কবি ক্লান্ত দেহে বিশ্রামে থাকবেন
রুদ্র সাহাদাৎ
আজ থেকে কবি কোনো সাক্ষাৎ দেবেন না, কবি নিঃস্তব্ধে ঘুরে বেড়াবেন চারিধার
যেথা শৈশব ছিলো, দেখবেন শুধু শিকড়ের কাছাকাছি থাকবেন,
পৈত্রিক মাটি ভিটে আঁকড়ে ধরে মৌড়াইল গ্রামে।
লোক-লোকান্তর ঘুরবেন না আর, শুনাবেন না কালের কলস
কিংবা সোনালী কাবিনের কোনো পঙ্ক্তিমালা।
কোনো মায়াবী পর্দা, কিংবা কাবিলের বোনের কথা শুনবেন না, কবি
আদমজাতী জীবনপাঠ করতে করতে আকস্মিক ফেরারি হয়, চিরনিদ্রার দেশে।
আমাদের বাপ-দাদারা একে একে সবাই গেছে চলে,
আমরাও দাঁড়িয়ে সিরিয়ালে প্রতিক্ষার প্রহর গুনে গুনে...
আজ থেকে কবি ক্লান্ত দেহে বিশ্রামে থাকবেন, বালি-মাটির বিছানায়,
নিকষকালো আঁধার বুকে নিয়ে।
আল মাহমুদ
ইব্রাহীম রাসেল
কেউ দেখুক না দেখুক
কেউ ডাকুক নামে কিংবা না ডাকুক নক্ষত্রের তাতে কী যায় আসে আকাশে রাজত্ব তার, দুর্নিবার।
আল মাহমুদ সেই কবি
যার নিপুণ পরশে বাংলা কবিতারা হয়েছে দিক বিজয়ী, অশির মতো শাণিত চির দীপ্তময়, চির অমলিন যাঁর ছন্দে দুলেছে মন খুলেছে হৃদয়ের চোখ
জাতিকে করেছে উঁচু বিশ্ব দরবারে।
যাঁর ‘কালের কলস’ ‘লোক লোকান্তর’ ‘সোনালি কাবিন’ বাংলা কাব্যাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রমালা
চরণে চরণে গেঁথেছেন যেথায় বাংলার মা, মাটি, মানুষের ছবি বাংলার পাখি, বাংলার বৃক্ষ বাংলার ঋতুর বিচিত্রতা।
দীপ্ত কণ্ঠে বলি তাই
কবি আল মাহমুদের মৃত্যু নেই শত সহস্র বছর পরেও কথা কবে তাঁর সোনালি কাবিন।
ধূমায়িত শূন্যের প্রতি নিবেদন
সাদিক আল আমিন
আদৌ কি বিপুল সমাগমে মুখরিত জনাকীর্ণ প্রান্তর?
পথবহুল জীবনে কি স্বপ্নচ্ছটা ফুরিয়ে যায় এক সময়?
ভিখিরি রোদ্দুর কি খুঁজে ফেরে নিভৃতচারী ছায়ার আবাস?
এইসব দার্শনিক প্রশ্নঘোরে বধ হয়ে আছি পুরাকাল থেকেই
নতুন কবিতা লিখছি-
নিয়মের বাইরে যতগুলো প্রসন্ন সৌন্দর্য আছে;
তাদের মেলাবার চেষ্টা করছি এক মোহনায়, এক উত্তরে
বৈপরীত্য পাখিদের আলাপ শুনে একদিন মানুষ ভেবেছিল
মানুষেরও পাখনা আছে, হাজার পালকের সমষ্টির উড়াল
জেনেছিল ‘আকাশ’ হলো কবিদের কাব্যচর্চার প্রধান উপাদান
আর পাখি হবার প্রবণতা; তা হলো ব্যাপক স্বপ্নঘোর
জেনেছে মানুষ নিজেই অতঃপর-
নিঃসঙ্গ হবার একমাত্র উপাদান কোলাহল
জীবনের চাইতে স্বপ্ন অতিমাত্রায় ছোট এক বিম্বস্বরূপ
এবং আলোময়ী পুরুষও নিভৃতে খোঁজে স্ত্রীর স্নেহমমতা...।
ওদিকে রূপসা নদীর বুকে জেগেছে আকাশমুখী আয়না
নতুন কবিতা লেখা হয়ে গেছে দ্যাখো মেঘলা কাগজীপাতায়
ভাঙনের ভার
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
না, কিছুই ভাঙছে না কোথাও!
না ভাস্কর্য, না ঘর, না কোনও মিনার;
কোথাও কোনও ভাঙনের শব্দ নেই।
প্রেমিকের চোখ দিয়ে দ্যাখো-
চারদিকে,
কেবলই নির্মাণ নির্মাণ উৎসব।
যা ভেঙেছিল!
যা ভাঙছে!
অতঃপর আর যা যা ভাঙবে, তা সব
একমাত্র প্রেমিকই নিজের ভেতরে করছে বহন।
জানো তো, ভেতরের কোনওকিছু ভাঙলে
আর যাইহোক শব্দ রোল ঘটেনা;
তবুও ভাঙনের ভার বয়ে যেতে হয় নিজের দিকে;
কবিতা কষ্টের কলা
মিশকাত উজ্জ্বল
কবিতা অষ্ট প্রহর কষ্টের কলা
অব্যক্ত যা; কলমের কালিতে বলা।
শব্দ তার দুর্বিনীত- শাণিত দু’ধার
সর্বগ্রাসী, লেলিহান অঙ্গার।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রাণ যাবার পালা
উন্নয়নের নামে শুনায় যারা অথর্ব গলা,
তারা প্রবঞ্চক- জনগণের শালা
কবিতার শব্দে তাদের কান মলা।
শূন্যের ধারাপাত
সেলিম রেজা
নীরবতা ভেঙ্গে ঠেলেঠুলে
মানুষ যাচ্ছে মরণ মেলায়
মৃত্যুর কাছে পরাজিত কবি
কিংবদন্তীর শোকে মূহ্যমান
বইপাড়ায় সারি সারি শাদা বক
কালের কলস, সোনালী কাবিন
ভিড় করে যেন বুক সেলফজুড়ে
বিরহ বেদনার মুখরতা গণনায়
সুনসান রাতের আঁধারে কফিন
কোলাহল শেষে রাত গভীর হলে
অবশেষে যে যার আশ্রমে ফিরে যায়
কাঁধে হিসেবের খাতা শূন্যের ধারাপাত
এখানে আর কখনো এসো না
সৌর শাইন
কবি তোমার জন্য,
আমার কোনো দুঃখ নেই, কান্না কিংবা বেদনা
তুমি ফিরে গেলে, ভালোই হলো,
তবে শোনো, এখানে আর কখনো এসো না।
তুমি বরং অন্য কোথাও, দূরে কোথাও যাও,
দোয়েল-কোকিল ফুল-পাপড়ি সবাইকে সাথে নিয়ে যাও,
তবু মানুষ কিংবা মানুষের মতো কাউকে
কাছে টানতে চেয়ো না।
দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচলে ভারি ভুল করেছ তুমি,
স্বশরীরে ভুলের মাশুল তুমিই দিলে.. চিরকালই দিবে, তাতেই বা আমার কি,
‘ক্ষুধার কাছে উপোস থাকা প্রাণকে দেখে কে?’
এরূপ প্রশ্ন কক্ষনও তো আমার কান অবধি পৌঁঁছাবে না।
কাদা কিংবা আবর্জনা যাইবা লেগেছে তোমার গায়ে,
সেই গা খানি মাটি খাবে.. মিটবে ধরিত্রীর ক্ষুধা,
তরুলতার খাদ্য হবে, ফুল-ফসলের গদ্য হবে,
তাই তো ওসব নিয়ে আমার ভ্রুক্ষেপটুকু নেই।
সত্যি বলছি তোমায় কোনোদিন বাসিনি ভালো,
তবু আমার কাছে গচ্ছিত রয় আছে ‘সোনালি কাবিন’ খানা।
সবার মতো আমিও তোমায় দ- দিয়েছি,
বিচারকের আসনে বসে রায় পড়ছি শোনো,
‘তোমায় দোষের দীপাবলি মাটির ঘরে চাপা দিয়ে
তোমার লাশের সাথে রেখো, ওসব দেখার সময়টুকু আমার কাছে নেই।
অবুঝ কবি কথা দিলাম,
তোমার ভুলকে আমি ভুলে যাবো, কেবল শুদ্ধতাকে নেবো,
পঙক্তিগুলোর নিঃশ্বাসে কেবল প্রেমাঞ্জলি দেবো,
রাত পোহালে দু’চোখ ভরে দেখবো
বিবাহিতার বিছানা জুড়ে পানকৌড়ির রক্ত!’
তোমাকে জানতে
টিপু সুলতান
তোমাকে জানতে কালোচুলের সিঁথি কাটি
আঙ্গুল গুঁজি দুই ভ্রু’র মাঝখানে
কপাল ছুঁয়ে চোখ তুলি পৃথিবীর দিকে
যে বনে কোকিল ডাকে।
যে বনে খুনরাঙা বসন্ত রঙ।
যে বনে আগুন জ্বলে বৃক্ষ ডালে।
যে বনে পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়া লাল।
জানি আজ বসন্ত,ফাল্গুন দোলা মহুয়াগাছ
দখিনা বাতাস ফেরা শহরে, বহুঘন সবুজ ঘর
জলে স্থলে দুর্লভ প্রেম-মনে দৃঢ় উচ্ছ্বাস।