বিজয়ের পদাবলি : ০১

 



কালকেউটে

মাহমুদ হোসেন মৌসুম


আপনি না হয় ফুল-ফল, লতা-পাতা নিয়ে কথা বলুন

বিস্তৃত আকাশ আর পাশপাখালি নিয়ে ভাবতে থাকুন

সাগর নদীর গল্পগাথা বলুন

আর বসন্ত উৎসবের রঙ গায়ে মাখুন

ভুলেও ওদিকে তাকাবেন না

ওদিকে টকটকে লাল রঙের ফুল ধরছে

রাজপথে কিংবা ওলিতে গলিতে

সে ফুল দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে

তরতাজা রক্তরাঙ্গা সে ফুলের ঔদ্ধত্য

আপনি বইতে পারবেন না


আপনি আরো বড় কিছু নিয়ে ভাবুন

বড় বড় মানুষের সাথে ঘনিষ্ট থাকুন

সামান্য ক’টা মানুষ নিয়ে ভাবতে নেই

আদতে ওরা আপনার ভুত ভবিষ্যৎ নয় মোটেও

আপনি কল্পনা করুন সামগ্রিক নিয়ে

সময় নষ্ট করার ফুরসত আপনার নেই, আমরা জানি

সাহিত্য নিয়ে আপনাকে ভাবতে হয়

সাংস্কৃতিক বিপ্লবে শ্রম দিতে হয়

ভোর থেকে সন্ধ্যা দৌড়তে হয়

রাতের বেলা গিলতে হয়

জিডিপি মাথায় রাখতে হয়

তাই বলছি এতো ক্ষুদ্র বিষয়ে

আপনি মোটেও নজর দেবেন না


আপনি বরং ছাদ বাগান করুন

ফুলের সমারোহে দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলুন

আর স্লোগান দিন-

‘যে ফুল ভালোবাসে সে মানুষ খুন করতে পারে না’

অথবা নতুন কিছু খাবারের রেসিপি দিন

লকলকে জিভ বের করে আস্বাদ নিন বারবিকিউয়ের

ওদিকে মানুষ পুড়ছে, পুড়–ক

আহা, ওদিকে মোটেও তাকাবেন না

ওদিকে না তাকিয়ে আপনি রক্তরাঙা সস দিয়ে-

বারবিকিউয়ের, মানে ঐ

পোড়া মাংসের স্বাদ নিতে থাকুন

আপনি পারবেন আমরা জানি

কারণ আপনি আগেও বহুবার পেরেছেন



মাওলানা সাহেব লংমার্চে যাবো

মাসুদ পারভেজ


‘বৎস এখনো ঘুমিয়ে আছো?’

এমন দরাজ গলায় ভালবাসা পূর্ণ ডাক আগে পাইনি বলেই 

আচ্ছন্ন ঘুমের ঘোর থেকে হকচকিয়ে লাফিয়ে বসলাম,

অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে কুপি হাতে আধো আলোয়

খুব চেনা লাগছে পুরানো পাঞ্জাবি লুঙ্গি আর মাথায় টুপি পরা লোকটাকে।

এত দ্রুত স্মরণ করতে না পারার আক্ষেপ ¯্রষ্টার কাছে আমার বেশ পুরনো,

বলে উঠলেন, মিছিল মিটিং প্রতিবাদ বিদ্রোহ করে খুব ক্লান্ত বুঝি?

সাতপাঁচ না খুঁজে বলেই ফেললাম-দেখুন, আমি ওসবের মধ্যে নেই,

কপালে ঢেউয়ে মত চারটা ভাঁজ তুলে বললেন-

শুধু তুমি নও তোমরা কেউই নেই, কপাটবদ্ধ ঘরে যে আচ্ছন্ন ঘুমে তোমরা আছো, 

রাত কখনোই ফুরাবে না।

আচ্ছা ফারাক্কা বাঁধের কি খবর? সে লংমার্চে তুমি গিয়েছিলে?

আমি অবাক হলাম, যে লোকটা তর্জনী উঁচিয়ে রাখত সদা শাসক-শোষকের মুখের উপর,

যার ডাকে কৃষক কামার কুমার কুলি মজদুর লাখে লাখে বিক্ষোভে ফেটে পড়তো,

যিনি কথায় কথায় সমস্ত বাতিলের বিরুদ্ধে অনশনে বসে যেতেন অসুস্থ শরীরে,

অর্ধেকটা পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠ,

সেই মজলুম জননেতা আমার সামনে!!

হৃদয়ের প্রতিটি দরজায় এক বিস্ময়কর শ্রদ্ধা আন্দোলিত হয়ে যেন 

পিতামহকে বলে ফেললাম- মাওলানা সাহেব লংমার্চে যাবো।

তৃষ্ণার্ত এক অপরিণত হাসি লাগিয়ে ধীর পায়ে যেতে যেতে মাওলানা সাহেব বললেন- 

‘আযান হচ্ছে, আমার অযুর সময় হল।’

আমি একটুও থামানোর দুঃসাহস করলাম না।

শরীরের প্রতিটি পশমের গোড়া ঘেমে উঠল,

বুকের ভেতর ধুপধুপ ঘন্টি বেজে হৃৎপি-ে বাতাসের এক অস্বাভাবিক লেনদেন।

এবার সত্যিই আমার ঘুম ভেঙে গেল,

এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখছি মাওলানা সাহেব নেই, দরজা খোলা।

কানে ধরা দিচ্ছে এক চিরসত্যের আহ্বান

‘হাইয়াআলাস সালা,

হাইয়াআলাল ফালা’

যুগের মুয়াজ্জিন শুধু নামাজের জন্য ডাকেননি, ডেকেছেন কল্যাণের জন্য

সমবেত হবার জন্য, ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য

হয়তো মাওলানা সাহেব সে কল্যাণের পথই বাতলে দিয়েছেন।



সাদা মেঘের ওলান 

 আলহাজ্ব লায়ন এম এ রশিদ


নৌকা দীর্ঘদিন রোধ পোহাতে পোহাতে,

ভুলে গিয়েছে গন্তব্য, 

দীর্ঘদিন নরম ওলানের স্বাদ না পেয়ে, 

কেহ ভুলে যায় আদি-অন্ত।

সাদা খ- খ- মেঘের ভেলা যেন, 

ফোলে ফোলে দুধে ভরে যাচ্ছে,

তাই দেখে দেখে বাছুরের চোখ যেন,

দুধে সাঁতার কাটছে।

ও কিষানের বৌ, তোমার ওলান কি, 

দুধে দুধে ফোলা?

সাদা মেঘের মতো তুমিও কি উড়ছো, 

ওলান রেখে খোলা।

তোমার কৃষান কি লাঙল চালায় যেই হাতে,

ওলানও কি ধরে সেই হাতে?

সাদা ওলান মেঘে সাঁতার কেটে কেটে কি জন্মায় ফসল,

তোমার জমিতে?

বাবার হাতটি দীর্ঘদিন লাঙল চালিয়ে,

হাতের রেখা হয়েছিল অনেক ফাঁকা, 

বাবার হাতের রেখাগুলোর দাগ যেন,  

আমার শৈশবের মুখটি আঁকা।




মুক্ত বিহঙ্গ 

সাবেকুন নাহার


মুক্ত হাওয়ার পালকগুলো বেজায় ছন্নছাড়া 

সঙ্গী হবো তার সাথে পাই গো যদি ধরা।

নেবে কি হাওয়া আমাকে?

তোমার পথের সহযাত্রী বলে।

অহর্নিশ পাড়ি দেব পৃথিবীর অলিগলি 

সুখকে নেব জড়িয়ে দুঃখকে দেব বলি।


থোকা থোকা মেঘ বলে আমার পিঠে চড়ো

সাদা-কালো মেঘ মুলুক দেখবো দু’জন চলো।

তাই না যদি হয় 

চুপটি করে আর নয়

রাশি রাশি খুশি আর রঙে ভেজা মন

দুঃখের কাছে আড়ি বলতে করি আন্দোলন। 


হাওয়ার পালক ধরতে আজি করছি যত পণ

হয়না যেন বৃথা সবি করি আস্ফালন। 

কোন বিপিণে যাই হারিয়ে 

কোন সে চাঁদের পাহাড় ডিঙিয়ে 

ফেরারি মনের শূন্য হাওয়া লাগলো যখন গায়

ধু¤্রলোচন হলাম যেন শিকল ছাড়া পায়! 



মানুষ

আবুল বাশার শেখ


আমি মানুষ হতে চাই মানুষ

শুদ্ধ পরিশুদ্ধ একজন সাদা মনের মানুষ

দুই হাত কিংবা দুই পা নয়

এক উদর কিংবা এক মাথা-

কোনটাই প্রয়োজন নেই,

একটা হৃদপিন্ড হলেই চলবে

যেখানে পবিত্র সব কথামালা

অনায়াসে যাওয়া আসা করবে অনায়াসে।

দু’টো চোখ আর কান জমা থাক

সূচালো নাকের সাথে মুখটাও

আর সব বরফের কাছে ছেড়ে দাও।

তীব্র ঝড়ের গতিবেগ দেখেছি বারবার

আগ্রাসী অগ্নির দহন একাধিক

পানির বহুরূপ নিয়ে ভেবেছি শতবার

কিছুই পাইনি কোন কিছুতেই।

সভ্যতার আড়ালে নগ্নতার রূপ

অট্টহাসি দেয় মৃত বিবেক দেখে

সুরের মাতলামী এখন তুতলামী

কণ্ঠ যাই হউক চেহারা হলেই চলে।

ক্ষমতার আড়ালে এলোমেলো ভাবনা

বেশ্যার মাতাল পারফিউম সব ভুলিয়ে-

ডুবিয়ে দেয় নগ্ন কামনার অতল সাগরে।

সময়ের ব্যবধানে ঐসব মুখেই শুনি

নীতিকথা, আগামীর স্বপ্নকথা।

থু দিই আমি ওদের মুখে

অঙ্গ প্রতঙ্গ ছিন্ন ভিন্ন করি হামেশা

ফিরে যাই আদিকাল ক্ষুদ্র অনুতে।

আমি কি মানুষ হতে পেরেছি! বলতে পারো কেউ,

ছিঃ আমি কাকে জিজ্ঞাসা করছি মুখোশের আড়ালে!

এই বহুরূপীদের ভীরে আমি থাকতে চাইনা

একটা সরল পথের পথিক হতে চাই

আমি মানুষ হতে চাই মানুষ।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট