দু’টি কবিতা
রওশন রুবী
১
চুপিচুপি জেগে ওঠে ফাগুন
দুপুর গড়িয়ে গেলে চুপিচুপি জেগে ওঠে ফাগুন
দাঁতে লাগে স্বাদ তার মিহিদানা মিছরি যেমন
মুনি কী সবটা বুঝে শেয়ালের মায়া, সারমেয় চোখ
আধাসিকি অন্ধকার কিনে ফিরে কেন পড়শির মন
ফাগুনের ডালে ডালে ঘনআগুন ভেলভেট কাঁপন
খুশবুর ব্যাকুলতায় হেঁটে সারা যুগের খোয়াজ খিজির
তৃষ্ণায় লালন সাঁই, সাধন দরিয়ায় বাঁকে আদিম শরীর
দূর থেকে আহত শোনায় জিহ্বা ও হাড়ের জিকির।
২
বারুদ
ন্যায়ের বারুদ আমার হাতে অন্য বারুদ তোদের থাক্
এই বারুদে হবেই দেখিস্ সব পৃথিবী পুড়ে খাক।
এলিজি
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
[উৎসর্গ : ইজাজ আহমেদ মিলন]
একদিন আপনার বাড়ি থেকে সব কালো জামা
উধাও করে দেব।
একশো আটটি কমলালেবুর আত্মজীবনী
খুব ঘন করে টাঙিয়ে দেব দেয়ালে আপনার।
ফেরার পথে যতগুলো ফলজ গাছ,
যতগুলো অচেনা মুখ চোখে পড়ে আপনার;
একদিন তাদের নিজস্ব গোঙানি
তোলে দেব আপনার বুকপকেটে।
একদিন তামাকের মতো গাঢ় যে সন্ধ্যেটা
আমাদের আঙুল ধরে হাঁটতে চেয়েছিল,
একদিন ঝলসানো স্মৃতিদের ধাওয়া করতে গিয়ে
আমরা যে নদীটাকে আঁকতে চেয়েছিলাম,
সেই সন্ধ্যে সেই নদী বেপাত্তা এখন।
নিভৃত প্রমোদে একদিন,
আমরাও উড়াতে চেয়েছিলাম পার্টির পতাকা।
একদিন আপনার দৃষ্টির সীমা থেকে সরিয়ে নেব
ভাঙাচুরা মেঘেদের।
চিবুকে, দীর্ঘশ্বাসের ট্যাটু এঁকে
আপনাকে শোনাবো ফুসলানো পূর্ণিমার গান।
পুনরুদ্ধার প্রকল্পে অবিকল আপনার মতো দেখতে
যে মুখোশ, পাঠ করেছিল আপনারই চোখ;
একদিন সেই মুখোশকেও বিক্রি করে দেব
আশ্চর্য কোনও মাছরাঙার কাছে।
একদিন যেসব পথ থইথই করতো আমাদের মুঠোয়
এবং বুকেপিঠে লেপ্টে থাকতো সারাটাক্ষণ,
একদিন যে একার সরোদ বাজাতে বাজাতে
আমরা হতে চেয়েছিলাম দারুণ সন্ন্যাস,
সেই পথ সেই সন্ন্যাস এখন আলোকবর্ষ দূরে।
খুব বিকেলে একদিন,
পুনরায় চুনকাম করবো নিজেদের সমাধিবিথান।
রক্তজবা
শেখ ফয়জুর রহমান
আমার বুকপকেটে যে রক্তজবা ছিল
তা শুকিয়ে গেছে রোদের প্রখরতায় ,
মিশে গেছে আমার একমুখী চাওয়া ।
যে বসন্তে কোকিলার সুর ছিল না
সে বসন্তে ফুলগুলোও ছিল নির্জীব
আর পোকায় খাওয়া।
তার আগমনের অপেক্ষায় ছিল
ব্্রহ্মপুত্রের নদ আর একটা শালিক পাখি ।
সে আসলো না বলে একদিন বিরহ বেদনায়
খসে গেল একটা তারা
মরে গেল শুকনো বালি
তাই আমি এখনও পচে যেতে পারিনি !
টান
রফিকুল নাজিম
আমাদের দেখা হয়নি কখনো
তুমি কখনো চোখ রাখোনি আমার চোখে
অথবা আমিও রাখিনি চোখ তোমার চোখে...
তবুও মনে হয় তুমি চেয়ে আছো আমার দিকে এবং আমিও।
অথচ আমাদের সাক্ষাৎ হয়নি কখনো;
প্রিয় নদীর তীরে আমাদের পা ছড়িয়ে বসা হয়নি
বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে পার্কে বেঞ্চে বসে গল্প করিনি,
তোমার হাত ছুঁয়ে জোছনাও দেখিনি কভু,
তবুও কেন এতো টান? বড্ড ভয়ংকর রকমের টান...
আমি চাক্ষুষ দেখেছি- এমন টানে ঘর ভাঙতে
যমুনার ঘোলা জলের ঘূর্ণিতে চক্কর খায় আলগা মাটি
এইরকম দুর্র্ধষ টানে গেরস্থালিও মরে যায়!
চাঁদের মিহি আলো, সূর্যে প্রভাব-প্রতিপত্তি,
পাহাড়ের রাজকীয় দম্ভ, নদীর তর্জনগর্জন-
সবকিছু আমার কাছে ঠুনকো মনে হয়; ভঙ্গুর মনে হয়!
কেবল তুমি আমাতে থেকে যাও নীরবে
চোরা ¯্রােতের মত টেনে নাও আরো কাছে
অথচ আমাদের দেখা হয়নি কখনো; কোথাও!
তবুও কেন এতো টান! কেন টানো?
বিলকিস
সাদিক আল আমিন
আমরা দেখেছি স্বপ্ন সুমধুর একাকী কিংবা একত্রে
তুমি-আমি ভিন্ন দুই দরিয়ার বাসিন্দা হয়েছি এক
যখন তুমি শান্ত নীরব মেয়ে জেগে থাকো গভীর রাত্রে
নিজেকেই বলেছি নিজের বুকের ক্ষতটুকু মেপে দেখ
তখন কিজানি বিলকিস হয় বিলকুল অনুভূতি যেন
পাহাড় ভেঙে পড়ছে বুকে আর চোখ-ভর্তি নীল সমুদ্র
তোমাকে দেখলেই তোমার প্রতি এতো আড়ষ্টতা কেন
কান্ত শীতল বর্ষায় আমার হঠাৎ মেঘ সরে উঠে রৌদ্র
জুলেখা চাচি একদিন ঠিকি ধরে ফেলেছিল সব ঘটনা
আর বলেছিল আমাকে কাউনের বাছতে বাছতে চাল
‘যা শুনছি তার সব-ই কি সত্য না কি রটনা?
আমি বলি, ‘যাও চাচি। কী সব বলো ভুল-ভাল!’
আমি মনে মনে হেসে আবার ইবাদতে যাই
মোনাজাতে আজ চাইবো তোমাকে, তোমার চোখে বেহেশতের ঠাঁই
মনের আলাপন
রাকিবুল হাসান রাকিব
তুমি নেত্রমেলে অবাক দৃষ্টিতে মুগ্ধ করে।
আমাকে প্রেম জাগিয়ে দিও না এ-ই ভুবনে।
অকাতরে মরে যাব; হঠাৎ তুমি হারালে!
কোমল সুরে কথা বল নাকো কাছে এসে;
আমার হৃদয়ে কথাগুলো জমা রয়ে যাবে।
তুমি চলে গেলেও যাবে; আপনার সুখে-
স্মৃতিগুলো মনের দেয়ালে দেখা দিবে!
আমাকে শুধু চোখের নিচে কালোদাগ জন্মাবে।
তুমি হয়তো তাতেই সুখে রবে!
তুমি এমন মায়া কেন বাড়িয়ে দিলে?
কাছে এসে ভুলে যাবে?
দূরে থেকে দূরে যাবে?
ভালোবাসা শিখিয়ে দিলে;
ভুলাতে না শিখিয়ে চলে গেলে?