শব্দমিছিল
হোসনা মুরাদ
নিবিড় সন্তরণ
শতবর্ষী রাস্তাটা নিয়মিত হেটে যায়
গোধূলির জানালার পাশ দিয়ে,
যেতে যেতে যেতে যেতে একদিন সে দেখে
এক কাপ জলের তৃষ্ণায় সমুদ্রের চোখে
অরুণাভ প্রতিবিম্ব !
ঝরা পাতাদের ইচ্ছা হয়
শেষবারের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাবে,
ভেঁজা স্মৃতির পাতাগুলো তার গায়ে বিছিয়ে
শুকিয়ে নিবে ফসিল হওয়ার আগে
শুকাতে না শুকাতেই স্মৃতিগুলো ভিজে যায়
শিশিরের চোখের জলে-
ঝর্ণার পায়ের ঘুঙুরের বিষণœতা লুকোয়
নিবিড় সন্তরণে
প্রবালের বুকে নীল হ্রদের হাহাকার
স্রোতস্বিনীর শিঞ্জনে !
অভিযুক্ত রাত্রি
একটা খুন দেখার জন্য বসে আছে সময়-
অপেক্ষার আয়ুষ্কাল হতে পারে
শত বছর কিংবা সহস্র তিথি
কাঠগোড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্ত রাত্রির
চোখে অনুতাপের জল
জোনাকির গায়ে বাতি জ্বলে নিভে
অন্ধকারের দেয়াল ঘিরে
সময়ের কাটা ঘুরছে উৎসব মুখর
একটা খুন দেখার প্রত্যাশায়
প্রতীক্ষিত মহামিলনের মাহেন্দ্রক্ষণে-
যুগল হৃদয়ের শাণিত ছুরির আঘাতে
ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত খুন হবে
‘মন খারাপের একটা রাত’
শহুরে শীত
শীতের গাড়িটা এসে থামল চলন্ত পথের বাঁকে
টাটকা শাক সব্জি আর ফুলেল সুবাস ছাদে
কুয়াশাচ্ছন্ন চাদরে ঢাকা নাগরিক শহর
জ্যোৎস্না ভেঁজা চাঁদের শীতলতার বহর
বাতাসের কণ্ঠে শৈত্য যন্ত্রণার হাহাকার
শহুরে মানবিকতা অপলক নির্বিকার
এক চিলতে উষ্মার দীনতায় কতশত জীবন
অলি গলিতে খোঁজে জ্বলন্ত গোধূলির বিচরণ
পথ শিশু রাত্রি জড়িয়ে ঘুমায় ল্যাম্পোস্টের নিচে
ক্ষুধা পেটে নির্ঘুম স্বপ্নরা নিয়তির অপর পিঠে
প্রেমিক প্রেমিকারা বিকেলে হাটে গায়ে গা ঘেঁষে
ধোঁয়াশা সন্ধ্যায় পাখিদের হৈ চৈ বাতাসের রেশে
মিষ্টি মিষ্টি রোদে চনমনে শহুরে দুপুর
কেনাকাটায় পশমি শাল আর শতরঞ্জি মাদুর
শিশির ভেঁজা সকালের ওম ওম ঘুম
এক কাপ চা আর প্রাত রশ্মির আদুরে চুম !