এ রাগ ক্ষেদ এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই
আশরাফ চঞ্চল
দেশটাকে নিয়ে আগে খুব গর্ব হতো
এখন ঘেন্না হয়!
শুধু একটা লোকের কারণে
বিশেষ একটা দল ও গোষ্ঠী
দেশটাকে পচিয়েছে
বিশ্রী গন্ধে ছেয়েছে চারপাশ
এদেশে এখন বাস করা দায়
বিদেশের মাটিতে কেউ যখন জিজ্ঞেসা করে-
তোমার দেশ কই?
আমাকে মাথা নিচু করে বলতে হয়-
বাংলাদেশ!
নির্জনতার আলাপন
অনিন্দিতা মিত্র
তোমার খয়েরি রঙের শাড়ির জমিতে সরোদের সুরে সুরে রৌদ্র ছড়ান আমজাদ আলী, চিলাপাতা জঙ্গলের সবুজ আভা মেখে চাঁদের আলো টুপটাপ ঝরে পড়ে কবিতাখাতার অক্ষরশরীরে। স্মৃতিপথের হাহুতাশটুকু হেরে যায় তোমার রাতভোর ভালোবাসার কাছে। জ্যেৎস্নার সুগন্ধি মেখে সাঁঝের পাখিরা সাজায় কথকতার মেহফিল। বটের ঝুরির নগ্ন ছায়া জুড়ে প্রাণহীন স্বপ্নের বিক্ষিপ্ত উপস্থিতি, প্রতিদিন আমি একটু একটু হেরে যাই নিজের প্রতিবিম্বের কাছে।
মায়ের ঢাকা বিভ্রম
সীমান্ত হেলাল
শেষবার মায়ের রাজধানীতে গমন অনেক নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছে!
নগরবাতির আলোয়- সন্ধ্যাকে শেষরাত; আর শেষরাতকে সন্ধ্যা বলার প্রয়াস- মায়ের চোখে নন্দনতত্ত্বিয় স্বার্থকতা দিতে পারে!
ইতোপূর্বে মা বহুবার ঢাকায় এসেছিলেন। এবারের গমন ঘটনাবহুল খুব! কিছুটা একরৈখিকও বটে! রাজপথে চলতে চলতে মা স্থানের সৌন্দর্য বর্ননায় মূখর হয়ে ওঠেন! কাকরাইলকে যাত্রাবাড়ি; যাত্রাবাড়িকে বাইতুল মোকাররম চিহ্নিত করার বিভ্রমে আমিও বারবার নিজেকে অচেনা পথিক ভাবা শুরু করি!
গাড়ির চাকায়- ঘুরতে থাকা ঢাকায়; নিজেকে বোকা ভেবে মায়ের কথায় সায় জানাই! পরিচয়ের ব্যঞ্জনায় মায়ের যুক্তিকে তর্কের চেয়ে অধিক মহান ভেবে চুপসে থাকি!
অথচ; ধর্মতত্ত্ব আর নান্দনিকতার লাগামহীন নস্টালজিয়ায় মা- আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বারবার! ঢাকাকে বিবর্তিত গ্রাম ভেবে পান চিবানোর তৃষ্ণায়-নগরস্থাপত্যের কলা সমৃদ্ধ ফুটপাথে হেঁটে চলেন...!
লালগোলাপের শিশিরে ভরে যাক সবুজের ভূমি
মোস্তফা হায়দার
গলায় কাঁটা বিঁধে কাঁদছে কানিবক
শেয়াল তামাশায় করছে টগবগ।
পেয়ালায় নাচে মন খেতে সারাক্ষণ
তখতের দন্ধে অন্ধচোখে দেখি হিমবাতায়ন।
সবুজের সীমানায় লালের রশ্মি হাসে দিগন্তে
কাতরতায় ভেঙ্গে গেলে হদিস পাবে না শোকের অন্তে।
চাঁদেরও আঁধার আছে দিনের অবগাহন শেষে
সত্যমিথ্যারা বাঁশি বাজায় অন্ধের হাসি হেসে!
জোয়ারের পূর্বে ঘোলা জল জানান দেয় ¯্রােতের
ক্ষান্তির নোনাজলে ভেসে যাবে চিন্তা ও বেতালবোধের।
বেহুলার গায়ে মেখে উড়াল দেয় হিংসার অনল
আঁতুর ঘরের ছেলেরা জানি বসে দেখবে দাবানল!
লালগোলাপের শিশিরে ভরে যাক সবুজের ভূমি
কারবালার ফোরাত চাই না, চাই প্রেমের বাহুবাঁধা তুমি।
শীতের আলকেমি
রাজেশকান্তি দাশ
শীতে গাছের পাতা ঝরে যায়
পাখিরা ঝরে না। এক গাছ থেকে আরেক গাছে থাকে
পাখিরা গাছেই থাকে।
আমি মা’র কম্বল কিনতে বাজারে যাই
শীত সামগ্রীর দোকান, মেগা শপ... কত বড় বড়!
দাম আকাশছোঁয়া। আমার পকেটে পয়সা নাই
বাজারে গাছ একটাও নাই। পাখিও নাই
প্রবীণ করচতলায় বগা তালেব গান গায়। শীতের গান
আমি গানযোগে মনোনিবেশ করি
গানে বিলীনতা ও মলিনতার মূর্ছনা...
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরি
বারান্দায় মাকে দেখে মনে হলো তার কম্বল কেনা হয় নাই
চোখ দিয়ে লিটার লিটার জল পড়তে থাকে
পৌষের হাড় কাঁপানো শীত কিন্তু আমার মা’র কম্বল নাই।