বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৪





নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সাদিক আল আমিন 

এইতো যখন সন্ধ্যের মেঘেরা ঢলতে লাগলো ভেজানোর নেশায়,
তখন আমি রবিউল স্টোরে, রঙ চায়ের ঘ্রাণে ডুবে একাকার
নারায়ণপুর আমার পরিচিত অসুখ, কতো ত্রস্তদিনের অহংকার!
সয়ে নিয়ে আছি বহুকাল থেকেই...

স্কুলমাঠের সামনে ইতস্তত এদিকওদিক দেখা কিছু নতুন মুখ দেখে
নস্টালজিক আমি এইসব রৌদ্রছোঁয়া বৃষ্টির ভরাবুক কান্নায়
খুঁজতে থাকি কোনো কলহাস্য আবেগ, কোনো কাঁটাহীন ফুল
প্রাথমিক পড়ুয়া ছাত্রীদের চুলে গোঁজা; হাতে শাপলা, মৃদুহাসি ঠোঁটে...

তৃতীয় শ্রেণী, বাংলা, উপস্থিত বারো জন, ছাত্র সাত, ছাত্রী পাঁচ
হলুদ সব অনুচ্চ হাই আর লো বেঞ্চ, নিকশ ব্ল্যাকবোর্ড, সাদা চক
আজ আমি এক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, তৃতীয় শ্রেণীতে বসে
চকচকে স্লেটে লিখছি বর্ণমালা, বাইরে বৃষ্টি, বাংলা আপা শেফালি
পড়াতে থাকেন ...

হাতে রঙ চায়ের তীব্র ঘ্রাণের সাথে সাথে সয়ে যায় এইসব দিনযাপন
জল আর কাদার রন্ধ্রে মিশে যেতে যেতে ভাবি, কখনো কি
এই বৃষ্টির আগমনী মেঘেদের মতো কোনো সহপাঠিনীকে
ভিজে ভিজে মাঝপুকুর থেকে একটি শাপলা এনে দেবার অদ্ভুত নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলাম?


আঙ্গুলের ডগায় শীত
সাকিব শাকিল

নাকফুল পড়ে গ্যালে ভাঁটফুল জন্ম নেয়
আঙ্গুলের ডগায় শীত নামে আষাঢ়ে বিকেলে
এইসব বিধবা দিনে কার ঘরে জল ঢুকে পরে;
অপেক্ষার করাঘাতে তার ঝরে যায় বিষণœ মৌরিফুল।

করগুণে প্রণয়ী মাস পিছনে ফেলে
ভালবাসার ব্যাগে করে কিনে আনি
ভিজে মেঘের প্যারাগ্রাফ।



মেঘবালিকা
সামিমা বেগম

বর্ষা এলে, মেঘবালিকা ফেলে চোখের জল
জলের বুকে জলকেলিতে মত্ত শতদল।
কদম, কেয়া মিষ্টি হেসে গন্ধ বিলায় সুখে
মেঘবালিকা রূপে আমার সোহাগ বাড়ে বুকে।

দূর আকাশে মেঘবালিকা উড়ায় মেঘের ভেলা
সূয্যিমামা নিত্য করে লুকোচুরি খেলা।
হরিৎ বরন গাছেরপাতা সতেজ পাখা মেলে
মনের সুখে ব্যাঙ-ব্যাঙানি ডোবার জলে খেলে।

বৃষ্টিজলে নাইতে নামে খোকা-খুকুর দল
মেঘবালিকা নিয়ে আসে অথৈ পানির ঢল।
সবার মনে ইচ্ছে জাগে জলে ভাসাই গা,
বাঁশবাগানে আলো খুঁজে শাদাবকের ছা।

মেঘবালিকা ধরার বুকে বৃষ্টি হয়ে আসে
মনটা কেমন মেতে ওঠে ছন্দ অনুপ্রাসে।
এমন দিনে হৃদয় মাতে মেঘবালিকার রূপে
ইচ্ছে করে পদ্য লিখি মন থাকে না চুপে।


আষাঢ়ে পাগলামি 
তপনকান্তি মুখার্জি 

এ এক অন্য আষাঢ়- অন্য বর্ষা ।
পাগলাঘন্টি বাজিয়ে নামে মনমুলুকে ,
বৃষ্টির ছাঁটে হাঁটে আকুল বিশ্বাস,
গহন নিশ্বাস আর নিশির আহ্বান।
মনের আঁচলে ওড়ে পিপাসিত যৌবন ,
পাগলেরা অংক কষে ধারাবাহিক সুরে ।
বৃষ্টি ঝরে চলে, আষাঢ়ে পাগলামিও ।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট