পদাবলি : ০৫

 



শীত আসবে বলেই

রফিকুল ইসলাম 


শীত আসবে বলেই 

পৌষের শীতার্দ্র দাপটে পথের মতো 

তোমার পায়ের চিহ্ন আঁকে, 

হিমেল হাওয়ায় হলুদ পাতার মতো 

ঘরে ফেরে পাখি বিষণ্ন মেখে। 


শীত আসবে বলেই  

ইচ্ছেগুলো শীতের সকালের মতো 

উষ্ণতা হারায় কুয়াশার আবরণে,

আমার বিষাদগুলো লাল সূর্যের মতো

ক্লান্তিতে ডুবে সন্ধ্যার উদাসী রণনে। 


শীত আসবে বলেই 

ও চোখের কাজল, রাত্রি জাগে হিমঘরে 

কেঁদে ঝরে সবুজ পাতার পরে, 

শুকিয়ে গেছে চুম্বন ঠোঁট, গোধূলির প্রেম 

উত্তুরের রুক্ষ হাওয়া ফিরে । 


শীত আসবে বলেই 

ফেরারী সুখগুলো নরম বিড়ালের মতো 

বরফ-রাত্রি ওম খোঁজে লেপের ভাঁজে,

শৈত্য হিমরাতে জেগে থাকে পুকুরের জল 

ঘাসের শিশির, রোদ্দুরের খোঁজে।



অসুখের আমি 

আবু বকর সিদ্দিক 


এখানে সবাই ঘুমিয়ে গেছে রাতে, 

সভ্যতার এই দেশের শহর কিবা গাঁ-তে,

পথের কুকুর, গলির বিড়াল আছে যত,

নিঃস্ব, অনাথ পথশিশু আরও আছে শত।

গাছের ডালেও চুপটি করে ঘুমায় পাখি,

আকাশে তারা মুদে আছে তব আঁখি।

এই শহরে আমার মতো কেউ কি আছে?

এই পুরানো স্মৃতির দালানকোঠার কাছে 

খুব অসুখী সুখান্বেষী অসংসারী 

চায় না যে— বিত্ত, যশ ও দুনিয়াদারি,

সুখের খোঁজে ছুটে চলা এই ছেলেটি,

ভাবনা করে পায় না দিশা তার করোটি ;

কোথায় আছে সুখের বাড়ি? কোন সে খানে? 

যেথায় আঁধার নামলে পাবো সুখের মানে।



ভালো থেকো

খায়রুল আলম রাজু 


ভালো থেকো ভালোবাসা খুনসুটি ভুল,

ভালো থেকো উড়ো চিঠি, ভিজেভিজে চুল। 

ভালো থেকো প্রিয় মুখ হাসি আর খুশি! 

টগবগে রাগ যদি- দিব কিল-ঘুষি.... 


ভালো থেকো ঘুমহীন আবেগিয় কথা 

ভালো থেকো ছোট-বড়ো শত নীরবতা... 

ভালো থেকো চুপিচুপি গলা ছেড়ে গান

অভিমান করো যদি ছিঁড়ে নিব কান! 


ভালো থেকো নাশতার সকালের রুটি-

ভালো থেকো ঝুলে মাখা ভাজা সরপুঁটি। 

ভালো থেকো দুপুরের তরকারি, ভাত

কাঁদো যদি অকারণে ভেঙে দিব দাঁত!


ভালো থেকো সাজুগুজু হিল-অলা জুতো;

ভালো থেকো বেশি বেশি, হাসিকাতুকুতো...

ভালো থেকো দুষ্টুমি চিমটি ও ল্যাং—

ঠিকমত খাবে, নয়। ভেঙে দিব ঠ্যাং...



অসৎ নেতার আদর্শ কর্মী

আসহাবে কাহাফ


কাকের রাজ্যে কাকে খায় কাকের মাংস-

দেখে আড়ালে হাসে গণতান্ত্রিক না-ভোর্ট; 

দলপতি মাইক্রোফোনে আওড়ায় কাক স্বজাতির মাংস খায় না

এভাবেই পনের বছর, নেতার পারফিউমে এখন নর্দমার গন্ধ!

অন্ধ হাতির মতো দলীয় প্রতীক ছুঁয়ে সমর্থকের অনুমান- 

সে মানুষ না; আসমানের ফেরেশতা

কে জান ত? এ দাবি ঐতিহাসিক মিথ্যে-

সকলে রাজনৈতিক দলের অসৎ নেতা; আদর্শ কর্মী!



মহামান্য জীবনানন্দ

সাজেদুর আবেদীন শান্ত


তীব্র ঘোরে শুনতে পেলাম 

মহামান্য জীবনানন্দ,

আমাকে ডাকছেন।


আমি অতিক্ষুদ্র এক কবি

মহামান্যের ডাক কেমনে উপেক্ষা করি


আমার তীব্র কাশি, বুঝলাম-

আসলে কাশি কোনো ব্যাধি না

জীবনানন্দের না বলা কথাগুলো 

গলা দিয়ে বের হতে চাচ্ছে মাত্র।


আমি কাশতে থাকি

কাশতে কাশতে গলা ফেটে রক্ত আসে

মহামান্য জোর দিতে থাকেন

বলেন এই বের হবে, আরেকটু 

তাহলেই গলা দিয়ে বের হবে 

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা।


আমি ছটফট করি

আমার কষ্ট হয় 

কিন্তু মহামান্য আমাকে ছাড়ছেন না

আজ আমাকে দিয়ে কিছু লেখাবেই

হয়তো তার অব্যক্ত কোনো কবিতা


রুপালী আকাশে জোসনা উঠেছে ভেসে

সুগন্ধি পোকা উড়ছে উত্তরের বাতাসে

একা দুপুর চিলের ডানায়,

স্বপ্নরা কাতরায়

হে মহামান্য জীবনানন্দ!

আপনি কোথায়?



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট