দীর্ঘশ্বাস
মাসউদ মাহমুদ
বুকারণ্যে তিরতিরে কেঁপে উঠে দুঃখপল্লব
চোখের কোটরে হাহাকার জমে, জেগে উঠে বেদনারা
নোনাজলের দরিয়া উপচে বেরোয় ,
রক্তাক্ত রঙচটা চোখ অপলক চেয়ে রয় কেবল
ঐ শুষ্ক মাংসল কংকাল শরীরে।
স্তব্ধ নিঃশ্বাসে কান্নারা ঘুমায়, নিবিড় অচেতন
নীরব নিঃসঙ্গতা আমাকে আকড়ে ধরে,
বুক ফেঁপে ফুলে উঠে চিৎকারে চিৎকারে
তবু কোলাহল আমাকে ছুঁতে পারে না
আমি ধামাচাপা দেই আমার ভিতর, আমাকে প্রবোধ রেখে।
গমস্ত দীর্ঘশ্বাস আমি চিবিয়ে খাই
অনল চিবানোর মতোন।
ঐ তৈলাক্ত মুখের রূপালি গড়ন,
চেনাজানা প্রায় সবটুকু
দেহের আঁধারে পুষে রাখে সাদাটে উইপোকা
কুটকুট করে কাটে মানুষ্য শরীর।
বিষব্যথা বেদনায় কুঁকড়ে উঠে হৃদয় আন্দর
আমি নিষ্পেষণ হতে থাকি ক্রমাগত
বিষম চিৎকারে বুক ফেটে যায়
অন্তরের অতলান্তে নিটোল রক্তকণা জমে
আমি অসীম সাহসে, আমাকে পেষণ করি
ঐ তৈলাক্ত মুখের তীর ছুড়া কথায়।
আমি আমার দীর্ঘশ্বাস চিবিয়ে খাই
অনল চিবানোর মতোন।
তোমার সমীপে
ফাহাদ আজিজ
ঘ্রাণ ছড়িয়ো-না ফুল গো তুমি আর,
যা ছড়িয়েছো তাতেই ছারখার।
ঘ্রাণ পিয়ে আজ বাড়লো মায়া ঢের,
লাভ কী তাতে—
ফুটলে আলো মিলিয়ে যাবে ফের।
তবুও কষ্ট লাগে
আদনান আল মিসবাহ
তুমি চলে গেলে
পেছনে ফিরে তাকালে না
কোন অশুভ সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে
দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশায়
জানো, সব দূরত্ব কিন্তু ভাঙ্গন সৃষ্টি করেনা
উচ্ছ্বাসের ঠুনকো ভালোবাসা
দূরত্বে ভেঙ্গে যায়
কিন্তু, আত্মার পবিত্র ভালোবাসা
শত মাইল দূরত্বেও
চির অটুট থাকে।
তবুও কষ্ট লাগে
বুক ফাটে
চোখের কোনে অশ্রু জমে
তুমি চলে গেলে হৃদয়ে
বাঁধভাঙ্গা কান্নার জোয়ার নামে
কবি যথার্থই বলেছেন
তোমার চলে যাওয়া-
সূরা বাকারার মত-
দীর্ঘ!
কেউ কেউ চাঁদের মতো একা
এ এম তোফায়েল
কেউ কেউ চাঁদের মতো একা, আবার সূর্যে মতো কেউবা! পৃথিবীর উত্তপ্ত কন্টকময় দীর্ঘপথ পথ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যায় তবু পাই না কারো দেখা!
যেন সে বোকা!
তবে এটা সত্য যে শীত যতো প্রচন্ড হয় বসন্ত ঠিক ততোটাই কাছে থাকে যদিও সবার জীবনে প্রকৃতির মতো করে বসন্ত আসে না অতি সহজে! আসে তবে আসে প্রকৃতিকে জানান দিয়ে!
সূর্যকে কেন্দ্র করে কতো গ্রহ উপগ্রহই না ঘুরে ওদিকে চাঁদও যে বড়ো একা হয়ে থাকে পৃথিবী থেকে ভীষণ দূরে! কেউ কেউ পৃথিবীর বুকে একাকী দীর্ঘপথ হেঁটে যায় চাঁদের ন্যায়!
হরিণী নিজেকে ভাবলো বাঘিনী
মিসির হাছনাইন
কৃষ্ণবনের এক হরিণী
সকরুণ অসহায় শীর্ণ চোখ
হৃদয়পোড়া দগ্ধ ভীতু অনাহারী
কচি কচি ঘাসের লোভে
পা বাড়ায় হিং¯্র বাঘের মুখে
প্রেমহীন সেই বাঘ পিয়াছাড়া
ভাঙা হৃদয়ে বনে বনে ঘুরে বেড়ায়..
অন্ধকার এক হায়েনা আঘাত দিল,
প্রকৃতির বিচারে সে মরলো অপঘাতে।
এক বুক মায়া নিয়ে হরিণীর চোখে
বাঘ দেখলো- বসন্তের পাতাঝরা অহংকারে
শীতের তীব্র গন্ধযুক্ত শিশির ভেজা ফুল;
দুঃখের মর্মরে মৃদু কম্পন জুলাইয়ের বৃষ্টি,,,
দৌঁড়ে পালায় সেই হরিণী
তারপর সুখের পাহাড়ে ঘর বাঁধে
বনের লতায় ফুল আঁকা কামিজে
সাজলো সবুজ রঙের পোশাকে
পরলো বনের যত দামী গহনা,
আহা! তার সৌন্দর্য ইউরোপের কোন রমণী!
বাঁচাল প্রকৃতির সেই ভীতু মনের হরিণী,
কিসের লোভে পা বাড়ায় হিং¯্র বাঘের মুখে?
কৃষ্ণবনের সে হরিণী নিজকে ভাবলো বাঘিনী
তীব্র ক্ষুধায় গাছের আড়ালে বাঘ মিটিমিটি হাসে..!
তোমার স্থিতি
মোহাম্মদ আল রাহাত
তোমার অবস্থান ছিলো
নাইট্রোজেন পরমাণু স্তরের উপর
তুমি গিয়ে থাকছ!
অসীম আকাশের হাইড্রোজেন স্তরে
তবুও এ পৃথিবী টিকে আছে তোমায় ঘিরে।
তুমি বায়ুমন্ডলের আয়নিত কনার
চৌম্বকীয় ম্যাগনেটোস্ফিয়ার,
তুমি অক্সিজেনে রাসায়নিক শিলার বিচূর্রণিভবন,
তোমার অবস্থান ক্রিপটন নিস্ক্রিয় গ্যাসে,
তুমি আসো ওজোনোস্ফিয়ার বেগুনি রশ্মির ব্যাসে।
তোমার মধ্যাকর্ষন বলে
বায়ুরাশি লাগে পৃথিবীর গায়ে,
তুমি সুবিস্তীত অরগ্যান, নাইট্রোজেনে
তুমার নিস্ক্রিয় ভাব নিয়ন, হিলিয়ামে
তবুও..
সূর্যে উত্তাপে উদ্ভিদ টিকে থাকে হিমালয়ে।