অপ্রেমিক
রফিকুল নাজিম
তোমার চোখের তারায় কতটুকুন মায়া ঘুমায়,
কতটুকুন দুষ্টু আর্তি খেলা করে; ঠিকই মাপতে পারি।
তোমার ঠোঁটের কোণে কতটুকুন বিদ্যুৎ চমকায়,
কতটুকুন নিষিদ্ধ গন্ধম ঝুলে থাকে; জানি গো, নারী।
তোমার বুকের তিলক দু’টো কতটুকুন ওম খুঁজে
কতটুকুন উষ্ণতায় সুখের বিলবোর্ডে তৃপ্তির রঙ ছিটায়।
কতটুকুন আদরে তোমার এলোচুল হাওয়ায় উড়ে
কতটুকু রাগে রক্তিম রঙে কানে রক্তজবা সাজায়।
তোমার গোপনীয় ভূমির কতটুকুন উর্বর চাষযোগ্য
কতটুকুন ঘামে বীজ থেকে চারা হয়; সব হিসেবই রাখি।
কোন ঋতুতে কোন ফুল ফোটে, কোন পাখি গায়,
কত ডেসিবল ধমকে হুংকারে মেলো তোমার আঁখি।
আহা! অপ্রেমিক আমি তোমার আকাশে দেইনি উঁকি
জানি না- কতটুকুন কার্বন লুটুপুটি খায় যখন তখন,
কতটুকুন অভিমানে এসিড বৃষ্টিতে পোড়ে তোমার মন,
কখনো খুঁজিনি তোমার হৃদয়ে কেন এতো রক্তক্ষরণ!
মৃতির বিস্মৃতি
মোস্তফা কামাল
বিবর্ণ বিমর্ষ এই আমি বুকের মাঝে
ক্লান্ত দুপুরের কড়া রোদ পুষি অতি যতেœ,
পড়ন্ত বিকেলের চূড়ান্ত অভিমানে
কেঁদে ফিরি অস্তগামী করুণ সূর্যের ম্লান ম্লানিমায়,
হৃদয়ের সবটুকু দরদ দিয়ে
আপন ক্যানভাসে ছবি আঁকি বিপুল মগ্নতা ও নিঃস্তব্ধতার,
রোদ, ফুল, পাখির কাছে নতজানু হই
আকুল করা ব্যাকুল হৃদয়ের বালুচরে নিয়ত
চাষ করি বিষন্ন গোধূলির ধূসর ধোঁয়াশা
ভালোবেসে ভালোবাসি ভালোবাসার
সমূদ্রের ঢেউগোনা ক্ষণিকের চর,
আমি জানি জীবন মানে জীবনের কাছে
মিশে যাওয়া এক বুক খরতাপে পোড়া অসুখ,
শুধু জানলাম না, তোমার ছেড়ে যাওয়া
ক্লান্ত দুপুর কেন আমার আমাকে
অতি যতেœ তিক্ত বিরক্ত নিঃস্ব করলে
নদীর চরাচরে সামনের অপার শূন্যতার
দিকে তাকিয়ে কেনো আমার পৃথিবী
জুড়ে নেমে এলো বিপন্ন বিপর্যয়ের
দারুণ বিস্ময়, খরতাপে গলে গেলো
আমার শুকনো চোখ, ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধে
বুকের মাঝে অজর কান্না নিয়ে
কেন আমার আজ মনে হয়,
জীবনের এইসব স্মৃতিময় বিস্মৃত
দিনের কোন মানে থাকে না কোনো কালে।
মায়াবী দেবী
জুবায়ের হোসেন দুখু
তাকে আজ কিছু বলব ভাবছি
কিন্তু বলার আগেই সে আমায় বলে দিলো
তোমার আমার দেখা হবে পাগলাতলীর মোড়ে
স্তব্ধ হয়ে দু’টি নয়ন বন্ধ করে
ভাবছি আমাদের পাগলাতলীর মিলনের কথা
হঠাৎ হৃদয় বিতাড়িত একটা কথা মনে পড়তেই,
দু নয়ন খুলে তাকাতেই দেখি
সে নেই আমার সামনে!
পিছু ফিরে তাকাতেই দেখি
সে একটা পতিতালয়ের গাড়িতে বসা
তাহলে কি সত্যি হৃদয় বিতাড়িত কথা আসলেই সত্য
সে কি পতিতালয়ের বাসিন্দা,
নাকি আমার ভালবাসার মায়াবী দেবী।
আমি প্রেম
মুহম্মদ রাফিউল আলম
আমি প্রেম!
আমি সিংহাসন
ত্যাগ করতে পারি! পাথরের বুকে
সবুজের চাষ তো নগণ্য!
আমি প্রেম- আমি চির সবুজ।
অবলার মুখের ভাষা- অন্ধের
চোখের দৃষ্টি-
¯্রােতের বিপরীতে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে
যেতে পারি অনায়াসে।
কামুকের চোখ
কাম; সাধুর চোখে-মোক্ষ।
আমি প্রেম!
আমি চৈতন্য- আমি রাধা-
আমি মীরা; আমিই কৃষ্ণ।
আমি লায়লা- আমি মজনু।
আমি প্রেম!
আমি ধরার মাঝেই অধরা!
আমি যন্ত্রনা- যন্ত্রণাটায় আমি!
আমি সুখ- আমি শান্তি।
আমি আকার- আমি নিরাকার।
আমি প্রেম!
আমি দুঃখ; আমি কষ্ট; আমি বেদনা-
আমি মুক্তি-স্বর্গ আমার
অধিকারে। নরকটাও কিনে নিয়েছি
একই দরে।
আমি প্রেম!
আমিত্বটাই আমি।
ব্রহ্মা আমি-বিষ্ণু আমি-
ত্রিলোচনও আমি।
আমি মহাকাল;
আমি প্রেম!
আমি কোনো আগন্তক নই
পাপুল চৌধুরী
বিশ্বাস করো!
আমি কোনো আগন্তক নই।
এ শহর আমায় চেনে জানে
সে জানে আমার পরিচয়, আমার জন্মকথা।
আর আমার নাম! সেটা বড় কথা নয়।
এই যে রাস্তা! দেখতে পাচ্ছো?
এটাই আমার ঘর। আমার অবিচ্ছেদ্য আশ্রয়।
যেখানে আমি জন্মেছিলাম,
দ্বিতীয় জন্মেরও আগে।
এ শহর জানে, আমার শৈশব
আমার বেড়ে উঠার সাক্ষী এ শহর।
শহরের প্রতিটি অলিগলি জানে,
আমি এ শহরের’ই একজন।
অথচ; তোমাদের সভ্য সমাজ আমাকে মেনে নেয়নি।
নাম দিয়েছে পথশিশু!
অনাথ বলে কাছে টেনে নেয়নি কেউ,
খেতে দেয়নি দু’মুঠো ভাত।
দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে,
চৌকাঠ পেরোবার আগেই!
অথচ; ভুল করে কেউ জানতেও চায়নি,
কতটা দুঃসহ যন্ত্রণার একেকটি রাত।
মায়ের আঁচলের গন্ধ জানিনা!
ঠাঁই মেলেনি কোনো কোলেই।
ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়নি কেউ,
মমতার স্পর্শও বুঝিনা।
তবুও এ শহর আমাকে ছাড়েনি;
ছাড়তে চাইনা আমিও।
কবিতা অথবা ফুল
আজমল হুসাইন
সেদিন কালো মেঘে ডাকা ছিল তোমার আকাশ
অতঃপর কিছু ধ্রুপদী কণ্ঠস্বর-
রূপায়িত করে স্বর্গীয় নিবাস!
এখন প্রত্যেহ বিলাও তুমি গোলাপি আদর
আমি তোমার সন্তান;
তুমি আমার কবিতা অথবা ফুল।