শব্দমিছিল
নাফছি জাহান
ভালোবাসার বিসর্জন
নিঃশ্বাস নিতে আজকাল বড্ড কষ্ট হয়
অধীর আগ্রহে মন, শেষ নিঃশ্বাসের প্রতীক্ষায় রয়
দীর্ঘ রাত্রিগুলো জানে- ভালো থাকার সর্ব উপকরণ
তাকে কতোটা শূন্যকরে বিদায় নিয়েছে,
রাতের আকাশটার অজানা নয়- দূর আকাশে দৃষ্টিপাত রেখে
কতো অজস্র জল গড়িয়ে পড়েছে এ চক্ষুজোড়া হতে,
বোকা কান্নারা আত্মচিৎকার করে মুক্তি পাবার
কতোটা আকুতি-মিনুতি করেছে শূন্য ঘরখানা সেটাও জানে,
শুধু জানে না- দিনের আলোয় প্রাণোচ্ছ্বল মানুষগুলো
জানে না- চিনচিনিয়ে বুকের ব্যথাটা দিনের আলোতেও
প্রবল গতিতে বাড়তেই থাকে, শুধু চাপা পড়ে থাকে
সর্ব আড়ালে। এ পৃথিবী জানে না- ভালোবাসা কাকে বলে।
তাদের অজানাই রয়ে যায়- ভরসার খুঁটি যখন
আকস্মিক প্লাবনে টুকরো টুকরো হয়ে যায়
তখন বেঁচে থাকার স্বাদ- সেটাও মরে যায়।
এলোমেলো প্রহরগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও
ব্যথাকে গচ্ছিত করতে থাকে তার মনের গহীনে,
সেখানে সুখপাখিরা আর সাক্ষাত করতে আসে না অতি সহজে
অপ্রকাশিত এ ব্যথা- উপলব্ধি হতো যদি তা
তবে দিকে দিকে নীরব মৃত্যু উপহার দিয়ে, এতো ভালোবাসার বিসর্জন হতো না।
মৃত্যুপথযাত্রী
অপার্থিব মায়াবী পৃথিবীর বুকে- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বপ্নের
বীজ বুনে যাচ্ছো বৃহত্তর পরিসরে,
স্বপ্নব্যাকুল দু’চোখ তোমার, ঘোর অন্ধকারে ডুবে আছে
অনিদ্রার চিরস্থায়ী সঙ্গী হয়ে।
ক্ষীয়মাণ জীবনের কোষাগারে-
মিছে রতœমূল্য সঞ্চয় করছো তোমার অবচেতন মনে,
ওগো রতœমূল্য সঞ্চারিণী-
চিরন্তন সত্য, মৃত্যু যে কড়া নাড়ছে সকলের করিডোরে।
দিনান্তের শেষ ক্ষণে, শতাব্দীর ক্লান্তি মুছে
সত্যকে অনুধাবন করো হে,
সঞ্চয়ের যাত্রা চলে এসেছে শেষ পথে।
বেদনার কোলাহল ঠেলে, সুখের স্বপ্নে বিভোর থেকে
করুণ আর্তনাদকে বিদায় দিতে পেরেছো কি তবে ?
মৃত্যুপথযাত্রী সকলে আমরা, আছে যতো মানব-মানবী,
শ্রবণেন্দ্রিয় শুনছে কি তোমার ? নাকি ভেসে যাচ্ছে এ কথামালা-
নৈঃশব্দের স্বরে, তোমার কর্ণপাতে।
দিনশেষে স্বপ্নের সম্ভাবনাকে নিভে দিয়ে মিশে যেতে হবে মৃত্তিকা গর্ভে,
তোমার সঞ্চিত কর্ম ভা-ারই বাঁচিয়ে রাখতে পারে তোমায়
অপার্থিব পৃথিবীর বুকে। মৃত্যু যে আকস্মিক
ছিনিয়ে নিয়ে যাবে- সকলের অগোচরে, হৃদপিঞ্জরটাকে।
স্বীকারোক্তি
জীবনের মায়াজালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েও
এ সহজ স্বীকারোক্তি উপস্থাপনে,
সামান্যতম মহাসংকট উপলব্ধি হচ্ছে না
নিষ্ঠুরতার ভীড়ে জড়িয়ে যাওয়া-
বীভৎস মনুষ্য সম্মুখে।
সত্যিকারার্থে, একফালি হাসির অন্বেষণে
ব্যস্ত থাকা স্বপ্নগ্রস্থ এ মন
নিঃসঙ্গতাকে অত্যধিক আপন করে
দিনশেষে, অশ্রুসমুদ্রে ডুবসাঁতার কাটতে থাকে।
তন্দ্রাবিহীন চক্ষুজোড়া দিয়ে গড়িয়ে পড়া
বিন্দু বিন্দু নোলাজলও যেনো উপহাস করে
অট্টহাসি হাসতে চায় আশ্রয়হীন পরিণতি প্রত্যক্ষ করে,
হতাশাগ্রস্থ মন হতাশার প্রবল সংঘর্ষে
বেদনার মহাপ্রলয় সৃষ্টি করে যুগলবন্দি হয়ে।
নিরাশ্রয় জীবন ক্ষণে ক্ষণে পুড়ছে
তবুও নতুনত্ব নিয়ে শুরু করার আশায় বুক বাঁধে একান্তে।