নোনাজলে হৃদমাজার ডুবে যায়
রুদ্র সাহাদাৎ
বৃষ্টির জল দেখে- শিখেছি কান্না
জীবন্মৃত মানুষ
আকাশের কান্নায় গতকাল সারারাত আমিও কেঁদেছি
কেউ দেখে না -কেউ বুঝেনা
পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা
জানে পাগলামন, জানে ঈশ্বর
বৃষ্টির জলে বন্যা হয় দেশে, দেখে সবাই
চোখের নোনাজলে হৃদমাজার ডুবে যায়
কেউ জানে না, জানে শুধু পুড়া দু’চোখ....
সেদিন টিএমটিতে বৃষ্টি নেমেছিলো
শাহীন মাহমুদ
চোখের কোণে অশ্রু জমালে
জলধমেঘ এক অলক্ষুনের বিকেলে
টিএমটি রেস্তোরার জনাকীর্ণ দোতলায়
ক’ফোটা চোখের জল
অতঃপর-বৃষ্টি।
হৃদয়ের এপার ওপার
বেয়োনেটের আঘাতে থেঁতলানো বৃষ্টি।
তোমার চোখের জল একদিন নদী হলো
নদী থেকে সাগর আবার সাগর থেকে মহাসাগর
এমন পুঞ্জবর্ষণ চাইনি প্রিয়তমা ।
মেঘের নদী আমিও পাড়ি দিতে জানি
প্রশান্ত জলাশয় বুকে ধরেছো
অথছ মৃদু মৃদঙ্গের বোলে দিশেহারা।
হায় প্রিয়তমা
বৃষ্টির পর-দেখে নিও অলকমেঘ
আবার ফিরে এসো এই টিএমটি তে
কোন এক মুমূর্ষু বিকেলে;এই শিল্পকলার পাড়ে
আবার লাবণ্য আর অমিত হয়ে বসবো দুজন
কোন এক তুমুল বৃষ্টিতে ।
বৃষ্টিতে হয় ফুলের বিয়ে
মিসির হাছনাইন
ফুল গাছটার বিয়ে হয়ে গেল
আষাঢ় আসেনি তবুও বৃষ্টির দিন ফেল
পানিতে ভেসে আসলো কেয়াফুলের নাও
সারাটা দিন বৃষ্টি হলো কোন দেশে যাও?
ফুলেরা সব উঠলো বলে- বিয়ের গান গাও..
লাল শাড়িতে সেজেছে টুকটুকে লাল বউ
তেঁতুল বনে নাচছে ফুল শত ফুলের ঢেউ
সারাটা দিন বৃষ্টি হলো ফুলের দল গাইলো..
বনের পাখিরা সব ভিজে গেলো
পানিতে ভেসে ঝরাপাতারা এলো
ফুল গাছটার বিয়ে হয়ে গেলো।
বৃষ্টিতে হয় ফুলের বিয়ে
কাজ নাই তাই বিয়ে দেখি,
চোখ না ফেরানো এক নারীর মতন
ফুলগাছটা সাজলো।
শুনতে পাই হৃদয়ের সেতারে
রিয়াদ হোসেন আরমান
আকাশে ঘোলাটি মেঘের ঘনঘটা,
দুর্যোগে প্রকৃতি খানিকটা ফিকে হয়ে এসেছে!
যেন দূরাগত থেকে অবলা নারীর অবয়বের মতো দেখা যাই সবকিছু।
বিকেল বেয়ে নেমেছে ঘোর অন্ধকার!
অনবরত মুষলধারে ঝরছে যেন- আষাঢ়ের বৃষ্টি,
জোনাকিরা ছুটে চলেছে বেনুবনের পথটি ধরে,
এদিকে নিবো নিবো হয়ে জ্বলছে কবরস্থানে- জালানো হারিকেলটি।
পথের দু ধারে পানি টেটুম্বুর, রাস্তা-ঘাট একদম ফাঁকা।
জনসাধারণ বিজলীর রশ্মিতে লেপ গুটিয়ে ঘুমে বিভোর!
শুধু শোনা যাই ব্যাঙ্গের ঘ্যাঁঙোর ঘ্যাঙ গান;
আমি ঘরে বন্ধি একা, রোয়াকে দাড়িয়ে দেখছি বাইরের ঝড়ো হাওয়া।
হঠাৎ মনে পড়ে যাই, রবি ঠাকুরের ‘আষাঢ়’ কবিতাটি!
ছন্দে ছন্দে ভেসে ওঠে- বর্ষণ মুখর দিনটির প্রতিচ্ছবি!
শুনতে পাই হৃদয়ের সেতারে;- মেঘবালিকার ঘুঙুরের ঝুপ ঝুপ শব্দ।
টিনের ছালে ঝরছে যেন অষ্ট প্রহর!
ভেজা বর্ষা কিংবা পাথুরে হৃদয়
যাহিদ সুবহান
বাইরে রেখো না পা আজ
আছে ভয় হারিয়ে যাবার
আষাঢ়ের এই ভেজা বর্ষায়
তোমাকে পেলে বৃষ্টির জল
হয়ে যাবে মাতাল প্রেমিক
সকল নিষেধ অমান্য করে
ছুয়ে যাবে লাউয়ের ডগার মত
নুপুর পড়া তোমার দুটি পা
বাইরে যেওনা এই আষাঢ়ে
পিছু নেবে ঝড়ো হাওয়া
কী হবে তখন তোমার?
পাখিরাও জেনে যাবে যখন
বৃষ্টির প্রেমে পড় তুমিও
আর তোমার পাথুরে হৃদয় ...
সমর্পণ
আশরাফুল মন্ডল
পেরিয়ে এসেছি তাচ্ছিল্যময় চৌকাঠ
শুকনো চামড়ায় গজিয়েছে রোঁয়া
খিদেজর্জর দিনগুলো নিয়ে গেছে
গর্তের ইঁদুর
পার হওয়া সহজ নাকি
হাতড়াচ্ছি স্বজন ডাকা স্বর
ঠান্ডা বাতাস এলেই ভেসে ওঠে বাঁশতলা
খড়ো চাল দাওয়া উঁচু ঘর
সারারাত আমাকে ভেজাও মাটির ঘ্রাণ
বোজা চোখের হ্রদে জলের শব্দ শুনি
এসো খিদেয় ঠাসা উদোর
এসো মাটির দাওয়া
গ্রহণ করো আমার সমর্পণ
মেঘের ডাকে
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা
কালো মেঘের প্রবল দাপট ঝড়ো বাতাস বয়,
মেঘগুলো আজ থমকে গিয়ে ঈষাণ কোণে রয়।
গুড়–ম গুড়–ম মেঘের ডাকে বিজলী আকাশময়,
একটু পরে থেমে থেমে, কাঁপছে ভূবনময়,
ঝুম্ বরষা গাইছে গান টিনের চালে পড়ে,
কদম গাছের ডাল ভেঁঙেছে খেয়ালী এ ঝড়ে।
ফোঁটায় ফোঁটায় বারি ধারা মাধবীলতা নড়ে,
মধুর এমন পরশ পেয়ে সুখের জীবন গড়ে।
কুঞ্জলতা ভিজছে একা কাঁপছে থরে থরে,
শেষ আষাঢ়ে নাইতে হবে, বলছে সমস্বরে।
লিলিরা সব দলে দলে হাসছে টবের পরে,
ছোট্ট ভেজা টুনটুনিটা তবুও খেলা করে।