মালিবাগ যাবে
তূয়া নূর
আমার লাইসেন্সিং পরীক্ষাটা আলসেমি করে দেয়া হয়নি।
ক্যাব চালায়ে ভালোই চলে
সকাল হবার আগে গাড়ি জমা দিয়ে এফ ট্রেন নিয়ে চার্চ ম্যাগডোনাল্ড এভিনিউতে নামি।
হেঁটে এসে এপার্টমেন্টে উঠি
রুমমেটরা ঘুমে
আমি বুড়ো আঙুল ঠোঁটে ভেজায়ে খস খস শব্দ করে ডলার গুনি।
জ্যাকসন হাইটে যাত্রী নিয়ে খুব বেশী আসা হয় না
আমার তেমন একটা পছন্দের জায়গা এটা নয়,
মানুষের বড্ড ভিড় এখানে।
রুজভেল্ট এভিনিউ দিয়ে বের হবো সেদিন একজনকে সব্জিমণ্ডির সামনে নামিয়ে দিয়ে।
খুব আস্তে চালাচ্ছি গাড়ি চারদিক মানুষ জন দেখে শুনে।
তার ভেতরেও একজন বাবার বয়সী মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে বনেটে
থাবা দিয়ে গাড়ি থামালো,
জানালা খুললাম জানতে চাইলাম ঘটনাটা কী!
লোকটা বললো, মালিবাগ যাবে?
মৌচাক মার্কেটের পিছনে,
সমস্যা নেই আমি চিনিয়ে নিয়ে যাবো না চিনলে
ভাড়া নিয়ে চিন্তা করো না
মিটারে গেলে বাড়াযয়ে দেবো
দাম ঠিক করে যদি যেতে চাও তাও হবে।
আমি বললাম, মালিবাগ?
চিলের মতো হাতটা ছো মেরে ধরে হাঁটার পথের উপর টেনে তুললো তাকে,
আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের দিকে তাকায়ে গলার স্বর তুঙ্গে তুলে বললো,
সকালের ওষুধ দিতে ভুলে গেছি বাবাকে।
কিছু মনে করবেন না,
ওষুধ ঠিকমত দেয়া না হলে বাবা আবোল-তাবোল বকে এমন।
অশ্রু বিন্দুর মতো
নাসরিন জাহান মাধুরী
নবনীতা
আমি হেঁটে এসেছি অনেকটা পথ
আজ যখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল
তোমার কথাই ভাবছিলাম..
ভেজা পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম
এই পথ দিয়ে তুমি হেঁটে গেছো কতো বার
মেঘের আড়ালে চাঁদের উঁকিঝুঁকি
এমনটা কতোবার তুমিও হয়তো
মুগ্ধ চোখে দেখেছো
এই বাতাস তোমায় ছুঁয়ে গেছে কতোবার
এখন আর নিজেকে আগন্তুক মনে হয় না এ শহরে
তবুও যে শহরটাতে তুমি নেই
সে শহরের দেয়ালে ফিসফাস অভিমান
যে বাতাসে তোমার স্পর্শ নেই
সে বাতাসে নীরবতার শীতল কাঁচ বেয়ে
নেমে যায় কিছু ভোরের শিশির
অশ্রু বিন্দুর মতো..
সে শহরের আমি কেউ নই..
ফাগুন চোখ
বশির আহমেদ
রোদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে
ঢেঁড়স ফুল,
প্রকৃতি আমাকে ভীষণ ভাবায় সকাল সন্ধ্যা দুপুর।
কড়া রোদে ছায়া পড়ে কঙ্কাল শরীর!
একটা নতুন কবর,
মৃত্যুর খবর শুনে বেদনার জল চোখে ছুটে আসে দূরের স্বজন।
বর্ষার জল শুকিয়ে গেছে,
বেঁচে নেই একটাও শালুক ফুল।
পথের ধারে কুসুমের কলি মরে যায় ধূলিঝড়ে।
ভাবনার ফাগুন চোখে রক্ত কবরী ফুটে
পিয়ারির ঠোঁটে।
বিকৃত মাল ফেরত নেওয়া হয় না
দেলোয়ার হোসাইন
আমি ‘আস্তিক’ বলে গায়ে পড়ে
‘নাস্তিক’ হলে মোক্ষম হাতিয়ার
আমি ‘চামচা’ হলে বেশ হতো
‘সত্যটা’ মুখে নিলে অন্ধকার...
আমি রাত হলে ‘সিন্ডিকেট’ ভালো
দিন হলে ‘কুটুম বাড়ি’ চার আনা
আমি ‘নরম’ হলে দু’চোখ টলমল
‘ছোবল’ দিলে বিষ আর নামে না...
আমি চাষার ছেলে ‘আগুন’ ফলাই
‘বিকৃত মাল’ ফেরত নেওয়া হয় না.
হাসে মুখোশ তালাবদ্ধ মুখ
রুদ্র সাহাদাৎ
নৈঃশব্দ্যে স্বদেশ কাঁদে - চৌদিক শুনি বোবাচিৎকার
তবুও আমাগো কর্ণ পর্যন্ত পৌছায় না কেনো আওয়াজ
বাজারে জান গো বাপজান -বুঝবেন ঠেলা -গরম ঠান্ডা
বাজারে গিয়া দ্যাইখা আসেন - কত ধান কত চাল
ক্ষণে ক্ষণে হাসে মুখোশ- তালাবদ্ধ মুখ অন্ধ চোখ
নিত্যপণ্যের ডান্স দেখে অজ্ঞান পাশেরবাড়ি পলাশের মা
রনি, রুপন,আলম, ইব্রাহীম, অরুণেরও অবস্থা করুণ,খালি হাতে ফিরছে বাড়ি
মলিন চেহারা সবুজ শাকপাতা ব্যাগ ভর্তি...
জীবন ভাবনা
আবুল বাশার শেখ
রক্তের দাগ বহতা ¯্রােতে হারিয়ে যায়
অন্ধকারের উন্মদনায় ওলট পালট জীবন হিসেব
পলকেই চেনা মুখগুলো অচেনার ভান করে।
দৈন্যতা ঘিরে ধরে উপরের সিঁড়ি নিন্মমুখী করে
ছলাকলার শতভাগ প্রয়োগে একটা কণ্ঠ রোধ হয়।
চেনামুখগুলো ছলনার অভিনয়ে এগিয়ে যায় সামনে,
বোধশক্তি হারিয়ে অমানুষ অগ্নি মানুষ হতে চায়;
দেয়ালে ঠেকিয়ে পিঠ ঠোঁট কামড়ে পথ চলে।
বহুরূপী জীবনের নান্দনিক পাঠচক্র এগিয়ে যায়
খোলসের আবরণে দানব ফায়দা লুটে,
যোগ বিয়োগের হিসেব খাতা নতুন করে কষে
আবারো এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়।
পেছনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ফ্লাসব্যাক
ভাবিয়ে তুলে বার বার, ঘৃণার আবরণ ঢেকে দেয়
আহা জীবন ভাবনা তবুও হয়না কেন শেষ!
দীর্ঘশ্বাস
ইমরান খান রাজ
আজকাল আর তোর ঠোঁটে হাত বুলানো হয় না
অপলক তাকিয়ে দেখা হয় না, তোর হাতের মেহেদী
কথা হয় না রোজ, দেখাও হয় না কোথাও।
প্রকৃতি কখন, কাকে, কোথায় সরাতে হবে
সেটা ভালো করেই জানে, খুব ভালো করে