পদাবলি : ০৩

 



রূপকথা

নজর উল ইসলাম


রোদ্দুরের গা-ধরে উঠতে চেয়েছি, মন-নুপুর ভেঙেছে

কাদামাটির লেপন বরাবরই স্মৃতিভ্রষ্ট হয় দেখেও

লজ্জার মাথা খেয়ে ফের উড়ন্ত হাওয়াকে বলেছি

যোজনা-প্রীতি থেকে আলাদা করে দাও 

কারণ, এমন ভাসান হয়তো বা নিতে পারবো না 

আদি থেকেই চুষে খাচ্ছো স্তন ও ঠোঁটের মধুমন

ফাটলের গভীরতায় চোখ রেখে দেখি বিস্তর ফন্দি

নিপুন নিভৃতিহীন শুধু চাবুকেই শেষ কথা বলেছে 

আটকে গেছে সমস্ত সন্ন্যাস বোধ, প্রীতি 

যে পৃথিবী আসছে তার গালে কোন চামচ 

কোন ফটিকজলবাস বসত না জ্বালার সাধন 

এভাবেই গড়াবে প্রাণপ্রিয় জলমা-মাতৃকা

আর উড়ে যাবে সর্ষে ফুলের রেণুরা রূপকথায়...



কসম

সুশান্ত হালদার 


কখনো কখনো নিজেকেই খুন করতে ইচ্ছে করে 

পারি না বলে শত খ- হতে হতে নিজেকে লীন করি

এখন আমি মানুষ নই 

ঝড়ের তা-বে উড়ে চলি হাওয়ায় ভর করে,

স্পর্শাতীত যদি ভাবো 

ভালোবাসার কসম! একবার ছুঁয়ে দেখো 

কতটা বেদনাদগ্ধ হলে প্রেমানল হয়ে জ্বলি


পঞ্চাশোর্ধ এই আমি 

শতবার রক্তাক্ত হয়েও যিশু হতে পারিনি

আঘাতে আঘাত, খুনের বদলা খুন

ধর্ষিতার প্রচ- প্রতাপ, যুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ হাত

শোষণে দারুণ প্রতিবাদ, 

কবিতা ঘেরা জীবন আমার 

যদি চাও অগ্নিগর্ভ ভিসুভিয়াসও হতে পারি  

মায়ের কসম! ছুঁয়ে দেখো 

কতটা জ্বলার পরে নিভে যাওয়া অনল আমি!



আমাদের টেলিভিশন

মিনহাজ উদ্দিন শপথ


তুমি চলে যাবার পর আমাদের দীর্ঘদিনের

টেলিভিশনটা নষ্ট হয়ে গেল। ওটা আর

কোনদিনই চালু হবে না। কোনদিন পর্দা

হবে না

সবুজ- সুনীল। এখন চোখে চোখে নিদ্রাহীন

নূহের প্লাবন। অন্য চোখে উল্লাস প্রবল


ফাঁকা ছায়াহীন একটা ঘর কেবল

মায়ার টানে কপিকল ঘুরে।


আমার বাবা বললেন, দেখো এর চেয়ে ভালো

একটা টেলিভিশন তোমাদেরকে এনে দেব

আমরা তখন একসাথে বলে উঠি না না না...



গোধূলি জলে পাখি জীবন

অক্ষয় কুমার বৈদ্য


ডেকে গেছে যে নূপুর মাটি বেয়ে বেয়ে

তার টানে বেজেছে বেলা

চোখদুটো ভেসে ওঠে কাজলরেখাতে

সবটুকু অন্তঃক্ষরার খেলা। 

আকাশে ওড়ে মেঘ, 

তারে ভাবে কেউ ডানা 

একটু আঘাতে বয় জল, অবিকল জলের আবেগ 

আয় জল, ছলছল 

নদী বেয়ে বেয়ে, মাঝি জানে 

ফেরার ক্ষণ আলো হারালে 

কেউ তো সন্ধ্যা সাজায শিখায় শিখায় 

ঝিঁঝিঁ ডাকে, হাওয়া নির্জন 


গোধূলি তো সন্ধ্যার আভাস 

ফেরে পাখি, ফেরে জীবন...।



বন্ধক

হুসাইন আহমদ 


কপালের ভাঁজ বেয়ে মুছে যাচ্ছে আয়ু

কালের বুদ্বুদে মলিন হয়ে ওঠছে দোহারা নদী


মৌরিফুলের সন্ধ্যা 

এবং টলটলে জলের চোখ


ধ্রুপদী প্রেমের রঙে সবুজ হয়ে ওঠে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রেম


২৩ কোটি বছর ধরে হাওয়াদের কণ্ঠে বিরহী গান

তুমি নেই

কিম্বা আছো

অথচ দ্যাখো, তোমাকে ছুঁয়ও ছুঁতে পারি না

তোমাকে পড়তে না পারার আফসোস আমাকে কুরে খায় নিশিদিন 


ধূসর কার্পেট বুকে শায়িত হে গোলাপ কুসুম


এক পৌষের রাতে পাতা মর্মর গানের লয়ে

যে জীবন বন্ধক রেখেছিলাম তোমার নাকফুলের কাছে

তা ছাড়াবার সাহস আমার আর কোনোদিনই হয় নি



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট