জোসনা রাতে জাগে আমার প্রাণ...
আবুল কালাম আজাদ
[গত সংখ্যার পর]
তারা আমাদের বাড়িতে......।
আরে বোকা ছেলে! তারা বলতে তাদের বইকে বুঝিয়েছি। আরও বলবো, হালজমানার সব লেখক ছিল আমাদের বাসার ডাল-ভাত। হুমায়ূন-জাফর ভাতৃদ্বয় তো আলুভর্তা। আমার বাবা মানে ছেলের দাদা গল্প/উপন্যাস লিখতেন। তার লেখা এখনও ট্রাঙ্কে তালাবদ্ধ আছে। তার ‘প্রেমের বাসনা’ উপন্যাসটা তো আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আর আমার দাদাও ছিলেন গীতি কবি। তিন গ্রামের লোক এক নামে চিনতো-কবি সৈয়দ ইমদাদ আলীকে। আমার মধ্যে অবশ্য লেখালেখির কিছু নেই। ছেলে লেখালেখিটা পেয়েছে তার দাদা-পরদাদাদের কাছ থেকে।
তুমি এসব মিথ্যা কথা বলবে?
প্রিপারেশন ছাড়া আর কী বলবো বল? এক হাতে ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে পুঁই শাক, গোল আলু, টমেটো, পুঁদিনা পাতা আরও অনেক কিছু। আরেক হাতে দুইটা দেশি মুরগি। অনবরত কক কক করছে। এরকম অবস্থায় সাংবাদিক ধরলে .......। বাদ দে তোর গল্প লেখা। চল কোথাও থেকে বেরিয়ে আসি।
সে কথাই তো গতকাল বলতে গিয়েছিলাম। বললে, সাতশ’ ত্রিশ দিন পর রিক্রেশান লিভ পাবে তখন যাবে।
তাই বলেছি? কি আশ্চার্য! আমার ক্যাজুয়াল লিভ-ই তো কত পড়ে আছে। রিক্রেশান লিভের জন্য অপেক্ষা করব কেন? কখন বলতে গিয়েছিলি?
ঐ যে, যখন বই পড়ছিলে।
বই পড়ার সময়!
বাবা মুখ ভেঙচাল। তারপর বললেন, বই পড়ার সময় তুই এরকম কথা বলতে গেলি কেন? লেখকরা গল্প/উপন্যাসে পাঠকদের একটা ঘোরের মধ্যে ঠেলে দেয়। আমি হয়তো তখন কোনো ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এরকম সময় কেউ বেড়াতে যাবার কথা তোলে? তুই ভীষন বোকা ছেলে। এরকম বোকা ছেলে লেখক ছাড়া আর কী হতে পারবে তা বলা মুশকিল।
লেখকরা বুঝি বোকা হয়?
অবশ্যই। বোকা না হয়ে আকাশ-পাতাল কল্পনা নিয়ে সারা জীবন থাকতে পারতো না। গঠনমূলক কিছু করতো।
এখন বলো, কোথায় বেড়াতে যাবে?
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
বাবা ঝট করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেয় না। একটু ভেবে নেয়। ভেবে নেবার সময় সে পায়ের ওপর আঙুল ঠুকে ঠিক তবলা বাজানোর মত করে। অবশ্য তাতে কোনো শব্দ হয় না। বেশ একটু ভেবে নিয়ে, এবং পায়ে আঙুল দিয়ে শব্দহীন তবলা বাজিয়ে বাবা বলল, সমুদ্র দেখেছি। নদী দেখেছি। পাহাড় দেখেছি। পাহাড়ি ঝর্ণা দেখেছি। শহর-বন্দর-গ্রাম দেখেছি। অনেক বিনোদন কেন্দ্র দেখেছি। একটা জিনিস দেখা হয়নি এখনও। সেটা হল বন-জঙ্গল। বনের ভেতর বসে গল্প করতে কেমন লাগে তা জানি না। বনের ভেতর বসে খাবার খেতে কেমন লাগে তা জানি না। বনের ভেতর বসে বই পড়তে কেমন লাগে তা জানি না। বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে কেমন লাগে তাও জানি না। বনের ভেতর........।
বাবা, তুমি কি সুন্দরবন যেতে চাচ্ছো?
বাংলাদেশের বনের রাজা তো সুন্দরবনই। এ বন বিশ্বেরও একটা বিস্ময়। সে বন দেখা না হলে তো বন দেখা হয় না। তবে এবার অতো দূরে যেতে চাচ্ছি না। দিনে দিনে বেরিয়ে আসা যায় এমন ছোট-খাটো বনে আগে যাই।
কোন ছোট-খাট বনে যেতে চাও?
এই ঢাকার আশেপাশেই। ধর, গাজীপুরের চন্দ্রার গজারি বনে যাওয়া যায়, তুই গল্পে যে বনের কথা বলেছিস।
অন্তর অবাক হল, সেই সাথে খুশিও হল। সে গল্পের প্রথম লাইন লিখেছিল-একদিন চন্দ্রার বনে। লাইনটা লিখতে না লিখতেই তার চন্দ্রার বনে যাওয়ার সুযোগ এসে গেল! তাহলে বন থেকে ফিরে এসে গল্পটা শেষ করা যাবে। গল্পটা নিশ্চয় সাহিত্য মানে উৎরে যাবে।
অন্তর বলল, আমার কোনো আপত্তি নেই বাবা। আমার খুব ভাল লাগছে যে, তুমি সেধে আমাকে চন্দ্রার গজারি বনে নিয়ে যেতে চাচ্ছো। থ্যাঙ্ক ইউ বাবা, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। ইউ আর গ্রেট। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের চেয়েও গ্রেট।
এই চুনোপুটিকে অত বড় ব্যক্তির সাথে তুলনা করে ফেললি?
আলেকজান্ডার নিশ্চয় তার ছেলেকে সেধে কোনো জঙ্গলে বেড়ানে নিতে চায়নি।
তার কি তোর বয়সী ছেলে ছিল? শুনেছি সে অল্প বয়সে মারা গেছে। আর ছেলে থাকলেও তার সে সময় হত না। সে ছেলেকে নিয়ে যেতে রাজ্য জয়ের জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে। তবে রবীন্দ্রনাথ কিন্তু তাঁর ছেলেকে নিয়ে শালবনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছেলের সাথে শালবনে বেড়ানোর সময়ই তিনি নবেল প্রাপ্তির খবর পান।
আমাকে নিয়ে বেড়ানোর সময় তুমি কোনো খবর পাবে না বাবা?
আমি কী খবর পাব? আমার জন্য এই জগতে কোথাও কোনো খবর নেই। যাকগে, কথা কম কাজ বেশি। কাল সকালেই আমরা চন্দ্রার বনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছি। আজকের দিন-রাত্রিটুকু প্রস্তুতির জন্য।
মাকে জানাবে না?
তাকে রাতে জানালেও চলবে।
বাবা ঘর থেকে চলে যেতেই অন্তর গল্পটা সাথে যুক্ত করল কয়েকটা লাইন-সেখানে ফ্লাইং সসারে করে ভিন গ্রহের এক প্রাণী নেমে এল। তবে সে সেখানে ইচ্ছে করে আসেনি। তাকে ফেলে রেখে গেছে তার পৃথিবীর এক খারাপ লোক। প্রাণীটার চেহারা অদ্ভূত। গায়ের রঙ সবুজ। ছোট ছোট দুটি হাত। প্রতি হাতে তিনটা মাত্র আঙুল। চোখগুলো পিটপিটে। তাতে কোনো পাঁপড়ি নেই। প্রাণীটার উচ্চতা মাত্র সারে তিন ফিট।
তারপর সে গল্পের খাতা বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি দিল। ওর মনে তখন খুব আনন্দ। আনন্দে ওর নাচতে ইচ্ছে করছিল। নেচে নেচে গাইতে ইচ্ছে করছিল, আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে।
কিন্তু সে তা করতে পারবে না। দরজার ফাঁক দিয়ে মাজেদা তার নাচ দেখে ফেলতে পারে। আর তাতেই সে বাঁধিয়ে দেবে ঝামেলা। এই পাবলিক থাকে শুধু ঝামেলা বাঁধানোর তালে। ছুটে গিয়ে মাকে বলবে, খালাম্মা, ভাইজানের মাথা আউলা হয়ে গেছে। কেমন জানি উথাল-পাথাল লাফাইতেছে।
রাতে কথাটা মাকে জানানোর কথা ছিল। কিন্তু মা জেনে গেল আগেই। বিকেলে মা এসে চড়া গলায় বলল, কী শুনছি এসব?
কী শুনছো মা?
অন্তর ভাবল, লেখাপড়ার কোনো ব্যাপার। হয়তো অংকের টিচার আশুতোষ বাবুর সঙ্গে মা’র দেখা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, এবারও অন্তর ম্যাথমেটিক্স-এ থার্ড পজিশনে আছে। ম্যাথমেটিক্স-এর মত মধুর একটা বিষয় ছেলেটার মাথায় ঢুকছেই না। আইনস্টাইনের মত একটা অটিস্টিক পাবলিক......।
আশুতোষ স্যারের কাছে ম্যাথমেটিক্স বিষয়টা মধুমাখা। এর প্রমাণ, আইনস্টাইনের মত অটিস্টিক পাবলিক ম্যাথমেটিক্স-এ অতিশয় দক্ষ ছিলেন। আইনস্টাইন অটিস্টিক ছিলেন আশুতোষ বাবু এ কথা কোথায় পেয়েছেন কে জানে।
না, মা অংক স্যার বিষয়ক কোনো কথা বলল না। বললন, তুই আর তোর বাপ নাকি জঙ্গলে যাচ্ছিস?
এ কথা তোমাকে কে বলল মা?
দেয়ালেরও কান আছে।
দেয়ালের কান নেই মা। এ কথা তোমাকে মাজেদা বলেছে। ও দরজায় কান পেতে ছিল। আমি আর বাবা কথা বলেছি তা ও শুনেছে। মা, তুমি ওকে এ অভ্যাস বাদ দিতে বলো। অন্যের দরজায় কান পাতা ঘোরতর অন্যায়।
ও আছে বলেই তোদের বাপ-বেটার গোপন প্ল্যান-প্রগ্রামের কিছু খবর আমার কাছে আসে।
এটা কোনো গোপন প্ল্যান-প্রগ্রাম না মা। আমরা পালিয়ে জঙ্গলে যাবার প্ল্যান করিনি। রাতে এ ব্যাপারে তোমার সাথে আলোচনা হত। তুমি মাজেদাকে সতর্ক কর প্লিজ।
মাজেদা দরজা ঠেলে ঘরে এসে হাজির। সে নিশ্চিত কান পেতে ছিল দরজায়। বলল, আমি কান পাতি নাই ভাইজান। এইসব বদ অভ্যাস আমার মধ্যি নাই। ছোট বেলা থিক্যাই বাপ-মা আমার মধ্যি সব ভাল অভ্যাস ঢুকাইছে। আমি আপনের ঘরে আসতেছিলাম টিস্যু পেপারের জন্যি। নাক দিয়া খুব সিনাত ঝরতেছিল। তখনই কথাগুলা শোনা গেল।
আর তুই মাকে বলে দিলি?
ওমা! বলবো না? আমি কার আন্ডারে চাকরি করি?
রাতে খেতে বসে বাবা কথাটা তোলার আগেই মা বলল, তোমরা কাল জঙ্গলে যাচ্ছো?
বাবা বলল, এভাবে বললে কেমন যেন শোনায়?
কিভাবে বলবো?
সমুদ্র ভ্রমণে, নদী ভ্রমণে বলে না মানুষ? তেমনি বন ভ্রমনে বা বন বিহারে বলতে পারো।
তোমরা নাকি কাল বন বিহারে যাচ্ছো?
হ্যাঁ, আমরা কাল বন বিহারে যাচ্ছি। গাজীপুরে চন্দ্রার গজারি বনে। সারাদিন বাপ-বেটা মিলে বনে বনে ঘুরবো। পাতার মর্মর শব্দ শুনব। পাখির কূজন শুনবো -অবশ্য পাখি যদি থাকে। এদেশের বনেও নাকি আশঙ্কাজনক হারে পাখি কমে যাচ্ছে। তারপর বনের মধ্যে বসে গল্প করবো। ক্ষিধে পেলে খাব। বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা। তুমি যদি ইচ্ছে.......।
কিন্তু এতদিন ঘরে বসে ঘামাচি গালিয়ে কাল বন বিহারে যাবার দিন করলে কেন?
এতদিন ঘামাচি গালিয়েছি! আচ্ছা, না হয় গালিয়েছি। তো কাল গেলে সমস্যাটা কী?
কাল না ছেলের স্কুল খুলছে, এবং কালই রেজাল্ট বের হবে।
আ!
বাবা হাঁ করে মুখে ভাত তুলতে যাচ্ছিল। তার আর মুখে ভাত তোলা হল না। হাত মাঝ পথে এক মুঠো ভাত নিয়ে আটকে গেল। মুখও হাঁ হয়ে রইল। সেই হাঁ-এর ভেতর দিয়ে বের হল একটা শব্দ-আ...!
অন্তরের মুখও ফ্যাকাশে হয়ে গেল। স্কুল বন্ধের পর থেকেই সে বলছে, হাতে সপ্তাহ খানেক সময় অবসর আছে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক যে কালই শেষ-এ কথা তার মনেই আসেনি। সে নিশ্চিত হল, তার সাধের প্ল্যান ভেস্তে যাবে। চন্দ্রার গজারি বন দেখা হবে না। গল্পটা যদি শেষ করতেই হয় তো কল্পনাকে সাথী করেই চলতে হবে, না হলে স্টপ।
বাবা এবার বাঁ হাতের আঙুল টেবিলে ঠুকতে লাগলো। এবার একটু শব্দও বের হচ্ছে। অবশ্যই শব্দটার একটা তাল আছে। যে তবল বাজাতে পারে সে বলতে পারবে এটা কী ধরনের তাল। কাহার্বা, দাদরা, নাকি ত্রিতাল, না অন্য কোনো তাল। বাবা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাবছে। কিছুক্ষণ টেবিলে আঙ্গুল ঠুকে বাবা বলল, কুচপরোয়া নেহি!
মা রেগে বলল, উর্দু বলছো কেন? তুমি কি রাজাকার ছিলে? তোমার মধ্যে কি এখনও পাকিস্তান প্রীতি রয়ে গেছে?
এটা উর্দু ভাষা? দুঃখিত-খুবই দুঃখিত। দাঁড়াও কুলি করে আসি।
বাবা কুলি করে এল। অন্তর বলল, বাবা, অন্য ভাষা বললেও কি কুলি করতে হবে?
না। কারণ অন্য ভাষা আমাদের ওপর কেউ চাপিয়ে দিতে চায়নি। এই উর্দু ভাষাটা কুচক্রিরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই ভাষা চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ভাষা তথা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি সব কিছুকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল। বাঙালি জাতি হিসেবে পৃথিবী থেকে আমাদের চিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিল। এই চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। তাই এই ভাষা মুখে এলে কুলি করতে হবে।
মা বললন, এখন বলো, কাল বন বিহারে যাবে কিনা?
যাবো।
যাবে?
রেজাল্টের দিন যে রেজাল্ট গ্রহীতাকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এরকম কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। তুমি যাবে-তুমি গিয়ে ছেলের রেজাল্ট জেনে আসবে।
ছেলের ভেতর তো একটা টেনশন কাজ করবে।
টেনশন কেন?
রেজাল্ট কী না কী হয়।
বাবা তাকাল অন্তরের দিকে। বললন, কিরে, টেনশনে থাকবি?
অন্তর কিছুতেই ভ্রমণটা মিস করতে চায় না। কারণ, এরকম সুযোগ সব সময় আসে না। সে বলল, না, রেজাল্টের ব্যাপারে আমার কোনো টেনশন নেই। আমি পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। হয় একটু খারাপ হবে, নয় একটু ভাল হবে। যাকে বলে ঊনিশ-বিশ পার্থক্য। এ নিয়ে টেনশনের কিছু নেই।
বাহ! চমৎকার কথা! ভেতরে কথার ভান্ড না থাকলে লেখক হওয়া যায় না। এখন মনে হচ্ছে তুই লেখক হতে পারবি। লেখক মানে কথাশিল্পী। কথার জাদুকর। আর টেনশন একটু থাকলেও ক্ষতি নেই। যে কোনো ঘটনার সাথে অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যুক্ত থাকলে দু’টো ঘটনাই স্মৃতিতে বসে যায় জবরদস্তভাবে। যখন তোকে কেউ জিজ্ঞেস করবে, চন্দ্রার বনে যেন কবে গিয়েছিলি? তুই বলবি, যেদিন সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট হল। আবার যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তোর সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট যেন কবে হল? তুই বলবি, যেদিন চন্দ্রার বনে বেড়াতে গেলাম। বনে বসেই তো মা’র ফোন পেলাম যে, আমি ফার্স্ট হয়েছি।
ফার্স্ট হব এমন কথা বলো কী করে?
হতেও তো পারিস। শোন, আমার স্কুলের অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলের কথা তেমন মনে নেই। কিন্তু যেবার এইট থেকে নাইনে উঠলাম......।
বাবা!
অন্তর বাবাকে থামিয়ে দিল। কারণ বাবা এইট থেকে নাইনে উঠেছিল এক বিষয়ে ফেল করে। বাবা অংকে ফেল করেছিল। দাদা তাকে মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন। অন্তর চায় না যে, মা এই কথা জানুক। তাহলে মা উঠতে বসতে বলবে, তুমি অংকে ফেলটুস ছিলে বলেই তো ছেলের অংকে মাথা নেই। তোমার কাছ থেকেই এসেছে এটা।
মা বললেন, মনে হচ্ছে তুমিও কথার জাদুকর হয়ে যাচ্ছো। মুখে এমন খই ফুটছে কেন শুনি?
বাবা প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, রেজাল্ট পাওয়া মাত্র তুমি ফোন করে জানিয়ে দিও।
ছেলে যদি প্লেস পায় তাহলে কি আমি বিজয় স্তম্ভে দাঁড়াবো?
ছেলের হয়ে যদি মাকে বিজয় স্তম্ভে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয় তো দাঁড়াবে। না হলে ওখানটা খালি থাকবে।
তবু তুমি যাবে?
হ্যাঁ যাবো। প্ল্যান ইজ প্ল্যান। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার না যে শুধু প্ল্যান করবো কিন্তু বাস্তবায়ন করবো না।
তুমি দিন দিন খুবই বদলে যাচ্ছো-অদ্ভূত হয়ে যাচ্ছো।
মানুষ তো বদলাবেই। বদলায় না পশু-পাখি। একটা বাঘ কিংবা সিংহ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই আচরণ করে যায়। তাদের জীবনে নো চেঞ্জ-নো ডিফারেন্স। একটা ভাবসম্প্রসারণ পড়েছো না-তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ। এই মানুষ হওয়াটাই চেঞ্জ। এই চেঞ্জের কারণেই আমরা হোমোসেপিয়েন্সরা পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ান্ডার্থালদের বিতারিত করে টিকে আছি।
তুমি এতদিনে মানুষ হচ্ছো?
না, অধিকতর মানুষ হচ্ছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ হতেই থাকব।
[ক্রমশ..]