি কবিতা পড়ি, লেখার চেষ্টা করি। এই অর্থে কবিতাকে একটা আশ্রয় বলা যায়। তবে, এই এস্কেপ রুট মানে জগত থেকে পালিয়ে আসা না বরং মাথার মধ্যে আরও অনেকগুলো জগত নিয়ে ঘোরা। এই ঘুরতে ঘুরতে অনেকগুলো পরিত্যক্ত স্টেশনে যাওয়া হয়, পাথর কুড়ানো হয়, কখনও ঘুমিয়ে থাকা হয় রেলের পাতে, তবু ক্লান্তি শেষ হয় না, যাত্রা শেষ হয় না। বারবার মনে হয়, কে হায় মানুষ, কার দিকে গেলে, কতোটুকু জগতেরে ছেড়ে ছুঁড়ে দিলে মনে হবে আমি আরও একটু যাই!


লস্ট

আমার হয়তো হারায়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মনে হয় বাবা হয়তো এখনও দূরবর্তী কোনপুকুরে ফেলতেছে মমতার জাল। আমারে খুঁজতে বের হইছে পাড়াপড়শি- বাইজীপাড়ায় গেছে মসজিদেও ইমাম। মনে আছে এইসব, শুধু মনে নাই কোথায় হারায়ে গেছিলাম; খুব শৈশবে- মা কপালে চুমুদিয়া বলছিল, আর কখনও হারাইস না বাপধন। অথচ, আজ মা বহুদূরে- বাবা মায়ের পাশে শুয়ে বাড়াইতেছে পৃথিবীর ওজন! পাড়াপড়শি নাই এমন কি নাই তেমন প্রিয়জন- হয়তো সকলেই একদিন হারায়ে যায়, হারাতে হয় যখন..

ভুবন মোহনে

সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর,
মনে হয় জগতে দ্বিতীয় কিছু নাই
যতোই লুকাতে চাই অন্ধকারে-
রাত্তিরে ততো প্রকাশিত হয়ে যাই

আমারে কে দেখিলো এই রাতে-
ভুবন মোহনে মিশিয়াছে এক বাড়ি
স্বর্গোদ্যানে ফুটে থাকা কোনো ফুল
কল্পলোকের সব মায়া গেলো ছাড়ি

তবু মনে হয় চাঁদ দেখে চিনবো পথ,
এইখানে খাঁ খাঁ করে ধূসর বালু চর-
সকলের কাছে শুনি অবজ্ঞার ভাষা
আমি আর চাঁদ, দুজনে, পরস্পর;

জল ফুরাইলে- পাই নদীর ছোঁয়া
ঢেউহীন মনে উত্তাল হাওয়া লাগে
নতুনের কাছে যতো সঁপি প্রাণ-
মনে শুধু পুরাতন ব্যর্থতা জাগে!


ফরিয়াদ

কী করে মৃত্যুর পর খুলে যায় চোখ
মানুষ কাঁদতেছে, কাঁদতেছে শ্লোক

একটা মানুষ মরে, কেবলই মরে-
ফানা ফানা হয় দিল কিসের ছলে?

কোনদিন দেখি নাই কী তার ব্যথা
সর্বনাশে ঝরে যায় ফের ঝরাপাতা

নিশুতিতে চৌচির মহামারি ফাঁদ-
আঙ্গুলের ফাঁকে লেখা এই ফরিয়াদ

লুকোচুরি খেলা তবু প্রকৃতির সাথে
মানুষ উঠিতেছে মানুষের কাঁধে

শৈশব পেরিয়ে বৃদ্ধ হইলো রব-
বুকের মধ্যে পোঁতা বিষাদের শব

তারে এড়াতে মুছি চোখের পাতা-
মৃত্যু মানে জীবন চোখে চোখে রাখা

ভ্রমণ

বিকালের কাছে তুলে রাখো তুমি
পাততাড়ি গোটানো একটা ভ্রমণ
পথের ভেতর ঢুকতেছে ঘর-
টানিবে পিছু- কে আছে এমন!

পাহাড়ে লুকানো পান্থশালায়-
মেঘের পেয়ালা দু’হাতে ভরো,
শুকনো ডাঙায় জলের ফোয়ারা
ভুলে গিয়ে সব উৎসব করো;

চিতার পাশে দাঁড়ায়ে থেকে-
আগুনরে বলো আড়াল নিতে
পুড়ছে সব তবু ফুটিতেছে ফুল
তারে নিয়া যাও সুন্দরের দিকে

যদিও দেখবা নিন্দার টিছে
কেহ বলে নাই গোপন কথা
বিকালের কাছে সূর্য যেমন
রেখে গেছে সব অন্ধ বার্তা।


আগুন

যতটুকু দেহ নিয়া করি হাহাকার-
তার অধিক আমার অঙ্গে অঙ্গে ছাই
কে যে পোড়াইলো, চিতা বুকে কার
আগুন জ্বালাই- আগুন জ্বালাই!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট