দু’টি অণুগল্প : আরিফুর রহমান



দু’টি অণুগল্প
আরিফুর রহমান


ম্যাজিক লেন্স

-ও চা-চা, ক্যামন আছেন?
আলম সাহেবের কাছাকাছি এসে দু’জন যুবকের একজন বেশ জোরেসোরে প্রশ্নটা করল। তিনি বিরক্ত হলেন। কিন্তু মুখে সে ভাব প্রকাশ করলেন না।
-আপনার চোখে এমন চশমা ক্যান? অনেকটা ওই চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করা ডাক্তারের মতো। আবার হাতে হোমিও ডাক্তারের ছোট্ট বাক্সও দেখি!
আলম সাহেবের বিরক্তির মাত্রা বাড়ল। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর হঠাৎ পিঁপড়ার প্রতি তাঁর আগ্রহ বেড়েছে। যেদিন জেনেছেন কোরআন শরীফের একটি সুরার নাম নমল, যার অর্থ পিঁপড়া, সেইদিন থেকে। সুযোগ পেলেই ম্যাজিক লেন্স নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পিঁপড়ার জীবন-যাপন দেখতে।
-তুমি হানিফ ঠিকাদারের ছেলে না? দুর্জয়?
-জ্বী চাচা, আর ও আমার বন্ধু।
-আহ্, আস্তে কথা বল। আমি তো কানে কম শুনি না।
-অ! তা চাচা দেয়ালের মধ্যে কি দ্যাখেন? এট্টু কন।
-পিঁপড়া দেখি, পিঁপড়া। তোমরা তোমাদের কাজে যাও বাবা। যাও।
তিনি দেয়ালে সারিবদ্ধ পিঁপড়া দেখায় মনযোগী হলেন। দুর্জয় তার বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে গলাটা একটু নামিয়ে বিষোদ্গার করতে লাগল, ‘পাগল হইছে, পাগল। অবসর নেয়ার পর এমন হইছে, বুঝলি? চাচিরে দেখতে পারে না, উনি পিঁপড়া দ্যাখে। বুঝলি, আমাদের বাসা থেকে উনার বাসার দূরত্ব খুব বেশি না। আমরা সব জানি...’
আলম সাহেব সব স্পষ্ট শুনতে পেলেন। বুঝলেন, দুর্জয় তাঁর শ্রবণ যন্ত্রের বিষয়ে কিছুই জানে না। ভেতরে ভেতরে রেগে গেলেও তিনি মুখে কিছুই বললেন না। ওরা রাজনৈতিক পাওয়ার পাওয়া ছেলেপেলে। শুধু লেন্সের ছোট্ট বক্সটা খুলে আগের লেন্স পাল্টে দু’টো নতুন লেন্স লাগিয়ে ওদের দিকে তাকালেন। সাথে সাথে আলম সাহেবের থেকে ওদের দূরত্ব এক ঝটকায় অনেকটা বেড়ে গেল।
-আমরা যাইগা চাচা। আপনিও বাসায় যান। পিঁপড়া দেইখা কাম নাই।
যেন অনেকটা দূর থেকে কথাগুলো বলল দুর্জয়। আলম সাহেব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।


প্রকৃতির প্রতিশোধ

-সালাম বস।
-হুম। বিকালে যারে আন্ছোস তার খবর কি?
-ওয়েটিং রুমে রাখছি। এট্টু পর পর খালি জিগায় ‘আমার পোলা কখোন আইবো?’
-হু। শোন্, অপারেশন আজই করন লাগবো। উত্তরার পার্টি চাপ দিতাছে। জসীম উদ্দিন রোডের লুলা বুড়াডা মইরা গ্যাছে। তার জাগায় নতুন লোক বহাইবো তারা।
-আইচ্ছা।
-কি আইচ্ছা! শোন্, শরবতের সাথে কড়া ডোজ দিবি, য্যান হাত পা কাটলেও ঘুমায়া যায় দশ মিনিটের ভিত্রে।
-ঘুমানোর পর অপারেশন করন যায় না?
-আহ্, তোরে কতদিন কইছি ঘুমন্ত মানুষের মুখ দ্যাখলে আমার আব্বার কথা মনে হয়। নিজের আব্বার চোখ উপড়ামু আমি? শালা!

বয়স্ক লোকটার হাত পা শক্ত করে বাঁধা। মুখে সেঁটে দেয়া হয়েছে মোটা টেপ। একটা উত্তপ্ত শিক হাতে নিয়ে তৈরি কোরবান আলী। কিন্তু অজানা কারণে এই প্রথম তার হাত কাঁপছে।

একুশ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা গ্রামে ফিরছে। তারা মানে কেরামত আলী, কোরবান আলী এবং আব্দুল আজিজ। ষোল বছর আগে, কেরামত আলীর দ্বিতীয় বিয়ের পরদিন সকালে মিথ্যা অভিযোগে মার খেয়ে বাড়ি ছেড়েছিল কোরবান। আজিজ, জ্যেঠাত ভাই কোরবানের সঙ্গী হয়েছিল নিদির্¦ধায়। আজ তিনজনই গ্রামে ফিরছে। তবে টাকা-পয়সা, প্রভাব-ক্ষমতা খুইয়ে। আরো খোয়া গেছে কেরামত আলীর বাম আর কোরবান আলীর ডান চোখ।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট