বিরামচিহ্ন

 


বিরামচিহ্ন

মুহম্মদ মাসুদ


স্কুল। যে স্কুলসবার, সকলের। স্কুলেরবারান্দার সামনে টাঙানো পতাকাটিও সবার। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। নেই কোন হিংসাবিদ্বেষ, উষ্কানি। স্কুলে সকল ধর্মের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। পাশাপাশি বসে। খুব কাছাকাছি বন্ধুত্ব হয়। খেলাধুলা করে, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। 


চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে মিঠু আর নিমাই। খুবই ভালো বন্ধুত্ব ওদের। পাশাপাশি বসে, খেলাধূলা-দৌড়াদৌড়ি করে, ছবি আঁকে। দোকানের বিস্কুট, চানাচুর, লজেন্সও ভাগাভাগি কওে খায়। আবার ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়াও করে। কিছুক্ষণ পওে মিলেও যায়। সত্যি! প্রকৃত ভালোবাসা ছেলেবেলার বন্ধুত্বে। যেখানে কোন দৈন্যদশার চিহ্নটুকুও নেই। ঈদেও মধ্যেও নিমাই মিঠুদেও বাড়িতে গিয়ে একসাথে আনন্দ মশকারি করে, খাওয়া-দাওয়া করে। সারাদিন একসাথে গ্রামের এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করে।  পুজোতেও মিঠুকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে নিমাই। দু’জনে একসাথে ঠাকুর দেখে। নাচগান দেখে। পাঁপড় ভাজা কিনে খায়। 


মিঠুর আব্বু সরকারি চাকুরিজীবী। শহরে থাকে। প্রতিমাসেই চকলেট. বিস্কুট নিয়ে আসে। চকলেট নিয়েও ওদের দু’জনের মধ্যে ভাগাভাগিহয়। নিমাইয়ের বাবা খেটে-খাওয়া মানুষ। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে জিলাপি আর মুড়ির মোয়া নিয়ে আসে। এখানেও চলে দু’জনের ভাগাভাগি। কিন্তু, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নিমাইয়ের বাবার কোন কাজকর্ম নেই। গোছানো যেটুকু টাকাপয়সা ছিলো সেটাও শেষ। খুবই কষ্টে দিনপাত করছে। 


মিঠুর আব্বু বেতন পাচ্ছে। ঝুঁকিভাতাও পাচ্ছে। শহর থেকে ছুটি না পেলেও খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছে ওদের। মিঠুদের বাড়ির দশ বাড়ি পরে কেউ একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত  হয়েছে। এনিয়ে জয়নব বেগম চিন্তায় অস্থির। ছেলে-মেয়েকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু মিঠুকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছেনা। জয়নব বেগম,‘মিঠু, তোমাকে না বারবার বলেছি বাড়ির বাইরে যাবেনা। তবুও তুমি...।’

মিঠু বলর, ‘কেন আম্মু? যাবোনা কেন? 

জয়নব বেগম উত্তরে বলল,‘কেন আবার! তুমি শোন নাই যে আমাদের বাড়ির দশ বাড়ি পরে একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।’

মিঠু মাথা নিচু করে বলল,‘শুনেছি আম্মু। তুমি দশ বাড়ি পরের বাড়ির খোঁজখবর ঠিকই রেখেছ। কিন্তু আমাদেও বাড়ির সাথেই নিমাইদেও বাড়ি তুমি একবারও খোঁজখবর নিলে না। নিমাই বলেছে ওরা নাকি না খেয়ে আছে।’


মিঠুর চোখেঅশ্রুজল। হাতের মুঠো থেকে লুকানো চকলেটগুলো পড়ে গেল। জয়নব বেগমের মুখটি চুপসে গেলো নিমেষেই। মুখউজ্জ্বল বর্ণের চাহনিটি নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গেলো।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট