পারিপার্শ্বিক গল্পের বই
‘শহরের অসম প্রেম’
অনিক মাযহার
‘শহরের অসম প্রেম’ সতেরোটি ছোটগল্পের একটি সংকলন। প্রতিটি গল্পই পাঠকের কাছে ধরা পড়বে খুব পরিচিত হয়ে। কারণ এগুলো প্রায়ই ঘটছে বা ঘটেছে আমাদের জীবনে। বিশেষ করে আমরা যারা শহরে থাকি, তাদের মনে ছড়াতে পারে আরো গভীর রোমাঞ্চ।
চাকরির উদ্দ্যেশে বাবা তার মেয়েসহ পরিবারকে গ্রাম থেকে নিয়ে যায় শহরে। আর এখানেই বিচ্ছেদ ঘটে ভালোবাসার সর্ম্পকের। যা আমরা দেখতে পাই, ‘বসন্ত এলে মনে পড়ে’ গল্পে। উঁচু-উঁচু দালানের ভীড় ঠেলে শহুরে জীবনে সকালের স্নিগ্ধ রোদ দেখা বেশ কষ্টসাধ্য একটা বিষয়। কিন্তু অনেকেরই ইচ্ছা থাকে সকালের সাফল্য গাঁথা রৌদ্র ছুঁয়ে দিনটা শুরু করার। পরিশেষে যখন রোদের দেখা পাওয়া যায়, তখন তা হয়ে ওঠে সাবালোক। যা সকলেই এড়িয়ে চলতে চায়। এমনই স্নিগ্ধ রোদের পরশ না পাওয়ার আপসোস আমরা টের পাই ‘সকালের রোদ’ গল্পে।
আলোমতি, ষোলো বছর বয়সের এক মেয়ে। বাবা বিছানায়, মা অনেক দিন হল বিদায় নিয়েছে। তাই সংসারের ভার সামলাতে তাকে চালাতে হয় একটি টঙ (দোকান)। সেখানেও শান্তি নেই তার। মানুষরূপি কিছু শকুনের দৃষ্টি হরহামেশা থাকে তার ওপর। আর তখনই রক্ষাকবচ হয়ে ছুটে আসে গফুর। যে অনেক দিন হল হারিয়েছে বাকশক্তিসহ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। যতদূর জানা যায়, নিজের চোখের সামনে মিলিটারিদের হাতে বড় বোনকে ধর্ষণ ও হত্যা হতে দেখে। ফলে তার আজ এমন দশা। এমনই সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে ‘রক্ষাকর্তা’ গল্পে।
কিছু সফলতা অনুপ্রেরণা যোগায় অনেকের পথ চলায়। তেমনই একটা সফলতার গল্প ‘ভাগ্য বদল’। যেখানে মনির স্নাতক পাশ করে বেকার সময় কাটাচ্ছিল গ্রামে। কিন্তু এ জীবন কখনোই পছন্দ না তার। ঘুরে দাঁড়াতে চায় সে; কিন্তু সরকারি চাকরির পিছনে ছুটবে না। কেননা, তেমন টাকা-পয়সা বা চেনা-জানা মানুষ কোনোটিই নেই তার। তবুও আশাহত হয়নি কখনো। নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষে একদিন পাড়ি জমায় শহরে। ঠাঁই মেলে চাচার বাসায়। ভর্তি হন স্নাতকোত্তর করার জন্য। পাশাপাশি খুঁজতে থাকে চাকরি। এভাবেই অনেক খোঁজাখুঁজির পর ডাক আসে একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে। বেশি কিছু না ভেবে ঢুকে যায় সেখানে। দিনরাত চরম পরিশ্রম করতে থাকে। ওদিকে তার থাকা নিয়ে চাচার সাথে চাচির প্রায়ই বাঁধতো বাকবিত-া। এক পর্যায়ে মেসে উঠতে হয় তাকে। যাতে খরচ চালাতে গিয়ে আরো হিমশিম খেতে হয়। এভাবেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার হয় দুটি বছর। বের হয় স্নাতকোত্তরের ফলাফল। সফলতার সাথেই পাশ করে সে। তারপরই খুলতে থাকে ভাগ্যে দুয়ার।
গ্রামের ছেলে সুবোধ। শহরের একটি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসে। কিন্তু বাস্তবে স্বপ্নগুলো তার থেকে অনেক অসম, তাই তাদের থেকে পাশ কাঁটিয়ে চলে। পড়াশোনায় সুবোধ খুব ভালো। নিয়মিত ক্লাস করা, পড়া রেডি করা, এ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা, ক্লাসটেস্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা ইত্যাদিতে কোনো গাফিলতি নেই তার। হয়তো এসব কারণে ভার্সিটিতে ম্যাডাম থেকে শুরু করে অনেক সহপাঠিই খুব পছন্দ করে তাকে। অনেকেই গড়তে চাই প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু এসব থেকে সুবোধ যতটা পারে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। কারণ এসব অসম সম্পর্কগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার অর্থ-কড়ি, সময়, যোগ্যতা কোনেটি নেই তার। কিন্তু শিক্ষিকা তাকে প্রেমের সর্ম্পকে জড়াতে বাধ্য করে। ছাত্র হয়ে শিক্ষিকার সাথে অসম প্রেম সুবোধ মেনে নিতে পারে না। এভাবেই সুবোধের শেষ হয় প্রতিটি দিন। আবারো জেগে ওঠে অসম সম্পর্কগুলো। যতটা পারা যায় দূরে রেখে বড় হওয়ার সংগ্রামে। এমনই নানা অসম সম্পর্কের উপাখ্যান ভেসে ওঠে ‘শহরের অসম প্রেম’ গল্পে। এ গল্পকে কেন্দ্র করে গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে।
শুধু এ কটা নয়, তরুণ লেখক মোহাম্মদ অংকন সবগুলো গল্পে এমন সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন আমাদের ব্যস্ততম জীবনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাকে। প্রতিটা গল্প খুবই জীবনঘনিষ্ঠ ও বাস্তবমুখি। আশা করি, গল্পগুলো মন কাড়বে সকল পাঠকের।
গল্পগ্রন্থ : শহরের অসম প্রেম
লেখক : মোহাম্মদ অংকন
প্রচ্ছদ : আল নোমান
প্রকাশক : চর্যা প্রকাশ
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২০
মূল্য : ২৩০ টাকা।
অনিক মাযহার, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ,
৩৯, জেল রোড, ঘোপ যশোর।