বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৫




বৃষ্টিধারা
দিবাকর মণ্ডল

ঐ শনশন বায়ু ঘনঘন বাজিছে- বাতাস বহিছে
কড়কড় রবে বজ্র ঘোষণা, গুরু গম্ভীরে গাহিছে--
                                            কে গান গাহিছে !
আসমান হল সহসা উতলা ,                                                  
শুরু হল যেন মহাকাল খেলা,
                         চকচকি করে তরবারি খোলা
                                  অসুরের মাথা কাটিছে ।

শুরু হল ধারা পাগলের পারা ছুটিছে-
                                     ধারা বহিছে ।
নদী ফুলে ফুলে মহা কলরবে নটরাজ সেজে ধাইছে-
                                         কোথায় বহিছে ?
তরু শাখাশাখি নর্তনশীলা
মেলে দিয়ে পাখা করে কত খেলা
আষাঢ়ের শেষে পড়ে থাকে বেলা-
                               সবুজের ধারা ভাসিছে।

চোখের জলে বৃষ্টি ঝরে
রফিকুল নাজিম

আকাশতলে বৃষ্টি জলে ব্যাঙের ডাকাডাকি
খেলার মাঠে হল্লা শৈশব কাদায় মাখামাখি।

অলসবেলা কাটে হেলায় ঘরের দাওয়ায় বসে
বৃষ্টি এসে ভেজায় উঠোন সুখের হিসেব কষে।

উজান জলে পুঁটিমাছের লুটোপুটি খেলা
আমের শাখে জামের রঙে হৈচৈ সারাবেলা।

পাটের আঁশের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতাল ছেলেবেলা
কাশবনে চোখাচোখির লুকোচুরি খেলা।

বাদলা দিনে মায়ের হাতের শিমের বিচি ভাঁজা
দাদুর ঘরে গল্প জুড়ে ভাবছি আমিই রাজা!

টিনের চালায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি যখন ঝরে
সেই বিহানের উষ্ণছোঁয়া উদাস মনে পড়ে।

এখন আমার শ্রাবণ আসে মেঘের পালকি চড়ে
বর্ষা গেলেও আমার চোখের বৃষ্টি কেন ঝরে?



এক বরষায়
আরিফুর রহমান  

বৃষ্টি পোহাতে চাইলে রঙ মাখতে হয় শরীরে, মনে-
মেঘের রঙ, কাদা মাটির রঙ।

বিবাহযোগ্য মেয়েটি ক্যাফেটেরিয়ায়,
প্রেমিকের মুখোমুখি, এক আকাশ মেঘ চোখে-মুখে!

কনে দেখা আলোয় অপেক্ষারত ছেলেটি স্বপ্ন বুনছে।
দূর থেকে ছুটে আসছে শ্রাবণঘন বৃষ্টি।
প্রিয় ব্ল্যাক কফি রেখে আসা ক্লান্ত দুটো পা থেমে যায় নতুন ঠিকানায়।

মেলে ধরা একটা ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে,
ওরা কেবল শুনতে পায়, ছুপ্ ছুপা ছুপ্ ছুপ্ ঝুপ্ ঝুপা ঝুপ্ ঝুপ্

পেছনে ঝরে যায় ফেলে আসা সময়ের নানা রঙ।



মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো
অমিতাভ মীর

মনখারাপের বৃষ্টি যখন নামলো চোখের পাতায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা  স্মৃতিগুলো হাতায়।
কাজল মেঘের অভিমানে আকাশ পাগলপারা,
ঝমঝমিয়ে মাটির বুকে নামলো শ্রাবণধারা।

মাটির দহন নিভলো যখন শ্রাবণ ধারায় ডুবে,
আমার বুকের সুপ্ত সুখ তখনই গেল উবে।
ছলছলিয়ে চোখের আকাশ ঝরছে নিরবধি,
কলকলিয়ে উঠলো দুলে বুকের গহীন নদী।

সেদিন এসেছিলো পাশে কেউ গভীর ভালোবেসে,
ভুল বুঝে সেও গেল চলে আনমনে বাঁকা হাসি হেসে!
গরম কফির ধোঁয়ায় স্মৃতির আবেশ জুড়ায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিগুলো হাতায়।

অঝর ধারার বর্ষণমুখর এক উদাসী সন্ধ্যায়,
ভেজামন নিয়ে কেউ এসেছিলো আমার আঙিনায়।
মজেছিলো দু’টি ঠোঁট গরম কফির কাপের ছোঁয়ায়,
বুকের নদীর পাড় ভেঙেছিলো সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়।

তারপর কেটে গেছে অনেক বর্ষণমুখর শ্রাবণ,
বুকের নদীর পাড় ভাঙে আজো চোখের প্লাবন।
আজ মন বেসামাল মনখারাপের শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
ঝুলবারান্দার শার্শিতে বৃষ্টিকণা স্মৃতিগুলো হাতায়।

বৃষ্টি নামে
হামীম রায়হান   

বৃষ্টি নামে থেমে থেমে,
বাইরে যাওয়া দায়,
আকাশ ফুটো করলোটা কে!
তার তো দেখা নাই।
কচুর পাতায় বৃষ্টির জল
করছে কেমন টলমটল,
ঠাণ্ডা জলে কাটছে সাঁতার
কৈ, মাগুর আর শিঙের দল।
ডুব সাঁতারে পুকুর পেরোয়
হাঁসের দুষ্ট ছানা,
নীল-আকাশি রঙে দেখো
সাজে কচুরিপানা।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট