শব্দমালা
জ্যোতির্ময় শীল
বুলডোজারের দ্বেষ
কানাঘুষো শোনা যায়
গৈরিক আবদার ঘেঁষে
পিতাভ সোহাগে ঘনিয়েছে এক তমসা।
জটিল সেসব হিসেব নিকেশে
বীতশোকে ক্ষুরধার সে শানাচ্ছে খতিয়ান।
অবহেলা কাঁকড় পাতে;
বরাদ্দ ভিটের পলি সরে
তোমার জিহ্বা যায় খাদের কিনারে।
যদি ভাবো—
“আগলে রাখা মাটি
আভাস-অভ্যাসের আম্মিজান
মেয়েবেলা ধুলোবালি,
ইমান লাঙল নাস্তা-রুটি
ইফতার ফরমায়েশি,
এত্ত আতর জরির আবদার মিশে
কাগুজে মাপে আঁটবে কি সে?”
খুলে দেখো দিনক্ষন দরজা সদর,
হয়তো বা টের পাবে ঠায় দাঁড়িয়ে এক বুলডোজার
হুলিয়া নিয়ে সে নব্য রাষ্ট্রের পেশ এক অস্থির নিবেদন!
সেই ধাতব চাকা চুঁইয়ে তরল দ্বেষ;
প্ল্যাকার্ড বধির লোলুপ অভিধানের
তাতে আঁচড় চিহ্ন ক্যাকটাসের;
তামাম বিষের অব্যয় নিয়েও সেজে উত্তম
যেন সাক্ষাৎ মর্যাদা পুরুষোত্তম!
এক সাইকেল মৃদঙ্গ
যখন হা পিত্তেস নিম্নচাপৃ
তখন সেই এক সাইকেল মৃদঙ্গ।
আমার বকুলে, শিমুলে, ঋতুতে
আস্তানা করে থাকা এক আনচান সামিয়ানা;
যখন তোমার বন্ধ দালান
প্যাডেলে স্পর্শ জাগিয়ে চিনে রাখি
যত আছে স্যাঁতস্যাঁতে অলিগলি;
অচির স্তর ছুঁয়ে সহসা ফাটল বেঁধে আসক্তি—
জায়মান মনকেমন বেতার অনুভূতি।
কলিংবেলের শব্দে ছোঁয়াই লালন-সাঁই
দিন-কে-দিন যেন সেতার টানের কুঞ্জছায়ায় ঠাঁই,
আটপৌড়ে হালফিলে বেসামাল।
নিজেকে আগলে সেই সাইকেলে মাইলফলকখানি তোমাকে পেরোই
চৈত্র শেষের দাবদাহে
কয়েক বয়ান রেখে ঋণ
আজকে তবে না ফেরার দিন।
দ্বিচারিতা চোরাবালি
শুকনো ফ্যাকাসে পাতা আনাচে-কানাচে
খুব চেনা ঘোলাটে ভাবে
জেদ যেমন শেওলা-পাঁচিল;
পূর্বাভাসহীন বৃষ্টিবাদল দিনে আবছায়া কাঁচের ফাঁকে
টের পাওয়া নৈঃশব্দের চিড়-ধরা উপকথা
ছুঁতে না পারা এক অজানা বিরুদ্ধতা;
সেই জায়মান অস্থিরতা
খানিক সে তীব্র ¯্রােতের ধারা
বাউল পাগলপারা।
দোটানার আনাগোনায়
সারমেয় শীতলতা।
কোনো এক বিকেলে সব ফুরোলে
বিরহ চিহ্ন বয়ে অবগাহনে
তারপর সাঁকো ধরে অনুবৃত্তি
বিষয় আশয় জুড়ে টুকরোখানি অভিলাসি;
রোদ্দুর ধাঁধানো দিনের মোহনাচরে
তার দ্বিচারিতা চোরাবালি।
হন্যমানে শরীরে?
নিভু নিভু কাঠ আগুনের
নির্বিকার ধূমাইত রেখায় মিশে শূন্যতা লেলিহান।
শবনীড় গঙ্গাজল,
অমোঘ উঠোন জুড়ে খানিক দুপুর জুঁইসাদা।
তারপর?
এরপর বাকী আর কিছু?
শুধু এক অনাবৃত চন্দ্রবিন্দু?
রোগাসোগা একরোখা
উস্কোখুস্কো চঞ্চল দামাল
অশ্লীল অভিধান
স্পর্শগ্রাহ্য মনবিতান
এখন জড়ির সুতোয় বাঁধা ফ্রেমে
খাঁ খাঁ অবয়ব বুকের ভেতরে।