নাম না জানা পাখি
রুদ্র সুশান্ত
আমাদের বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে একটি রাঙ্গা পাখি,
পাখিটার নাম জিজ্ঞাসিলে বলে- দাঁড়াও; সুরে বলে ডাকি।
আহা কি সুর মিষ্টি মধুর, অবচেতনে সুখ পাই নির্ভেজাল,
এত মধুর সুর, দেহ থেকে প্রাণ কাড়ে আজন্ম কাল।
তবে দাঁড়ায় শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর,
চমৎকার মিষ্টি সুরে শিশির উড়ে গড়ায় দুপুর।
নাম বলে না পাখি।
তবুও আশ্চর্য রকম চমকপ্রদো হয়ে চেয়ে থাকি।
চোখের গোলাপি বিন্দু হতে বিচ্ছুরিত প্রেম আমাকে আরো কাছে ডাকে,
এতো মায়া এতো প্রেম এতো মোহ সব ছেড়ে চলে যাই, তবুও অল্প বাকি থাকে।
এলোমেলো সব
তাওহিদ ইসলাম
বেহিসাবি জীবনের রাফখাতায়- এলোমেলো সব। ইচ্ছেগুলো ধূসরিত। অনাপ্রাপ্তির ভীষণ হাহাকার।
ডিসেম্বরের শহরে—শীত পড়েছে বেশ! চাদরের ভাঁজে লেপ্টে আছে স্মৃতির ছোপছোঁপ দাগ।
বিকেলের হীম আবহ—একাকী সময়। সময়ের সাথে অতীত হলো সব।
আমৃত্যু ফিরবে না বলে গত হলো একটি দিন।
শহর থেকে একটু দূরে
রহিম ইবনে বাহাজ
শীতের মৌসুম দেখতে দেখতে চলেই এলো
শহরের কোলাহল ছেড়ে
একটু দূরে কোথাও ঘুরে আসি যেখানে হলদে সর্ষে ফুলে সমস্ত ফসলের মাঠ ভর্তি হলুদ রঙের বাংলাদেশ।
মৌমাছিও দলবল নিয়ে মধু সংগ্রহ করছে। মাঠের দক্ষিণে এক জোড়া খেজুর গাছ
রস সংগ্রহ করছে বৃদ্ধ দুলাল মিয়া।
শীতের মৌসুম এলেই গেরামে এখনো ভাপাপিঠা প্রচলন টা দৃশ্য মান
পিছনে তাকালেই চোখে পড়ল আক্তারের মা ভাপা পিঠা নিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করছে।
সত্যি মুগ্ধ হ’য়ে গেলাম
গ্রামীণ দৃশ্য গুলো আজও আমায় টানে
ভোরের কাঁচা রোদে ছাগল ছানা তিড়িং বিড়িং নাচছে,
সবুজ সবুজে ছাওয়া আঙিনায় লাউ গাছের মাচা। চলোনা শহর থেকে একটু দূরে যাই
খোলা হাওয়া খাই, বিশুদ্ধ মাটি গন্ধ মাখি গতরে
ডাঙা বিলে ডুব দিয়ে শিং মাছের কাঁটার যন্ত্রণা উপভোগ করি। পুনরায় দিন -
দুপুরে পিয়ারা চুরি করে ভাগ করে খাই।
চলো শহর থেকে একটু দূরে যাই
স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখে আসি
পাখিদের গলায় গলায় পিরিত দেখি
এবং পুকুরে হাঁসের সাঁতার কাটা,
ধান কাটা শেষে
ইঁদুরের চুরি করা সোনালী ধান গর্ত খুঁড়ে বের করি
চলো না শহর থেকে একটু দূরে যাই।
একটি ফটো ফ্রেমের ইতিবৃত্ত
রফিকুল নাজিম
এইযে পিঠমোড়া বাধা যে মানুষটাকে আপনারা দেখছেন
তিনি আমার বাবা;
তাঁর বুলেট বিদ্ধ বুকে ফুটেছে অযুত ফুল; রক্তের মত রং।
ঐযে জলেশ্বরী নদীর জলে ফুলেফেঁপে উঠেছে যে লাশ;
সেই লাশ আমার ভাইয়ের,
একদিন যাঁর কাঁধে ছিল লাঙ্গল জোয়াল,
যাঁর চোখে ছিল হৃষ্টপুষ্ট শস্যদানার বিস্তৃত মাঠ,
যাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাত শোষকের সিংহাসন গুড়িয়ে দিতে জানতো
যাঁর রক্তচক্ষু ঐ হায়েনাদের হৃদপিন্ডে প্রচন্ড কাঁপন ধরাতে পারতো
দেখুন- তাঁর কপালে রক্তের ফিনকি এঁকে যাচ্ছে স্বাধীন দেশের একটা পতাকা।
ঐযে- ঐদিকে আমাদের শোবার ঘর,
তারপর রান্নাঘর, বৈঠকখানা
পুব দিকে গোয়ালঘর- গরুর ওলান থেকে নামছে দুধের নহর
সেই দুধ পান করে নাদুসনুদুস হচ্ছে কয়েকটা দাঁড়াস সাপ
পুঁইয়ের মাচার লকলকে ডগা সমৃদ্ধ গৃহস্থালির ছবি আঁকছে
রক্তজবার সাথে বাতাসের খুনসুটি দেখে মা আমার হাসছেন
সেইদিন আমার মায়ের বুকেও রক্তজবার মত পুল ফুটেছিল।
ঐযে খলখল করে হাসছেন যে নারী- যাঁকে আপনারা পাগলী বলে ডাকেন এবং ক্ষ্যাপান,
সে আমার আদরের ছোটো বোন
যুদ্ধের সময় সে ছিল দুরন্ত এক কিশোরী;
পরীবিলের পদ্ম ফুলের মত শুভ্র ও কোমল
অথচ সেও চড়া দামে স্বাধীনতার মূল্য পরিশোধ করেছিল
তাঁর জরায়ুতে অঙ্কুরিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রকান্ড এক মায়াবৃক্ষ।
এইবার এইদিকে আসুন।
এটা আমার শোবার ঘর
তেল চিটচিটে বালিশে নোনতা জলের দাগ ও আঁশটে গন্ধ,
চুনসুড়কি খসে পড়া দেয়াল নগ্ন এই সময়েরই গল্প বলছে
আলপিনে ঝুলে থাকা ছবির যে ফ্রেমটা দেখছেন
একদিন এই ফ্রেমে আমার বাবা ছিলেন
আমার মা ছিলেন। আমার ভাই ও বোন ছিলেন।
ঐ ফ্রেমে আমাদের পুরো পরিবার ছিল
আজ পতাকায় ঢেকে গেছে আমাদের পারিবারিক ছবি।
এইবার সবাই আমার কাতারে এসে দাঁড়ান
আসুন,
জাতীয় পতাকাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই...
কবিতা
নাহিদ্র ইমন
কবিতা
কবিতা ত অগোছালো কিছু কথাবার্তা-
খুচরো আলাপ।
বাংলাদেশের মানচিত্র যেমন।
কবিতা কুকিলের ডিম; কাকের বাসা।
কবিতা, অযাচিত কিছু ফাউআলাপ।
বেখাপ্পাস্বরে যা আবৃত্তি করা হয় তাই কবিতা।
যা কিছু এখন অসুখপাঠ্য তাই কবিতা,
যা কিছুতে অশ্লীলতার সয়লাব তাই কবিতা।
কবিতা কেমন তা আমাকে শিখাতে এসো না।।