পদাবলি : ০১




উপমার উপমা
লুৎফর রহমান রবি

তীব্র দাবদাহনের মাঝে গলে পরা হাজারো বৃষ্টি ফোঁটার মধ্যে থাকা প্রথম বৃষ্টি ফোটা তুমি।
রংধনুর সাঁত রং এঁর মাঝে সবচেয়ে গাঢ় আকাশী রং টা তুমি,
যাকে আকাশ ধরে রাখলেও সে তার নিজের আলোয় আলোকিত।

তুমি কোকি এঁর কুহু কুহু গান।
যে গান কোন বীণার তাঁর ছাড়াই হৃদয়ে বাজতে থাকে অহর্ণিশ।
তুমি রাখালের বাঁশির সুর, যা আমাকে সুদূরে ডেকে নিতে চায়।
তুমি বকুল ফুলের মিষ্টি সুভাষ,- যা আমায় মুগ্ধ করে প্রতিবার।

তোমাকে সব সুন্দরের উপমায় খুব সহসায় মানিয়ে যায়,
আর আমি তোমাকে জানি সকল উপমার উর্ধ্বে।
তোমাকে রাখতে চাই উপমারও উপমা হিসেবে।


ভয়ংকর সুন্দর এক নদী 
জাহিদ হাসান তুহিন 

এইবার শান্ত হয়ে
চোখের দিকে তাকাও
ডুব দাও গভীরে
ভয়ংকর সুন্দর এক নদী।
চারপাশে কাশফুল আর ধুতরা ফুটে আছে।
তুমি নদী পাড়ের মেয়ে
রোদে পোড়া শরীরের মাঝি তোমার প্রেমিক।
শরীর জুরে মাটি আর আটশে মাছের গন্ধ
ভিজে লুঙ্গিতে লেগে আছে প্রেমের চিহ্ন।
তারপর আস্তে আস্তে
বুকের বামপাশে দৃষ্টি দাও
আমি আবারও বলছি
শরীরের উপরে জেগে ওঠা বক্ষ নয়
তারও গভীরে
রক্তাক্ত হৃদয়ে
সেখানে কবর দাও তোমার অনুভূতি।
মুক্তি দাও সদ্য জেগে ওঠা যৌবন
তোমার প্রেমিক ডুবে গেছে পদ্মার বুকে।
সাদা কাশফুল কানে গুজে
চুমুক দাও ধুতরার মুখে।
আস্তে আস্তে ডুবে যাও পড়ন্ত সূর্যের মত
শান্ত চরের মাটির গভীরে।



ঘড়ি
সালমা বিনতে শামছ

শান্ত- সব হয়ে আছে শান্ত,
তীব্রতা- ভুলে গেছে উদভ্রান্ত।
ছাই আর পুড়ে না ; অস্তিত্ব হারিয়ে,
মন ছুঁতে চায় মন, সীমানা ছাড়িয়ে।
পথ হেঁটে যায়, দীর্ঘ হয়, পা এ পা বাড়িয়ে।

সময় হেঁটে চলে তার আপন গতিতে,
ভাষা- বলে যায় যার যার অনুভূতিতে
হাসির দায়বদ্ধতা; প্রকাশিত নিজস্ব মতিতে।

ব্যাটারির মৃত্যুতে থেমে আছে ঘড়ির কাটা,
কেউ আর তাকায়না বলে আর দেখেনা বাজে ক’টা।
থেমে নেই জীবন চাকা,
চলুক না তা আঁকা বাঁকা।
কেউ ফুরিয়ে যায়, কেউবা জন্মায় সদ্য,
ভাবে না, পাবে কি না ; চিন্তার কৌটা আবদ্ধ।

কে কবে?
এ সবে
লিখে যাবে রীতি,
কি হবে?
না ভেবে
রেখে যাবে প্রীতি।

মননে রোজ বাজে কত শত বাজনা,
ধরে রাখি, ছুটে যায়, বলে শুধু আজ না।
কি আর লিখবো,
তুলে ধরবো,
সবি গত হয়েছে,
কে কি গাইবে,
সুর তুলবে
কবি কোথা রয়েছে।

তারচেয়ে বরং গল্প বলি,
সময় ভুলে অল্প চলি।
মৃত ঘড়ির শোক ভুলি।


আজীবন নেশার মতো
জারিফ এ আলম

গোর খোদকের মতো খুঁড়ে যাচ্ছি নিজেকে
যে মদিরায় চুর হয়ে আছি, পানপাত্র ঠোঁটে নিয়ে
ধ্যানস্থ হয়ে আজ। চোখের কোণ জুড়ে তাই
পৃথিবীর বিস্ময় বড় একঘেয়েমি লাগে এখন।
যার বাহুতে মাথা রাখতে সংকোচ নেই দ্বিধা নেই
সে আজ প্রাচীরের ওপার থেকে বাড়ায় হাত!

সময়ের এই যে শিরোনাম, উপমা জীবনের প্রয়োজনে
অন্ধের মতো গলি খুঁজে খুঁজে হোঁচট খাওয়া বারবার
মানুষের পৃথিবীতে সম্মিলিত সুরে হিংসার অবতারণা
গ্রাম থেকে নগরে পৌষ আর সর্বনাশের চিত্রে
ধারণ করি আমিও এক বিশ্বনাগরিক।

আসলে সময় শোষণ করে নেয় আবেগ অনুরাগ
বেঁচে থাকার জন্য সামান্য এই প্রীতির পরাগ
অবশিষ্ট নেই কোনো কিছুর। রাত নামলে এখন
কৃষ্ণপক্ষের প্রহর এসে দরোজায় টোকা দেয়।
পৌরাণিক চরিত্রে নিয়ে গল্প ফাঁদা হয় না আর
রূপকথা আর উপকথার চরিত্র গড়াগড়ি খায়
নির্জন কোনো কক্ষের ভেতরে।

প্রান্তিক কোনো হিশেব মেলাতে না পেরে এখন,
মহারাজ আসন পেতে বসেন, মুক্তির মিছিলে
সবাই ভুলে যাই, আমি কে? তুমিই বা কি ছিলে!


ঘুঙুর নাচের শব্দ 
হাসান মাসুদ 

পিঁপড়ের আশ্রম ভেঙে গাঢ় হয় রাত
আমি ঘুঙুরের নাচের শব্দে
বাড়িয়ে তুলি পায়ের শক্তি;
যেমন একাত্তরে তুলেছিল মুক্তিকামী
ভিটেহীন মানুষগুলো।

ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে
হঠাৎ মরার স্বাদ ঢেরবেশি,
জীবন পথে খুব বেশি না হেঁটে
চলো; পায়ের ছাপ রেখে যাই।

চলো সেই বনপথে
মানুষের জন্য রেখে যাই বিশ্বাস
মিছিলের অগ্রভাগের দু একটা মানুষ
ফুল চাষের জমি কিংবা মাছেদের সাথে
কথা বলার ভাষা।


ছুঁয়ে দাও আমায়
মুহাম্মদ ইমদাদ হোসেন

তুমি ছুঁয়ে দিলেই
আমি বদলে যাব
থমকে আছে জীবন
তোমার ছোঁয়ার প্রতীক্ষায়।

তোমার আদর সোহাগে
প্রেমের স্নিগ্ধ পরশে
আমি ফিরতে চাই
আনন্দ শান্তির ঠিকানায়।

তুমি ছুঁয়ে দিলেই
আমি বদলে যাব
কেটে যাবে আধাঁর
রাঙাবে জীবন উজ্জ্বলতায়।

হে প্রাণের প্রিয়জন
ছুঁয়ে দাও আমায়
আমি বদলাতে চাই
তোমার ভালোবাসার ছোঁয়ায়।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট