পদাবলি : ০১






স্মৃতিময় তুমি
রেহমান আনিস

বদ্ধদ্বারে মাথা ঠুকে ঠুকে পৃথিবীর অনলে জ্বলছি
আর কতোকাল অপেক্ষা করতে হবে আমাকে?

জানালার ওপারে আলো, ধরণী আমাকে ডাকে
আমি ধরতে চাই, আলিঙ্গন করতে চাই তাকে।
আহারে অরুচি, অনিদ্রায় অস্থির হয়ে যাই আমি
দু’টি মায়াবী চোখ আর এক ঝলক হাসির নেশায়।

উদ্ভ্রান্তের মত ছুটতে থাকি অজানা কোন পথে
রক্ত চক্ষু, গুজব, সমালোচনা পিছে ফেলে।
শুধু জানি আমাকে বহুদূর যেতে হবে
বহুপথ পেরিয়ে, বহু বাঁধা অতিক্রম করে।

কাকচক্ষু মেলো, কাজলজলে ভাসতে ভাসতে চলে যাবো
মোহনার সীমা পেরিয়ে গভীর সমুদ্রের নীল জলে ।
ডুবে যাবো সাগরের বুকে হাতে হাত রেখে
তলদেশে সাঁতরে সাঁতরে খুজে বেড়াবো মণি মুক্তা।

আবারো জেগে উঠবো কোন এক পূর্ণিমা রাতে...
তীরে বসে দু’জনে দেখবো নক্ষত্রের যৌবন।
গ্যালাক্সির দীর্ঘ পথ চলতে চলতে হারিয়ে যাবো..
কালোকেশ  ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাবে
ভাজপড়া দু’টি চোখ বিলবিল করে আমাকে তাকাবে।
আমি ভাজ গুনে, রেখা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাব শতবর্ষ পূর্বে
যেদিন চোখে চোখ রেখে প্রথম দেখেছিলাম তোমাকে।



রক্তে কেনা নীলপদ্ম 
কাব্য কবির 

খোকা হৃদয়ে স্বপ্নের বীজ বুনে
অচিনদেশে গিয়ে নীলপদ্ম  নিয়ে ফিরে আসবে।
সাত সিন্ধু তেরো স্রোতস্বিনী পাড়ি
দিয়ে যেতে হয় সেখানে। মা-জননীর
কাছে বলে খোকা-
আমি নীলপদ্ম চাই,
আমি অচীনদেশে যাবো
আমি নীলপদ্ম নিয়ে আসবো সেখান থেকে।
মায়ের বক্ষে নেমে এলো তখন
শ্রাবণের কালো মেঘ, দুটি আঁখি ভিজে
গেলো কান্নার বৃষ্টিতে।

খোকা বলে, মা তুমি কান্না কর না।
আমি নীলপদ্ম নিয়ে ফিরে
আসবো তোমার বুকে।
খোকা সাত সিন্ধু, তেরো ¯্রােতস্বিনী পাড়ি
দিয়ে গেলো সেই অচীনদেশে,
সেখানে গিয়ে দেখে,
নীলপদ্মের দীঘির পাড়ে বাস করে
কাল নাগিনী। আশেপাশে দুষ্টু ছেলের দল।
খোকা ওদের সাথে যুদ্ধ করলো দীর্ঘ
নয় মাস। শত্রুর অত্যাচারে খোকার
দেহ থেকে বের হলো রক্ত,
রক্তগঙ্গার মতো হয়ে গেলো নীলপদ্মের দীঘি।

অবশেষে, শত্রুকে পরাজিত করে খোকা
নিয়ে এলো নীলপদ্ম। নীল পদ্ম দেখে
মায়ের মুখে ফুটলো
টুকটুকে লাল গোলাপ রাঙা হাসি....



সব নদী গাছ
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

সবুজ দুপুরের পাশ দিয়ে যত নদী বয়ে গেছে
কোনো পান্থশালা থেকে তাদের ডাক আসেনি
বাসস্ট্যান্ড থেকে চেনা পথের বন্ধু
হাতনাড়া দিয়ে ঝড়ের পথে কথা বলেনি
যত উপনদী শাখানদী সব এক একটা গাছ
বাড়ির পাশ দিয়ে এলেও এখন হাতের নাগালের বাইরে
শাসকের ভোঁতা বইয়ে নদীর সংজ্ঞায়
আগামীর সারা মন আর্দ্র হয়ে উঠতে দেখে
পাঠ থেকে নদীনাম উঠে গেছে সব
ভুলে গেল প্রতি পথে জল দিয়ে মুখ দেখেছিল সে

জলের ভুল নামতায় মাটি তো মরুভূমি
নদীপথে ছাড়া বৃষ্টির গান কোথায় ?

এখনও কেউ কেউ জলে জলে কথা বলে
নদীপথে উড়ে যায় সব পাখি
মাটি তার হারিয়েছে ডানা
সব ছেড়ে মাঝরাতে মুখোমুখি হয়েছে যখন
সব নদী হয়ে গেছে গাছ ।



চির সবুজের বাংলাদেশ
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ

রেসকার্স ময়দান...
লাখো জনতার ভিড়, একটি প্রত্যাশায়
যে স্বপ্ন দীর্ঘ লালিত হৃদয়ে দানা বাঁধা।

বাস্তবে রূপায়িত হবে..
একটি প্লাটফর্ম থেকে একটি কন্ঠ থেকে
অধির আগ্রহে জনতার ভিড়

কখন ? কখন ঘোষণা?
সেই মহানায়কের কণ্ঠ হতে...
যার যা আছে তা নিয়েই বেড়িয়ে পড়ো

অবশেষে...
মহান নেতার কণ্ঠে বেড়িয়ে এলো
একটি বিপ্লবী বাণী, যাকে লালন করে
আমরা পেলাম একটি স্বাধীন সার্বোভৌম
রাষ্ট্র। চির সবুজের বাংলাদেশ।


মসি হোক জয়ের হাতিয়ার
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী

জগতে আছেন যতো জ্ঞানীগুণী জন
লেখাপড়া শিখে তাঁরা দেশসেরা ধন।
সময়ে করেন তাঁরা সময়ের কাজ
দেশের ধ্বজা ধরেন নেই রব সাজ।

শিশুগণ দাও মন নিজ নিজ পাঠে
অমূল্য সময় যেন লিখে পড়ে কাটে।
পড়ার সময় যেন করো নাতো হেলা
পাঠশালার পঠন জীবনের ভেলা।

পাঠ শেষে খেলো মাঠে কে করিবে মানা?
খেলাধুলা প্রয়োজন সকলের জানা।
অসি নয় মসিতেই আনো জয় ভূমে
জনতার হৃদ মাঝে থাকো যেন চুমে।

জীবনে চলার পথ কতো না বন্ধুর !
থেমে থাকা চলবে না হোক না সিন্ধুর।
মনে হও বলিয়ান ভয় করো জয়
কলুষতা দূরে রাখো হয় শুধু ক্ষয়।

মানবতা সেরা গুণ সব থেকে বড়ো
দেশটাকে ভালোবেসে অতি যত্মে গড়ো।
গুরুজনে করো নতি অহমিকা ছেড়ে
সততার দীপ জ্বেলে তবে উঠো বেড়ে।

অবহেলা নয় যেন বৃদ্ধ পিতা-মাতা
ভালোবাসা থাকে যেন হৃদয়েতে পাতা।
উপকার করো তবে কারো ক্ষতি নয়
তোমরা পার আনতে নব নব জয়।


গাঢ় রঙ
শম্পা মনিমা

ট্রেনটা থামে, শিরশিরে হাওয়া শরীর জুড়ে ছুঁয়ে হাত ধরে নামায় স্টেশনে, বুনো রোদ এলো কোমর জড়িয়ে বিলাসী আগুন ছুঁয়ে হাঁটছে পাশাপাশি, যতগৃহ হেঁটে পার হাওয়া যায় না, তুমি তো সংসারী নও, তাইতো তোমার দেওয়া চৌকাঠে আল্পনা দেওয়া হয় না, কুশল খবর নিয়ে যায় না, হেঁটে চলি তুমি আমি, পুরোটাই সুতোয় বাঁধা মাঠঘাঠ তাকিয়ে আছে, দেখছে আমাদের নিলাজ প্রেম, দূরে ছুটির ঘন্টা সুর ভেসে আসছে, চুল বেয়ে নামছে তোমার আদর, নাভিতে ফুটছে গাঢ় পলাশ, মাঙ্গলিক চিহ্ন জন্মগোপনে থাক, ফিরতি পথে পাখিরা বসবে উড়াউড়ি আমাদের ঠোঁটে, খাপছাড়া সংলাপে, বুঝবে আশ্চর্য সব স্টেশন পার করেছিল জীবনে গাঢ় রঙ, রাতে এসে অশ্বমেধের ঘোড়া বলবে, পালানো যুদ্ধে, হারানো শতাব্দীর লুকানো আমাদের সংসার, পরের স্টেশনে করছে অপেক্ষা নিয়ে আজও গাঢ় রঙ।



তিনটি কবিতা
অনিন্দিতা মিত্র


অসমাপ্ত শব্দমালা
দুঃখরাত নিঃসঙ্গ জোছনায় ভর করে আসে ভোর, চৈতি হাওয়ায় মিলিয়ে যায় বাঘবন্দী খেলার হিসেব। আশ্রয় খোঁজে ক্লান্ত  নীড়হারা পাখি, বিবর্ণ স্মৃতিকে আগলে রাখে বিষাদ।


পদ্মপাতার জলতরঙ্গ 
স্বপ্নধোয়া জলে টুপটাপ ঝরে যায় ফিকে সম্পর্ক, উপচে পড়া চোখের জল গতি হারায়, অশ্বনদীর জলে ভেসে যায় জঠরে লুক্কায়িত চিরকালীন অভিমান ।


সমুদ্র-মুখর 
এঁকে চলি সমুদ্র-মুখর দিনরাতের ছবি। গত জন্মের অভিশপ্ত রাত ঠেলে আসে প্রেম, হতে চাই নির্ভীক জাতিস্মর।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট