ছায়ারোদ্দুর
রমজান আলী রনি
মনের কথাগুলো হারিয়ে যায় । ছায়া এলো, রোদ্দুর এলো- সে এলোনা । গতিপথ পরিবর্তন করে, ছায়া মরুর বুকে বরফকে গলিয়ে কালো করে দেয় । সৃষ্টি হয় ভয়ানক কৃষ্ণগহব্বর। মঞ্চ সাজিয়ে নাটক করার মত, পাথরে ঢেকে যায় সে। অভিনয় করি, অভিনয় দেখি সে অভিনয় ক্ষণিক, বিশ্ব অভিনয়ে পরিনত হই আমি তিলে তিলে।
-রোদ্দুর তুমি কালকে পাঠশালাতে যাওনি? মা তোমাকে আচ্ছা করে বকুনি দিবে ?
- ছায়া, আমি আলোকে ভয় পাই। যদি অতিরিক্ত বিদ্যা তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ভয় হয় তখন, যখন- কান্নার মিশ্রণ আলোতে পরিণত হওয়ার আগেই, গোঁফ খেজুরে রূপ নেয়। বায়ুমন্ডলে ক্যালিগ্রাফি সমাজ্ঞীর আকারে প্রকাশ করার মত কড়ি নেই আমার, তাই অল্পবিদ্যার বড়াই জাগে।
-ওমা মরে গেলাম, চুল এভাবে টানে কেউ !
-বেঞ্চ পরিস্কার কর জলদি?
গুণবতী, মায়াবতী, অলংকৃত, ঝংকারগুলো কবরি করে, আলোক চিত্র- পঞ্চকাশের কাশবনে সমাহিত হয়।
-রোদ্দুর রাগ করেছ ?
থনা, একটুও না !
-মিথ্যা বলার বিদ্যা কোথা থেকে পাও, পন্ডিত মশাইয়ের কাছ থেকে বুঝি ? আকাশ রাগ করলে মেঘ হয়, মেঘ রাগ করলে বৃষ্টি হয়, তুই রাগ করলে বানান ভুল করিস ?
-তুই একটু বেশি কথা বলিস ?
-ছোটবেলায় কম কথা বলতাম বলে- মা আমাকে বোবা ভেবে স্পীক থেরাপি দিয়েছিলো । তোর কথা শুনলে বোধ হয় ঐটা দরকার হতোনা ।
-আমি রেগে গেলে বৃষ্টি দেখি, তুই রেগে গেলে কথা বলিসনা ।
ভয়ের মত সঞ্চালনা আমার ছিলোনা সেদিন । তার রেগে যাওয়ার কারণ মাঝে মাঝে আমাকে একা করে দিতো, আমি ফ্যালফ্যালিয়ে তার কেশরাশি বিন্যাস করতাম ।
-আমি কিন্তু সত্যিই রেগে যাচ্ছি ?
-এইবার তোরে আমি রাগাতে
পেরেছি, এজন্য নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে । কবি বলেছেন, মেয়েদের রাগানো সবচেয়ে কঠিন কাজ ।
-কচু জানিস তুই ?
-কচুপাতায় পানি স্থায়ী থাকেনা । এজন্য আমার জানার কথা নয়- তুই বললি, তাই এখন থেকে কেমিস্ট্রি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, কটুবিদ্যা রপ্ত করার চেষ্টা করবো।
-বাপরে বাপ, এত কথা কোথায় পাস তুই ?
-মেয়েদের গর্ভ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য- সেখান থেকে জন্ম হয় কতশত বীরপুরুষের, আর আমি দুইটা কথা বলতে পারবোনা..?
-কে বলেছে পারবেনা ? তুমি নাচতে, গাইতে, আবৃতি করতে, সব করতে পারবে।
-তাহলে এখন একটা দেই?
-কি ?
-মার?
-দাঁড়া তবে ?
পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন সত্য হলো- নিজেকে লুকিয়ে রেখে, পুড়িয়ে ছাই করা । যার শেষ পরিণতি কান্না নতুবা মৃত্যু । তার রূপের ছন্দপতন হয়েছিলো এক গভীর আমাবস্যা রাতে। যেথায় -আমি আলোকিত হয়েছিলাম ।
-রোদ্দুর, আমাকে দেখা হলো, আমাবস্যা রাতে চাঁদ খোঁজার মত !
-ছায়া, মিথ্যা বিদ্যার জন্য মার খেতে না তুই ?
-রাত্রি হলে সকাল হবে, তখন তুই হারিয়ে যাবি ।
-চিরমুক্তিকা হয়ে রবে তোর আলোকচিত্র । নদীতে ভাসমান দুলতে থাকা চাঁদনী নোঙর ।
মনের কথাগুলো হারিয়ে যায়... অপেক্ষা বাড়ে
ছায়া রোদ্দুরের...