স্মৃতি
সুশান্ত হালদার
তোমাকে ভালোবাসার পর
ভূমিকম্পে নড়েচড়ে বসেছে পৃথিবী সাড়ে সাত বার
এমনই কপাল আমার
সূর্য সংঘর্ষে হারিয়ে ফেলেছি নিজেরই প্রজ্জ্বলিত অধিকার
তোমাকে ভালোবাসার পর
তুষার ঝড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে ইউক্যালিপটাস
এমনই কপাল আমার
চাঁদ পোড়া আগুনেই হারিয়ে ফেলেছি বসন্ত আবার
তোমাকে ভালোবাসার পর
নদীর জলে সাধু সন্ততি ডুবে মরেছে শত শত বার
এমনই কপাল আমার
কান পাতলেই বুদ্ধ ধ্যানে চিৎকার শুনি মরুময় সাহারার
তোমাকে ভালোবাসার পর
ড্রোন হামলায় শুধু আমারই ভেঙেছে দক্ষিণ দুয়ারি ঘর
এমনই কপাল আমার
কুরুক্ষেত্রের স্মৃতি নিয়ে হেঁটে চলছি এখন অযোধ্যা থেকে লাদাখ বরাবর!
তুমি আছো বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর
মুস্তফা হাবীব
জরির ওড়নায় সুষম সাজে যখন তোমাকে দেখি
আনত নয়নে লাজন¤্র ঠোঁটে গোলাপ ফোটাও
আমার স্বপ্নের দিগন্ত হেসে ওঠে সবুজ- শ্যামলে।
ঘুমঘোরে তুমি যখন নীলাম্বরী সাজে এসে
বসন্ত সরোবরে শরীর ভেজাও
আমি আপ্লুত দেখে তোমার নিসর্গ সৌরভ
অলখে ভুলে যাই জীবনানন্দের বিম্বিসার ধুসর জগত।
তোমার বিকল্প কোনো কনকলতা আমাকে টানেনা
জাগতিক ঝর্ণার উচ্ছ্বল রূপ দেখে যতোদূরে যাই
দিনের শেষে আমি তোমাতেই বিলীন।
অনিন্দিতা, তোমাকে ভালোবাসি বলেই
আকাশের তারাগুলো ভেসে ওঠে জলপদ্ম চোখে
তুমি আছো বলেই বাঁচতে সাধ হয় জনম জনম,
অনিন্দিতা, তুমি আছো বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর!
বিষাদ দুঃখ
সাব্বির আহমাদ
[প্রয়াত জান্নাতুল ফেরদৌসকে]
বন্ধ কবাটের ওপাশে নিস্তব্ধতায়
ছেয়ে গ্যাছে বুক।
একটা নতুন কবরের উপর ফুটে আছে ফুল
ডনশ্চুপ, নির্ঘুম।
খয়েরি আকাশ বেয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখি।
মৃদু ছন্দে দুলছে পাহাড়ি ফুল।
কারো চোখ বেয়ে নদী হচ্ছে হৃদয় ভাঙ্গা বুক।
সময় হলে খুলে দিয়ো কবাট
বন্দ কবরের মুখ।
কথা দিলাম সন্ধ্যা সংগীতে আমি;
মুছে দিবো তোমার সমূহ বিষাদ দুঃখ।
অবকাশ
জয়িতা চট্টোপাধ্যায়
গতবার চলে গেছ বড় তাড়াতাড়ি
ভেঙেছিল বুকের ভেতর বালিতে গড়া বাড়ি
চলে গেছে কতো জোয়ার, শরীর অনন্ত ভাঁটায়
তুমি আসবে বলে আজ ও চাঁদ প্রহর কাটায়
তোমাকে ফিরিয়ে নেব অবশেষে জোয়ারে
আমি পাহাড় হয়ে উঠবো, যদি বলো পাহাড়ে কাটাবে
শরীর উষ্ণ হয়ে ওঠে, যতটা উত্তাপ তুমি চাও
ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিজেকে রেখেছি, একবার তাকাও
কতদূর যেতে চাও? এনেছো কতটা অবকাশ?
চিন্তা চিন্তা করো না তোমার শরীরে ছোঁয়াবো না আকাশ।
স্পর্শহীন বালিকা
এবি ছিদ্দিক
মন ভালো নেই - ডাক্তার সাব
স্পর্শহীন বালিকা লেখাপড়ার খরচা বাবদ
হাজারখানেক টাকা নিয়ে গেছে
আপনি এতো কথা বলেন কেন ?
আমি সরল বিশ্বসী কবি
কণ্ঠনালি বেয়ে গড় গড় করে শব্দ বেড়িয়ে আসে!
আমি আপনার মতো খস খস করে ওষুধ লিখি
আচ্ছা - দাঁড়ান আমি তৈরি হয়ে আসি
ভোর হয় সূর্য উঠে ডাক্তার আসে
রোগী আসে - পরিচিত অপরিচিত রোগী
একজন জিজ্ঞেস করেন - কেমন আছেন ?
গায়ে চিমটি কেটে উত্তর দিই - হ্যাঁ, বেঁচে আছি
নৈসর্গিক আকাঙ্ক্ষা
এম সোলায়মান জয়
এই ভরা মাঘের শীতে
কম্বলের মতো অবয়বে জড়িয়ে নিই তোমার প্রেম
তোমার রূপের উষ্ণতার গোপন প্রত্যাশায়
নিমগ্ন থাকে আমার মহাবেগী হৃদয়।
কুয়াশা ভেদ করে তোমার বার্মুডা ট্রায়াঙ্গেল খেত
কেন্দ্রের গভীর গহ্বরের অস্বাভাবিক নেশা
হৃদয়ের শিরা উপশিরায় পৌঁছে দেয়
চারকোলের উত্তপ্ত দাহ।
শুভ্র কুয়াশাচ্ছন্ন অলিক্ষে আকাঙ্ক্ষার বিশাল দেয়াল
ভেদ করে সূর্যরশ্মির মতো কিরণ ফেলে
শিশিরভেজা ডালিমকুমারী চঞ্চু।
মিলনের বৈচিত্র্য প্রাচীনপন্থায়
অনুভূতির স্পর্শে শীতল অন্তরে
মিলনের দামামা বাজিয়ে
গুপ্ত হামলা চালিয়ে পরিপূর্ণ নির্জাস নেয়
তোমার রূপের নৈসর্গিক আকাঙ্ক্ষা।
দুঃখের প্যাটার্ন লক
আজমল হুসাইন
এই আমি যা শুভ্র বলি, কও সেটাকে- কালো
আমার কাছে মন্দ যেটা তোমার কাছে ভালো।
যে পথটাতে ভীষণ কাঁটা, কও সেটাকে ফুল-
এসব নিয়েই তোমার সাথে আমার হুলুস্থুল।
ছয় যেটাকে বললাম আমি, বললে সেটা নয়
সবটুকু বুঝ শেষ হয়ে যায় তোমার বিদ্যালয়।
পৃথিবী নয় সূর্য ঘুরে, বললে না না স্থির;
উল্টো ¯্রােতে ভাসছো ভাসো, নেই জানা তাফসির।
বললাম আমি মিষ্টি এটা, বললে না না টক-
বাক্সবন্দী আনন্দরা দুঃখের- প্যাটার্ন- লক।
মনে রাখবে তো আমায়?
এম. তাওহিদ হোসেন
পরের জন্মে অতলান্ত আশ্চর্যের সমাহার নিয়ে তোমার দরজায় কড়া নাড়বো, বর্তমানের সব অনুভূতি ভালোবাসার পরতে পরতে ভাঁজ করে রাখবো,
তুমি মনে রাখবে তো আমায়?
হৃদয়ের গহীনে মস্তো বড় ছাদ গড়বো
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব
সন্ধে হলে বসবো দু’জনে অব্যক্ত কথাগুলো নিয়ে।
তুমি বসবে তো আমার সঙ্গে?
হঠাৎ, একটি দুটো তারা খসবে;
তোমার চোখের পাতায় তারার আলো প্রতিবিম্ব হবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভরে চেয়ে থাকবো
তুমি কী ততোদিন মনে রাখবে আমায়?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মের জন্য রক্ষিত করো, পাওনাদার হয়ে আমি সে চাওয়াগুলো দাবি করবো
সে পর্যন্ত মনে রাখবে তো আমায়?
আমি হবো উড়নচন্ডি, উস্কোখুস্কো,
এই জন্মের অপারিপাটি আমিকে সবার আগে, পরিপাটি করে পরজন্মে হাজির হবো!
তোমার জড়ো করা চোখের অশ্রুকে
চিরতরের জন্য মুছে দিবো,
সেই সুযোগ দিবে তো আমায়?
মনে রাখবে তো আমায়?
আমি পর জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে সহ¯্র কবিতা, গান লিখবো
তোমার অমন মোলায়েম ওষ্ঠ নিয়ে
মায়া ভরা কাজল কালো চোখ নিয়ে
মাথা ভরা কৃষ্ণ কালো মসৃণ কেশ নিয়ে
¯্রােতস্বিনী নদীর মতো বয়ে যাওয়া তোমার ঐ চিকন গড়ন দেহ নিয়ে আমি গান বানাবো
মনে রাখবে তো আমায়?