আষাঢ়ের এক সন্ধ্যায়...
কৌশিক সূত্রধর
সারাদিন সূর্যের দেখা মিলল না, বৃষ্টিও নিল না বিশ্রাম। বিরামহীন মেঘের কান্নায় বাড়ির সামনে খালটি উপচে উঠেছে। যেন নিজের ক্ষুদ্রত্ব অতিক্রমের গৌরবে ভাসছে সে।
ঝিরঝির বাতাসের সাথে আমার ঘরের জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
একটু একটু বৃষ্টির ছিটে এসে আমাকে ছুতে যাচ্ছে।
জানালা বন্ধ করলাম না, ঘরের আলোও জ্বালালাম না। কিছুক্ষন পর পর মনে হলো অন্ধকারের আচলে সূর্যের চোখ ফোটে চপলা বিদ্যুৎ এর খেলা শুরু হয়েছে। প্রকৃতিকে শান্ত ও স্নিগ্ধ মনে হতে লাগল। একদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার অন্যদিকে বৃষ্টির প্রচন্ডতা এ-দুয়ে মিলে কী চমৎকার এ সন্ধ্যা প্রকৃতির আবির্ভাব ঘটেছে।
ধীরে ধীরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে। বৃষ্টির ফোঁটা আর দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি পতনের সুর আর দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছিলো। প্রকৃতির এক অজানা মুক্তি যেন মানব মনকে উদাস করে বসিয়ে রাখে জানালার পাশে।
তেমনি উদাসীনতা আমাকেও ভর করলো।
কিছুতেই জানালার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারলাম না। এমনি সময় বিরহীদের বোধ হয় মনে জেগে উঠে পুরানো স্মৃতি।
ধীরে ধীরে সন্ধা হাজির হলো।
জানালা থেকে আমার পড়ার টেবিলে চলে এলাম। আলো জ্বালালাম, এমনি সময়ে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ আমার মনকে মাতাল করে তুলল। ছুটে গেলাম জানালার পাশে। আপন মনে গুণ গুণ করে আমি গেয়ে উঠলাম বর্ষার গান। সাথে সাথে রাজ্যের আরও যত গান, আরও যত সুর সব যেন আমার মনের মধ্যে এসে ভর করলো।
বৃষ্টির শব্দকে মনে হলো মহা আর্কেস্টার পরিবেশন সুর হয়েছে।
এ সর্বগ্রাসী বাদল ধারার মহান সিমফানী বিশ্ব ঐক্যের ও মহাবাদকের অভাবনীয় দক্ষতার প্রতীক বলে আমার বোধ জন্মালো। কেন যেন দর্শন শাস্ত্রের মতো আমার মনে হতে লাগল এ বিশ্ব সংসারে আমরা কেন এবং কিই বা আমাদের করনীয়। সে বর্ষণমুখর সন্ধায় বৃষ্টির শব্দে যেন আমি আত্মহারা হয়ে গেলাম।
মনে হলো পৃথিবীতে প্রকৃতির এই বৃষ্টিভেজা রূপের চেয়ে আর ভালো কিছু সৃষ্টি হয়নি, যা দেখে চোখ ফেরানো যায় না।
মির্জানগর , আটিগ্রাম, মানিকগঞ্জ