শব্দমালা : আসআদ শাহীন

 



শব্দমালা

আসআদ শাহীন



অনুবর্র হৃদয় ভূ-খণ্ড


অনুবর্র হৃদয় ভূ-খ-ে চাষাবাদ হয় নি বহুদিন,

ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে চাষীর জরাজীর্ণতার উত্থান-

প্রকট প্রণয়-খরায় ফেটে চৌচির হৃদয়-জমিন,

প্রেমের বারিধারা সিঞ্চনে হয়ত হবে অবসান।


খরা তপ্ত হৃদয়-ভূমিতে ফলাবে কে প্রেমফসল?

সেইজনের প্রতীক্ষায় অনুবর্র হলো হৃদয় ভূ-খ-,

চাষীর চাষাবাদে ঘটছে কেবল-ই বিহ্বল-বিফল;

যবনিকাপাতে স্বস্তির ঢেকুরে তীব্র হতাশার দ্বন্দ। 


প্রণয়ের ফসলে বিচ্ছেদের জয়গান হচ্ছে ধ্বনিত-

হৃদয়-ভূমিতে ঘোর আঁধার-সাদৃশ্য সুখ-পতন-শব্দ,

নিরাশার চোরাবালিতে লুপ্ত চাষীর প্রণয়-প্রমথিত ;

কে আছে এমন জন-করিবে সে প্রম-ফসল জব্দ!



হৃদয়-ক্ষরিত আর্তস্বর 


অস্তমিত রক্তিম সূর্যের অভিমান নিশিতের আগমনে,

জীবনের অভিমান মৃত্যুর দুয়ারে উপবিষ্টিত রোদনে।

মান-অভিমানের এ লুকোচুরি খেলায় দিশেহারা বোধ,

সম্পর্কের টানাপোড়েনে অবিশ্বাস্য করে সে অবরোধ। 


অসীম ভালোবাসা মানুষকে করে দেয় নিঃস্ব-বধির,

অপরজন তখন মিথ-অভিনয়ে উন্মুখ থাকে অধীর।

জীবন সায়াহ্নকৃত্য প্রেম দিলেও হবে না সে আকৃষ্ট,

তবুও বাতুল-মন তার সমীপে ভূষিত খেতাবে-নিকৃষ্ট। 


ভুলে যাও-ছেড়ে দাও; শব্দত্রাসের এ বুলি আওড়ানো-

প্রয়োজনে ছিলে তুমি প্রিয়জন-এখন নেইকো দরকার,

সে কী বুঝিবে কভু হৃদয়-ক্ষরিত আর্তস্বরের হাহাকার!

ইতি-সমাপ্তি যদি হয় এমনই-তবে এতো অভিনয় কেনো?




তোমার সমীপে নিবেদন  


আমাকে ভালোবাসা নয়, ঘৃণার দুটি চোখ উপহার দাও,

যে দু’চোখজুড়ে থাকবে শুধু আমার প্রতি ঘৃণার অগ্নিশিখা-

সেই উত্তপ্ত-লোহিত-অগ্নিশিখায় আমাকে অভিবাদন জানাও,

আমি নিঃসংকোচে নিজেকে উৎসর্গ করব; মুখে-হাসিমাখা। 


আমি ভালোবাসা চাইনি- চেয়েছি তোমার কাছে একটু ঠাঁই,

ভালোবাসার মূল্য খুবই নগণ্য; তবে মনের কুঠিরে অবস্থান!

সে-তো সোনার হরিণের প্রলেপে জান্নাতের সবুজ গালিচা,

তোমার ভালোবাসার নাযরানায় নিজে হতে পারি কুরবান।


অবহেলার গিলাফে মানতিকের পরিভাষা করিও না পাঠ-

ঘৃণার রুমালে ঢেলে দিও সুল্লামের শরাব-তাও করিব পান,

তোমার ঘৃণা আমার সমীপে ‘শারাবান-তুহুরা’র মতই মিষ্ট-

ভালোবাসি তোমাকে-যেমন ভালোবাসি নিজের মন-প্রাণ।



জান্নাতি হুর


খরা-তপ্ত এই হৃদয়-জমিনে নামালে তুমি অযুত বারিশ,

যেমন বারিশ নামে খোদার রহমে বরষার মৌসুমে-

ইশকের দ্যুতি জ্বালালে তুমি-করি আমি তোমায় নালিশ, 

কেনো তুমি এতো কুহকিনী? আমায় জড়ালে প্রেমে!


তোমার সুকণ্ঠ শুনে তব ইশকের তরে হয়েছি উদগ্রীব,

যেমন উদগ্রীব করে সুবহে সাদিকে পাখিদের সুরেলা সুর-

তোমার জন্য সাজিয়েছি আমার মনের বেহেশত করে সজীব,

সেথায় বাজে হামেশা রিনিঝিনি করে তোমার পায়ের নুপুর। 


তোমার রূপ-লাবণ্যে ঝলসে ওঠে অনন্য প্রলুব্ধের আভাশ,

যেমন গৌরীকান্তি লাস্যময়ী খোদার ডাগরআঁখি জান্নাতি হুর-

তোমার বদনের খুশবুর ঘ্রাণ আমাকে করেছে জীবন্ত লাশ, 

যেমন জাফরান ও মিশকে আম্বর পৃথিবীকে করেছে নিগূঢ়। 






শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট